যশোরে সর্বত্র বাড়ছে মানুষের ভিড় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করার জন্য যশোরে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও কিছুতেই ঘরমুখো হচ্ছে না মানুষ। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিনিয়ত মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে যেখানে সেখানে জড়ো হচ্ছেন। শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে সর্বত্র মানুষের উপস্থিতি বেড়েই চলছে। এ পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। সচেতন মহলের দাবি দেশব্যাপী যখন করোনা সংক্রমণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে তখন এসব মানুষকে নিবৃত করতে এখনি লাগাম টেনে ধরা জরুরি হয়ে পড়েছে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সচেতনতামূলক নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও উপজেলা পর্যায়ে এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। সামাজিক ও লোকমুখে খবর জেনে অনেক সচেতন মানুষ ঘরে পরিবারের সাথে নিরাপদ থাকলেও অধিকাংশ মানুষ এ নিয়ম মানছেন না। তারা গতানুগতিকভাবেই চলাফেরা করছেন। অন্যদিকে এসব মানুষকে ঘরমুখো করতে প্রশাসনের তেমন কঠোর পদক্ষেপও দেখা যাচ্ছে না।
উপজেলা পর্যায়ের মতোই প্রায় একই অবস্থা বিরাজ করছে জেলা শহরে। মানুষের মাঝে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে যখন সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন তখন যশোর শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ বাজারগুলোতে মানুষের উপস্থিতি বেড়েই চলছে। বাজার-ঘাট ছাড়াও ব্যাংক, বীমা, পোস্ট অফিসেও মানুষের ঠাঁসা উপস্থিতি দেখা মিলছে। মানুষের জটলা ছুটাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোথাও কোথাও অভিযান চালানো হলেও পরক্ষণে সেখানে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে শহরের বড়বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ব্যাপক উপস্থিতি। ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে সেখানে পা ফেলা দায় হয়ে পড়ে। করোনাভাইরাসের মতো মহামারির কথা ভুলে গেছেন যেনো এ বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা। তাদের কারো কারো মুখে মাস্ক থাকলেও অনেকেই খালি মুখে বেচাকেনা করছেন।
আশিক মাহমুদ নামে এক ক্রেতা জানান, গত চারদিন ধরে তিনি বাজারে আসেন না। আজ সংসারের প্রয়োজনে বাজার করতে এসেছেন। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তিনি বাধ্য হয়েছেন বাজারে আসতে। তিনি বলেন, বাজারে মানুষের এতো বেশি উপস্থিতি হবে তা আগে বুঝতে পারেননি।
সাহেব আলী নামে আরেক ক্রেতা বলেন, বাজারে এসে ভয় লাগছে। জানি না কপালে কী আছে। তিনি বলেন, শুধু এই বাজারে নয় শহরতলীর শেখহাটি জামরুলতলা বাজারেও মানুষের এমন ভিড়। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনেও মানুষ ঘর থেকে যে যার ইচ্ছামতো বের হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রশাসনের কঠোর হওয়া জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে।
এদিকে বাজার-ঘাটের পাশাপাশি শহরের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকসহ পোস্ট অফিসের সামনে গ্রাহকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো করোনা সংক্রমণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন যারা এমন বয়স্ক মানুষদের শহরের প্রধান পোস্ট অফিসহ বিভিন্ন ব্যাংকের সামনে জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
বেলা ১১ টায় শহরের প্রধান ডাকঘরের সামনে দেখা যায়, ৫০ জন ষাটোর্ধ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই পেনশন ভাতা নিতে সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। আলী কদর নামে এক বৃদ্ধ বলেন, পেনশন ভাতা নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু একজনের বেশি ঘরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। কখন সময় হবে জানি না। তিনি বলেন, শুনছি নাকি অফিস আদালত বন্ধ হয়ে যাবে সে কারণে আগেভাগেই এসেছি।
একই অবস্থা শহরের ব্যাংকগুলোর সামনের চিত্র। সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখা, মাইকপট্টি অগ্রণী ব্যাংক, আরএন রোডে ইসলামী ব্যাংকের সামনে ঠিক আগের দিনের মতো দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা যায়।
এদিকে শহর ও লোকালয়ে মানুষের এমন উপস্থিতির মাঝে দেশে করোনা সংক্রমণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে যশোর জেলা প্রশাসনও নড়েচড়ে বসেছে। সোমবার দুপুরের পর জেলা শহরের দড়াটানাসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। কোথাও মানুষের জটলা দেখলেই পুলিশ সেখানে গিয়ে হস্তক্ষেপ করে। যেকারণে বিকেলের দিকে শহরে মানুষের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিলো।
এ বিষয়ে সোমবার বিকেলে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শফিউল আরিফ বলেন, মানুষের মাঝে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে কঠোর অবস্থানে যাওয়া হবে। তিনি বলেন, আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি সভা রয়েছে। ওই সভায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ থেকে মানুষকে সচেতন করতে আমাদের পক্ষ থেকে মাইকিং, পোস্টার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সেনা-পুলিশ কাজ করছেন। তারপরও কিছু কিছু মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন। এসব মানুষকে ঘরমুখি করতে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে যাবে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, সবাইকে যদি বাঁচতে হয় তাহলে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না।