চিকিৎসকদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে করোনা, বন্ধ হয়ে যাওয়া ক্লিনিক আজ খোলা হচ্ছে

0

বিএম আসাদ ॥ করোনাভাইরাস তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে যশোরের চিকিৎসকদের। তারা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন না। এ অবস্থায় বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো আজ থেকে খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সারা বিশ্বে নোভেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাপক সতর্কতা শুরু হয় যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মচারী ও সেবিকাদের মাঝে। এর মধ্যে হাঁচি, কাঁশি উপস্বর্গ নিয়ে আসা ১১ জন রোগীকে হাসপাতালের কোয়ারেন্টিনে ভর্তি করা হয়। এরপর ভীতি শুরু হয় যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মচারীদের মাঝে। সবচেয়ে বেশি ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন চিকিৎসকরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, করোনাভাইরাস যেন তাদের পেছন থেকে তাড়া করে ফিরছে। এ অবস্থার মধ্যে চিকিৎসকগণ যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা দেয়া প্রায় বন্ধ করে দেন। চিকিৎসকদের কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় কাউন্সিলিং করার পর রোগীর চিকিৎসা দেয়া শুরু করলেও এখনো তারা স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে আসতে পারেননি। হাসপাতালের বহির্বিভাগে কোন রকম রোগীর চিকিৎসা দিলেও ওয়ার্ডে ভর্তি সংখ্যা একেবারই কমিয়ে ফেলেছে। আহত ও অন্যান্য রোগী ভর্তি হলেই তাদের রেফার্ড করা হচ্ছে ঢাকা কিংবা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসগণ নন। এমবিবিএস পাস করে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণরত ইন্টার্ন চিকিৎসকগণ রোগীদের অন্যত্র রেফার্ড করছেন। ফলে বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসার অভাবে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতলে চিকিৎসার ব্যাপক সংকট দেখা দেয়। যা এখনো চলমান রয়েছে। লেবার ও শিশু ওয়ার্ড ছাড়া প্রায় সব ওয়ার্ড প্রায় রোগী শূন্য হয়ে পড়েছে। এরপর যশোরের সকল প্রাইভেট হাসপাতাল, কিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রাইভেট চেম্বারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ রোগী দেখা বন্ধ করে দেন।
যশোর জেলায় ১শ’ ৩৯টি বেসরকারি হাসপাতাল, কিনিক ও ২শ’ ১১টি ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স রয়েছে। এর ভেতর ৪৫টি প্রাইভেট হাসপাতাল, কিনিক ও ৭০টির মতো ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স রয়েছে যশোর শহরে। এসব হাসপাতাল, কিনিক ও ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স বন্ধ হয়ে যায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না বসার কারণে। কেবলমাত্র গর্ভবতী মাদের সিজার করার জন্য খোলা রাখা হয়। এ পরিস্থিতিতে যশোরে রোগী সাধারণের চিকিৎসাসেবায় মারাত্মক সংকট দেখা দেয়। চিকিৎসা সংকটের কারণে রোগীরা জীবন রক্ষায় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েন। কিছু জুনিয়র চিকিৎসক অতি গোপনে কিছু কিছু রোগীর চিকিৎসা দিতে থাকেন বেসরকারি হাসপাতাল ও কিনিকে। এ সমস্যার মধ্যে পড়ে রোগীরা দিগি¦দিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত যশোরের সিভিল সার্জন বেসরকারি হাসপাতাল, কিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের ডেকে নিয়ে গতকাল তার দপ্তরে জরুরি সভা করেছেন। সভায় মালিকরা তাদের হাসপাতাল, কিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ থেকে এসব হাসপাতাল, কিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলা থাকবে বলে কিনিক মালিকগণ দৈনিক লোকসমাজকে জানিয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাস শনাক্তে ৯ জনকে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। ১০ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয় ২ হাজার ৪শ’ ৬৩ জন। এর ভেতর ২ হাজার ৬৫ জনকে হোম কোয়ান্টেন হতে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে বলে সিভিল সার্জন জানিয়েছেন।