করোনাভাইরাসের প্রভাবে মধ্যবিত্ত অসহায়

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনার মোকাবেলায় নিম্নবিত্তরা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতা পেলেও মধ্যবিত্তদের বড় একটি অংশই অসহায়। স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ থাকায় তাদের আয়-রোজগার নেই। ফলে একদিকে খাবার কিনতেও পারছেন না, অপরদিকে সামাজিক মর্যাদার কারণে কারও কাছে চাইতেও পারছেন না। নীরবেই কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। ৫টি মৌলিক চাহিদার ৪টি নিয়ে চিন্তিত তারা। বিশেষ করে খাবার ও বাসা ভাড়া নিয়ে তারা খুবই দুশ্চিন্তায়। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বর্তমানে মধ্যবিত্ত যে পর্যায়ে আছে, তা হয়তো সহনীয়। কিন্তু অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হলে এরাই সবচেয়ে বিপদে পড়বেন। তাদের মতে, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য আছে। তবে বণ্টন ব্যবস্থা খুবই খারাপ। আর মধ্যবিত্তদের কোনো পরিসংখ্যানও সরকারের কাছে নেই। ফলে এদের কাছে খাবার পৌঁছানো খুব কঠিন।
জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, এটি খুব স্বাভাবিক ঘটনা যে মধ্যবিত্তরা বিপদে পড়েছে। এক্ষেত্রে তাদের চিহ্নিত করার জন্য সরকারের সে ধরনের পরিসংখ্যানও নেই। তিনি বলেন, এই শ্রেণির মানুষকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে ১০ টাকায় চাল বিতরণের কথা বলা হচ্ছে। এলাকাভিত্তিক চিহ্নিত করে এটি ব্যাপকভাবে করতে। তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য আছে। কিন্তু আমাদের বণ্টন ব্যবস্থায় যথেষ্ট সমস্যা। রাতারাতি এটি কাটানো সম্ভব নয়। এজন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দরকার। তার মতে, মধ্যবিত্তদের একটি অংশের কিছু সঞ্চয় রয়েছে। ধারণা করছি এই সংকটে, তারা সঞ্চয় ভেঙে ফেলবে। এ অবস্থায় আগামী বাজেটে তাদের কর অব্যাহতি দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, যাদের দৈনিক আয় ১০ থেকে ৪০ ডলারের মধ্যে, তারাই মধ্যবিত্ত। এ হিসাবে তাদের মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে। তবে আর্থিক সক্ষমতার পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, সামাজিক মর্যাদা, মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক সুযোগ-সুবিধাকেও মানদণ্ডে আনতে হবে। ওই বিবেচনায় বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা ৪ কোটির মতো। তবে উল্লেখযোগ্য অংশই নিম্নমধ্যবিত্ত। এরা ছোট বেসরকারি চাকরি, ছোট ব্যবসা এবং দৈনন্দিন কাজের ওপর নির্ভরশীল। করোনার কারণে দেশ লকডাউন হওয়ায় বর্তমানে এদের বড় অংশের আয়-রোজগার বন্ধ। এতে খাবার ও বাসা ভাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। কিন্তু সামাজিক সম্মানের কারণে কারও কাছে টাকা-পয়সা বা খাবার চাইতে পারে না। নীরবে দিন পার করতে হচ্ছে এদেরকে।
রংমিস্ত্রির কাজ করেন ইস্কান্দার মিয়া। বাসা ফকিরাপুলের ৪নং গলিতে। প্রতিদিন আয় করতেন প্রায় ১ হাজার টাকা। মাসে বাসা ভাড়া দেন ১১ হাজার টাকা। এরপর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোই চলে যাচ্ছিল দিন। কিন্তু লকডাউনের গত ২৪ মার্চ থেকে তার কাজকর্ম বন্ধ। ফলে তার আয় নেই। জানালেন তার বাসায় বাজার নেই। সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন এ মাসের বাসা ভাড়া নিয়ে। এভাবে ঢাকা শহরেও লাখ লাখ মধ্যবিত্ত অসহায়। চোখে অন্ধকার দেখছেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) রিপোর্টে বলা হয় যে, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। বর্তমানে দেশে খাদ্য মজুদের পরিমাণ প্রায় ১৮ লাখ টন। গত বছরের চেয়ে যা দেড় লাখ টন বেশি। এ অবস্থায় সুষ্ঠু বণ্টনের মাধ্যমে খাবার পৌঁছাতে পারলে খাদ্যের সংকট হওয়ার কথা নয়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সম্পদশালীদের অনেক সুবিধা আছে। গরিব মানুষের জন্য প্রান্তিকভাবে এক ধরনের ব্যবস্থা থাকছে। কিন্তু বাংলাদেশের বিকাশমান মধ্যবিত্তরা সব সময় চাপে থাকে। তাদের মতে, রাজনীতিবিদরা ভোটের কারণে নিম্নবিত্তদের গুরুত্ব দেন। আবার নির্বাচনের টাকা সংগ্রহের জন্য সম্পদশালীদের গুরুত্ব দেন। কিন্তু মধ্যবিত্তকে মূল্যায়ন করা হয় না। ফলে তাদের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যানও নেই। আর করোনার মতো দুর্যোগে তাদেরকে বেশি বিপদে পড়তে হচ্ছে। অন্যদিকে খাবারের পাশাপাশি বাসাভাড়া নিয়ে সমস্যায় পড়ছেন মধ্যবিত্তরা। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রিপোর্টে বলা হয়, বাড়িভাড়ার ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের নিয়মের কোনো তোয়াক্কা করছে না বাড়ির মালিকরা। বাড়ির মালিকদের স্থানীয় সমিতিগুলোই ভাড়া নির্ধারণ করছে। এক্ষেত্রে অধিকাংশ বাড়ির মালিক মাসের ভাড়া আগাম নেয়। সে কারণে এপ্রিল মাসের ভাড়া নেয়ার সময় হয়েছে। কিন্তু অনেকে এ মাসের বেতন পাবেন না। ফলে তারা চোখে অন্ধকার দেখছেন বলে জানান।