ছোট অপারেশনের পর আর জ্ঞান ফেরেনি শিশুর : ডাক্তারের ‘ভুলে’ মৃত্যুর অভিযোগ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছোটটো একটি অপারেশন। সেই অপারেশনের জন্যে অজ্ঞান করার পর আর জ্ঞান ফেরেনি শিশুটির। হাসপাতাল বেডে সন্তানের পাশে ঘুমিয়েছিলেন মা। ৫ ঘন্টা পর দেখেন, শিশুটি আর নেই। স্বজনদের অভিযোগ, ডাক্তারের ভুলে তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ডাক্তাররা তা মানতে নারাজ। অবশেষে মৃত্যুর কারণ জানতে লাশের ময়না তদন্ত হয়েছে। ঘটনাটি যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের। মৃত মাহফুজুর রহমান (৮) ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্ঠভাঙ্গা গ্রামের ইয়ার আলী বক্সের ছেলে। তার স্বজন সাকে ইউপি চেয়ারম্যান কবিবুর রহমান ও বিজিবি সদস্য মাহবুবুর রহমান জানান, ১৫ এপ্রিল দুপুরে মাহফুজুর রহমানের পায়ে আঘাতজনিত কারণে রক্ত জমাট বাঁধাস্থানে অপারেশন করা হয়েছিল। অপারেশন করার পর বেলা ১টার দিকে মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডের বেডে নেয়া হয়। এরপর আর জ্ঞান ফিরে আসেনি। মা মরিয়ম বেডে ছেলের পাশে ঘুমিয়ে পড়েন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে জেগে দেখতে পান মাহফুজুর রহমানের শরীর ঠান্ডা ও নিস্তেজ। বুঝতে পারেন ছেলে আর নেই। তখন মরিয়ম বেগম চিৎকার করে ওঠেন। স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে এসে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ করেন। পুলিশ ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। অপারেশনকারী অর্থো সার্জারি বিভাগের ডা. আব্দুর রশিদ সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে মাহফুজুর রহমানের মৃত্যু ঘোষণা করেন। এরপর ময়না তদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্যে কর্তৃপক্ষ লাশ মর্গে পাঠান। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বজনরা ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ নেয়ার চেষ্টা চালান। প্রাক্তন চেয়ারম্যান তবিবুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় তাদের ডেকে নিয়ে ঘটনাটি শুনেছেন এবং লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন। তবে তারা লিখিত কোন অভিযোগ করবেন না। এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, চিকিৎসা সংকট কিংবা চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে একথা ঠিক না। শিশুর অপারেশন হচ্ছে একথা শুনে তিনি অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে দেখেছিলেন। ওয়ার্ডে দেয়া হলে ডা. আব্দুর রশিদ তাকে চিকিৎসা দিয়েছেন। অপারেশন ঠিক ছিল। অন্য কোন কারণে তার মৃত্যু হতে পারে। যেহেতু দুর্ঘটনায় আহত রোগী। তাই তার বুকে কিংবা মাথার আঘাত থাকতে পারে। অনেক সময় ক্ষত স্থানে রক্ত ফুসফুসে উঠে যায়। এ কারণেও রোগীর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে যে কোন একটি কারণে শিশুটির মৃত্যু হতে পারে। দিলীপ কুমার রায় বলেন, তারপরও কোন কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে তা ময়না তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি লাশ মর্গে পাঠিয়েছেন। রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
এদিকে, ডা. আব্দুর রশিদ এনেসথেসিস্ট ডা. মেহজাবীন ও এনেসথেসিস্ট বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. এবিএম আহসান হাবিবের সাথে পৃথকভাবে আলাপকালে তারা দাবি করেন, রোগীর অপারেশন, এনেসথেসিয়া সব ঠিক ছিল। শিশুটির শরীরে অন্য কোন কারণ ছিল। যে কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল বেলা ২টার দিকে মাহফুজুর রহমান বাড়িতে খেলা করার সময় পিতার ভ্যানের সাথে লেগে আঘাত পান। এরপর তার পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে ফুলে যায়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ এপ্রিল রাত ২টা ২০ মিনিটে তাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।