যশোরে বন্ধ রয়েছে রিকশা ও ইজিবাইক চলাচল চরম অনিশ্চয়তায় কর্মহীন কয়েক হাজার পরিবার

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মনিরামপুরের বেগারীতলা থেকে প্রতিদিন যশোরে এসে রিকশা চালাতেন সামাদ মিয়া। শহরের আরএন রোড থেকে দড়াটানা, দড়াটানা থেকে রেলগেট পর্যন্ত সকাল-সন্ধ্যা রিকশা চালিয়ে আয় করতেন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। সারাদিনের অর্জিত টাকা থেকে রিকশা মালিককে ভাড়ার টাকা পরিশোধ শেষে বাকি টাকা দিয়েই স্ত্রী-মা ও তিন সন্তানের সংসার চালাতেন তিনি। করোনা সংক্রমনের সচেতনতার কারণে গত তিনদিন ধরে যশোর শহরে রিকশা-ইজিবাইকসহ সকল অভ্যন্তরীণ সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন তিনি। কর্মহীন হয়ে পড়ায় তার গোটা পরিবারে দেখা দিয়েছে এক অনিশ্চয়তা।
শুধু রিকশা চালক সামাদ মিয়া নয়, তার মতো কয়েক হাজার রিকশা ও ইজিবাইক চালক এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। শোচণীয় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে খেটে খাওয়া এসব মানুষগুলো। সংক্রমন প্রতিরোধে রিকশা ও ইজিবাইক থমকে গেছে তাদের জীবনযাত্রা। জেলাজুড়ে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে অস্বচ্ছল দরিদ্রদের মাঝে নামমাত্র খাদ্য সহায়তা দেয়া হলেও এসব অসহায় মানুষের অনেকেরই ভাগ্যে কাঙ্খিত ত্রান জুটছেনা। যেকারণে কর্মহীণ হয়ে পড়া এ মানুষগুলোর পরিবারে চরম মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। যশোর পৌরসভার সূত্রে জানাগেছে, যশোর শহরে লাইসেন্স প্রাপ্ত মোট ২৯শ ইজিবাইক ও ৫০০ রিকশা রয়েছে। এর বাইরেও আরও রয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক ইজিবাইক ও রিকশা। এসব ইজিবাইক ও রিকশাচালকরা প্রতিদিন শহরে ভাড়া টেনে তাদের জীবন-নির্বাহ করে আসছিলেন। কিন্তু গত বুধবার থেকে করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে সচেতনতার অংশ হিসেবে রিকশা-ইজিবাইকসহ সকল অভ্যন্তরীণ যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শফিউল আরিফ বলেন, করোনা সংক্রমন থেকে যশোরবাসীকে রক্ষা করার জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় রিকশা, ইজিবাইক, অটো রিকশা, ভ্যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে হঠাৎ শহরে রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইবক চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কয়েক হাজার পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়েছে। খেটে খাওয়া এসব মানুষের কোনো কাজ না থাকায় আয় রোজগারও বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় এসকল অসহায় মানুষের পূনর্বাসনে স্থাণীয় প্রশাসনের ভবিষ্যত কোনো কর্মপরিকল্পনা আছে কীনা সে বিষয়টি প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শফিউল আরিফ বলেন, করোনা পরিস্থিতি আমরা জেলাব্যাপী যে ত্রান বিতরণের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি সেসব তালিকায় এসব রিকশা ও ইজিবাইক চালকদেরও দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, যশোর শহরের যেসব বস্তি রয়েছে সেসব এলাকার বাসিন্দাদের তালিকা তৈরী করে তাদের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌছে দেয়া হচ্ছে। এর বাইরেও কেউ যদি ত্রান না পান তাকে যশোর পৌরসভায় গিয়ে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার বলেন, আমাদের কাছে যশোর শহরের রিকশা ও ইজিবাইক চালকদের একটি তালিকা আছে। এসব তালিকা অনুযািয় তাদেরকে ত্রান দেয়া হচ্ছে। এর বাইরেও কেউ আমাদের কাছে আসলে তাদেরকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু রিকশা ও ইজিবাইক চালক নয়। এই মূহুর্তে অনেকেই বেকার অসহায় পড়েছেন। এসব মানুষকে আমরা পর্যায়ক্রমে সাহায্য দিয়ে যাচ্ছি। মেয়র বলেন, যশোরকে নিরাপদ রাখতে আমাদের নানা পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। বিশেষ করে জনসমাগম যাতে না ঘটে সে জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। শহরে যাতে মানুষ সচরাচর আসা-যাওয়া করতে না সেজন্য রিকশা ও ইজিবাইক বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রয়োজনে আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে বলে তিনি জানান। এদিকে নিষেধাজ্ঞা সত্বেও শহরের কিছু কিছু এলাকায় রিকশা চলতে দেখা গেছে। জীবিকার তাগিদে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্রবেশ না করে তারা সতর্ককতার সাথে যাত্রী আনা-নেওয়া করছেন। সকালে শহরের খাজুরা বাসস্ট্যান্ডে কথা দেখা এক রিকশা চালকের সাথে। তিনি বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকায় ত্রান দিচ্ছে শুনছি কিন্তু এখনও আমি পায়নি। যেকারণে সংসার চালানোর জন্য বাধ্য হয়েছি রিকশা নিয়ে বের হতে। তিনি বলেন, আমার মতো অনেকেই রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন তবে পুলিশের ভয়ে শহরে প্রবেশ করতে পারছেন না।