রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা উদ্ধার কোস্টগার্ডের, নিহত ৩২

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মালয়েশিয়ায় পৌঁছতে ব্যর্থ হওয়ার পর কয়েক সপ্তাহ ধরে সাগরে ভাসছিল রোহিঙ্গা বোঝাই একটি নৌকা। অবশেষে বৃহস্পতিবার নৌকাটি উদ্ধার করে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। উদ্ধার করা হয় ৩৯৬ জনকে। তবে ততদিনে মারা যান ৩২ জন। এ খবর দিয়েছে রয়টার্স। খবরে বলা হয়, একটি মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, রোহিঙ্গাদের বহনকারী এমন আরও অনেক নৌকা এখন সাগরে ভেসে আছে। করোনাভাইরাস লকডাউনের কারণে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ সজাগ থাকায় এসব নৌকা সেসব দেশের উপকূলে ভিড়তে পারেনি। বাংলাদেশ কোস্টগার্ড জানিয়েছে, বুধবার গভীর রাতে ওই নৌকা তীরে নিয়ে আসা হয়। এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “তারা দুই মাস ধরে সাগরে ছিল। সবাই ক্ষুদার্ত।” তিনি আরও জানান, নৌকার আরোহী ৩৯৬ জনকে মিয়ানমারে পাঠানো হবে। প্রথমে ৩৮২ জনকে উদ্ধারের কথা বলা হলেও পরবর্তীতে কোস্টগার্ড থেকে ৩৯৬ জনকে উদ্ধারের কথা উল্লেখ করা হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, নৌকার আরোহী বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এদের অনেকেই এতটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন যে দাঁড়াতে পারছেন না। অন্যের সাহায্য নিয়ে তাদের তীরে নামানো হচ্ছিল।
সেখানের এক শরণার্থী জানান যে, মোট ৩ বার তারা মালয়েশিয়ায় ঢোকার চেষ্টা করেন। তবে প্রতিবারই কর্তৃপক্ষ ফিরিয়ে দেয়। পরে নৌকার মাঝিদের সঙ্গে যাত্রীদের মারামারি বাধে। মূলত মিয়ানমারের অধিবাসী হলেও বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটি মুসলিম রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। দেশটির অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের চলাচলের ওপর মারাত্মক বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায়ও তাদের প্রবেশাধিকার নেই বললেই চলে। রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমার। দেশটির দাবি, রোহিঙ্গারা তাদের আদিবাসী জাতি নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়া থেকে যাওয়া অভিবাসী। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করেন। এদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে সামরিক অভিযানের মুখে মিয়ানমার ছেড়ে সেখানে আশ্রয় নেন। অনেক বছর ধরেই পাচারকারীদের সহায়তায় রোহিঙ্গারা সাগর পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, বিশেষত মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানোর চেষ্টা করে আসছে। সাধারণত শুষ্ক মৌসুম, অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মার্চে যখন সাগর শান্ত থাকে, তখন এই তৎপরতা বেশি দেখা যায়।
কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা আশঙ্কা করছে, করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশে কড়াকড়ি আরোপের কারণে ২০১৫ সালের ভয়াবহ মানবিক সংকটের পুনরাবৃত্তি হতে পারে। ওই সময় থাইল্যান্ডে মানবপাচারকারীদের ওপর অভিযান শুরু হলে অনেকে শরণার্থী বোঝাই নৌকা রেখে পালিয়ে যায়। ফলে শরণার্থীরা সাগরে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ে যায়। আরাকান প্রজেক্ট-এর পরিচালক ক্রিস লেওয়া বলেন, তার ধারণা এমন আরও নৌকা সাগরে ভেসে আছে। তিনি এক বার্তায় বলেন, “কভিড-১৯ রোগকে দিশেহারা শরণার্থীদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার ক্ষেত্রে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। আন্দামান সাগরে ২০১৫ সালের মতো আরেকটি সংকটের পুনরাবৃত্তি গ্রহণযোগ্য হবে না।” মালয়েশিয়ার কেদাহ অঙ্গরাজ্যের এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বেশ কয়েকটি নৌকা মালয়েশিয়ার উপকূলে আসার চেষ্টা করছে। তাই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় থাইল্যান্ডের এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, দেশটির সাতুন অঙ্গরাজ্যের উপকূলে সোমবার রাতে ৫টি রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা দেখা যায়। তবে এই দাবি আলাদাভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। মিয়ানমারের রাখাইন অঙ্গরাজ্যের সিতওয়ে থেকে কাওয়া হ্লা নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, নৌ ও স্থলপথে মানুষকে পাচার করা হচ্ছে। এখনও সিতওয়ের শিবিরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা ২০১২ সালের সহিংসতার পর বন্দীদশায় আছেন। টেলিফোনে হ্লা বলেন, “এই ৮ বছরে রোহিঙ্গাদের জীবনমানের কোনো উন্নতি হয়নি, কেবল অবনতিই হয়েছে। মানুষ আর সহ্য করতে পারছে না। আমরা যেহেতু বন্দী অবস্থায় আছি, তাই মানুষ বের হতে চাইবেই।” তিনি আরও যোগ করেন, “এখানে যদি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, আমরা স্রেফ মরে পড়ে থাকবো।”