করেনায় যশোরে শ্রমিক সঙ্কট : ধান কাটা নিয়ে শঙ্কিত কৃষকের জন্য কৃষি বিভাগের আশ্বাস

0

আকরামুজ্জামান ॥ করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বোরো আবাদ ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কিত যশোরের কৃষক। শ্রমিক সঙ্কটের কারণে সময়মত তারা ক্ষেতের ফসল কাটতে পারবেন কি-না তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, বৈশি^ক এ পরিস্থিতিতে জেলার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কৃষি বিভাগের উদ্যোগে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলা সাতক্ষীরা থেকে শ্রমিক সরবরাহে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। চলতি মৌসুমে যশোরে এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক। সময়মতো এই ফসল গোলায় তুলতে না পারলে সঙ্কট আরও বাড়ার আশঙ্কা কৃষকদের। এ অবস্থায় মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা তাদের ক্ষেতের ফসল নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
কৃষি বিভাগের মতে, চলতি বোরো মৌসুমে যশোরে ফলন এবার রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। শ্রমে-ঘামে ফলানো ফসলের বাম্পার ফলন দেখে হাসি ফুটেছিল কৃষকের মুখেও। কিন্তু মাঠের সেই খুশি ম্লান হয়ে যাচ্ছে করোনা পরিস্থিতির কারণে। জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ সাড়ে ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলনেরও সম্ভাবনা রয়েছে। ১৫দিন পর থেকেই কাটা শুরু হবে এসব ক্ষেতের ধান। কিন্তু করোনার ভাইরাসের কারণে সরকারি নির্দেশে মানুষ ঘরবন্দি থাকায় এ ধান কাটতে শ্রমিক সংকটের আশংকা দেখা দিয়েছে। যশোর সদর উপজেলার ইছালী গ্রামের কৃষক হাদিউজ্জামান মিলন বলেন, ৫ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। ইতোমধ্যে ক্ষেতের ধান পেকে উঠতে শুরু করেছে। আর দেড় সপ্তাহ পরেই ধানকাটা শুরু হবে। কিন্তু শ্রমিক পাবো কি-না সন্দেহ হচ্ছে। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে জেলার বাইরের এলাকা থেকে আগত শ্রমিক দিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলতাম। কিন্তু এবার করোনার কারণে তারা আসতে পারবে কি-না শঙ্কা রয়েছে।
একই কথা বলেন, খাজুরার প্রেমচারা গ্রামের শামীম আকতার তিনি বলেন, এ বছর যদি সময়মত ধান ঘরে তুলতে না পারি তাহলে আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না। বৈশি^ক এ পরিস্থিতিতে বোরো আবাদই আমাদের একমাত্র ভরসা। এই ফসল যদি ঘরে তুলতে ব্যর্থ হই তাহলে না খেয়ে মারা যেতে হবে। এ বিষয়ে কথা হয় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক ড. মো. আকতারুজ্জামানের সাথে। তিনি বৈশি^ক এ পরিস্থিতিতে আমরা খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। বিশেষ করে বোরো আবাদ যাতে কৃষক নির্বিঘেœ ঘরে তুলতে পারেন সেজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, করোনার কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দিতে পারে তাই এ বছর কৃষকের বোরো আবাদ হারভেস্টার মেশিন দিয়ে কেটে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মেশিনটি পরিচালনার তেল খরচ দিয়েই ধান কাটার সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন কৃষক। তিনি বলেন, এ বছর ২৪টি হারভেস্টার মেশিন সরকারের পক্ষ থেকে যশোর জেলার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও জেলায় আরও মেশিন রয়েছে। মোট ৬২টি হারভেস্টার মেশিন দিয়ে জেলার কৃষকদের সব ধানকেটে দেয়া হবে। কৃষিবিদ ড. আকতারুজ্জামান আরও বলেন, আমি যশোরের জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি। কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে করোনা সংক্রান্ত পরীা সম্পন্ন করে বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক এনে কৃষকদের কাজে সহযোগিতা করা হবে। আমাদের একটাই চ্যালেঞ্জ কৃষক যাতে সহজেই তাদের ক্ষেতের ফসল ঘরে তুলতে পারে।