বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রেতা সংকটে সবজি চাষিরা বিপাকে

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ করোনাভাইরাসের প্রভাবে যশোরের বাজারে চাল, ডাল, তেল, চিনির দাম বেড়েছে। কমেছে সবজি ও ডিমের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন বাজারে ক্রেতাদের আগমন কম। চাষিরা সবজি এনে দাম ঠিকমত পাচ্ছেন না। লোকসানের ভয়ে অনেকে ক্ষেত থেকে সবজি তুলছেন না।
করোনাভাইরাসের প্রকোপে পড়ে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। চলবে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। এর আগে গণপরিবহন, ট্রেন, লঞ্চ, স্টিমার চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। সারা দেশে কার্যত লকডাউন বিরাজ করছে। জনসাধারণের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। মানুষকে ঘরের মধ্যে থাকতে বলা হচ্ছে। অকারণে যেন কেউ ঘর থেকে বের না হন সেজন্য পুলিশ, সেনাবাহিনী সমানতালে রাস্তায় টহল দিচ্ছে। এ অবস্থায় শুধুমাত্র কাঁচাবাজার, মুদি দোকান, ওষুধ ও খাদ্যপণ্যের দোকান নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী খোলা থাকছে। যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ মুদি দোকান দুপুর ২টা ও কাঁচাবাজার সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। মানুষের চলাচল সীমিত হওয়ায় শহরের বড় বাজারে ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ মুদি ও তরকারির দোকানিকে ক্রেতাদের জন্য চাতক পাখির মত চেয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা দেয়ায় অফিস-আদালত সব বন্ধ। চাকরিজীবী মানুষ যার যার গ্রামের বাড়ি অবকাশে চলে গেছেন। শহরে এখন শুধু স্থানীয় মানুষই রয়ে গেছেন। শনিবার (৪ এপ্রিল) বড় বাজার চাল বাজারে দেখা যায়, শুধুমাত্র যারা ত্রাণ দিচ্ছেন তারাই চাল কিনছেন। সরকারি-বেসরকারি ও নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই দুর্যোগে ঘরবন্দি ও কর্মহীন মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। বস্তা বস্তা চাল শুধু তারাই কিনছেন। সাধারণ মানুষকে চাল কিনতে দেখা যাচ্ছে না। এর বড় একটা কারণ গত ২৬ মার্চের পর থেকে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে যে যার সাধ্যমত চাল কিনে ঘরে মজুদ করেছেন। এ সময়টা মানুষের হাতে টাকা-পয়সাও নেই। কেনার সামর্থ হারিয়ে ফেলছেন। বাজারে তাই চালের ক্রেতাও কম। এরই মধ্যে মোটা স্বর্ণা চাল প্রতি কেজিতে ২ টাকা মত বেড়েছে। সপ্তাহখানেক আগেও স্বর্ণা চাল খুচরা বাজারে ৩৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শনিবার বড় বাজার চাল বাজারে ইসহাক ট্রেডার্সে খুচরা চাল স্বর্ণা প্রতি কেজি ৩৮ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৪৪/৪৬ টাকা, কাজললতা ৪৪/৪৮ টাকা, মিনিকেট ৫০/৫২ টাকা ও জিরা মিনিকেট চাল ৫২/৫৪ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। যশোর চাল বাজার মালিক সমিতির সভাপতি সুশীল কুমার বিশ^াস জানান, সাধারণ মানুষ মোটেই চাল কিনছেন না, যা কেনার তারা আগেই কিনে রেখেছেন। এখন যারা ত্রাণ দিচ্ছেন তারাই চাল কিনছেন। মোট স্বর্ণা চাল বেশি বিক্রি হওয়ায় দাম সামান্য বেড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ শুধুমাত্র নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিশেষ করে চাল, ডাল, তেল ও চিনিই বেশি করে কিনছেন। এ কারণে চালের পাশাপাশি ডালের দামও বেড়ে গেছে। দেশি ভালোমানের চিকন মসুর ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, আমদানি করা মোটা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। মাত্র ৪/৫ দিন আগেও চিকন মসুর ডাল ১২০ টাকা ও মোটা মসুর ডাল ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সয়াবিন তেলের দামও এ সময়টা প্রতি কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে। শনিবার খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ৯৬ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। দেশি লাল চিনি বিক্রি হচ্ছিল ৬৫ টাকায়, প্রতি কেজিতে ১ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকা। অবশ্য আমদানি করা সাদা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা। এদিকে, সবচেয়ে করুণ অবস্থায় পড়েছেন সবজি চাষিরা। তাদের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদামত ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না বাজারে। তারা যেটুকু পণ্য বাজারে নিয়ে আসছেন তারও উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না। প্রতিনিয়ত লোকসানের মুখে পড়ে অনেকে সবজি তোলা বন্ধ করে দিয়েছেন। শহরের এইচএমএম রোডের কাঁচামালের আড়ত ‘আরিফ ভান্ডার’ এর অন্যতম স্বত্বাধিকারী মো. শাহাবুদ্দিন মাতব্বর বলেন, সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় যশোরে চাকরিজীবী মানুষ তাদের গ্রামের বাড়ি ফিরে গেছেন। এখন শুধু স্থানীয় মানুষ বাজারে আসছেন। বড় বাজারে যে পরিমাণ সবজি সরবরাহ হয় তাতে করে ক্রেতা ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। অনেক খুচরা দোকানি আড়ত থেকে সবজি কিনে বিক্রি করার ক্রেতা পাচ্ছেন না। সবজির দামও এখন অনেক কমে গেছে। এই পরিস্থিতিতে চাষিরা লোকসানের ভয়ে ক্ষেতের সবজি তোলা বন্ধ করে দিয়েছেন। শনিবার বাজারে খুচরা পর্যায়ে উচ্ছে প্রতি কেজি ২০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ২০ টাকা, কুমড়ো ২০ টাকা, টমেটো ১৫ টাকা, কাঁচকলা ২৫ টাকা, বেগুন ২০/৩০ টাকা, শসা ২৫ টাকা, পটল ৩০ টাকা, ডাটা ১৫ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, লাউ প্রতিটি ২০/২৫ টাকা, আলু প্রতি কেজি ২০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, দেশি রসুন ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তাছাড়া মুরগির ডিম সাদা প্রতি হালি ২৮ টাকা ও লাল ডিম প্রতি হালি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।