জাতিসংঘের ভয়াবহ করোনা রিপোর্ট, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ব্যাখ্যা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ জাতিসংঘের এক অভ্যন্তরীণ স্মারক নথিতে সতর্কতামূলক পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে যে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের কারণে সর্বোচ্চ ২০ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে। তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে একদমই কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না—এমনটা ধরে নিয়ে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংক্রমণ ঠেকাতে বহু পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে। ইতিমধ্যেই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে শপিং মল, দোকানপাট, রেস্তোরাঁ, শিক্ষালয় এবং চীন ব্যতিত সব ধরণের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও একযোগে কাজ করছে বাংলাদেশ। চীন ও ভারত থেকে এসেছে জরুরী মেডিকেল সামগ্রী। হংকং-ভিত্তিক প্রভাবশালী সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট পত্রিকাকে এসব বলেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন ‘কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না’ ধরে নিয়ে করা হয়েছে।
কিন্তু আপনি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছেন যে, আমরা ইতিমধ্যেই অসংখ্য পদক্ষেপ নিয়েছি।”
খবরে বলা হয়, ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশে মঙ্গলবার অবধি ৫১ জন কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। মারা গেছেন ৫ জন। কিন্তু রোগী ও মৃত্যুর হার অল্প হলেও এই শঙ্কা কমেনি যে, এই মহামারীর দরুন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে দেশের অর্থনীতি। ইতিমধ্যে বিজিএমইএ সোমবার জানিয়েছে, দেশজুড়ে বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানায় প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর গ্লোবাল ওয়ার্কার্স রাইটস-এর করা সাম্প্রতিক এক অনলাইন জরিপ অনুযায়ী, ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ায় ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে ১০ লাখেরও বেশি শ্রমিককে ছাঁটাই বা বাধ্যতামূলক অবৈতনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। খবরে বলা হয়, গত সপ্তাহে সুইডেন-ভিত্তিক অনলাইন সংবাদ মাধ্যম নেত্র নিউজ জাতিসংঘের ওই অভ্যন্তরীণ স্মারক প্রকাশ করে। এই স্মারক নথিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ‘জনসংখ্যার ঘনত্ব অত্যাধিক’ বিবেচনায় নিলে, বাংলাদেশে কভিড-১৯ থেকে ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে। ‘জাতীয় প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা’ শীর্ষক ২৬ মার্চের ওই স্মারকে আরও বলা হয়, জাতীয় পর্যায়ে কিছু স্বাস্থ্য স্থাপনায় প্রস্তুতি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সন্দেহভাজন ও নিশ্চিত কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যসেবা কর্মী ও স্বাস্থ্য স্থাপনাসমূহ সাধারণ অর্থে এখনও অপ্রস্তুত।
এতে উল্লেখ করা হয়, “স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় ও মহামারীর শুরুতেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ন্যুজ্ব হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকার কারণে বাংলাদেশে সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। তেমনটা হলে কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত গুরুতর ও সঙ্কটাপন্ন রোগীরা বা অন্যান্য রোগীরা এই মহামারী চলাকালে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা পাবে না।”
প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন যে, কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে ৭৫৩ জন স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দেশজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের ৩ লাখ ১৭ হাজারেরও বেশি পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকায় ৬টি পরীক্ষাগারে কভিড-১৯ পরীক্ষা করা যাবে। এছাড়া আরও ৪টি পরীক্ষাগার প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে। তিনি বলেন, “চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত সংখ্যক টেস্টিং কিট জোগাড় করা হয়েছে।” এছাড়া রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের আর্থিকভাবে সহায়তা করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। ছয় মাসের জন্য নিম্নআয়ের মানুষদের খাদ্য ও নগদ সহায়তা দেওয়া হবে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, “চীন সরকার ও জ্যাক মা ফাউন্ডেশন থেকে স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের জন্য পিপিই ও টেস্টিং কিট আমরা পেয়েছি।” রোববার জ্যাক মা ফাউন্ডেশন ও আলিবাবা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশকে ৩০ হাজার কভিড-১৯ টেস্ট কিট ও ৩ লাখ মাস্ক সরবরাহ করে। ফাঁস হওয়া জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ দপ্তর থেকে বলা হয়, এক্ষেত্রে বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত মডেলিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ওই পূর্বাভাস প্রস্তুত করা হয়েছে। এই প্রাদুর্ভাবের সম্ভাব্য মাত্রা বা ভয়াবহতা পরিমাপ করতে ধরে নেওয়া হয় যে, কোনো ধরণের সরকারী হস্তক্ষেপমূলক পদক্ষেপ একেবারেই নেওয়া হবে না। এক বিবৃতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ কার্যালয় বলেছে, “কভিড-১৯ রোগের বিস্তার শ্লথ করতে বাংলাদেশ সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়ে আসছে, তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে জাতিসংঘের। প্রস্তুতিও চলছে। স্বাস্থ্য সরঞ্জাম সরবরাহ, পিপিই, টেস্ট করার সামর্থ্য বা স্বাস্থ্যসেবা কর্মী ও স্বাস্থ্য স্থাপনাসমূহের সামর্থ্য ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি করা হচ্ছে।” এতে আরও বলা হয়, চীন ও অন্যান্য দেশ বাংলাদেশকে ‘দারুণ সহায়তা’ দিয়েছে। এদিকে হংকং শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত এভারগ্রিন প্রোডাক্টস গ্রুপ-এর চেয়ারম্যান ফেলিক্স চ্যাং ইয়ো-চং বলেন, তার কোম্পানি বাংলাদেশে অবস্থিত কারখানায় মাসে ৩-৪ লাখ পরচুলা তৈরি করে। কিন্তু এই মহামারীর কারণে যুক্তরাষ্ট্রগামী বেশ কিছু ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়ে গেছে। ফলে বেশ কিছু শ্রমিককে ছুটিতে যেতে বলা হয়েছে। অস্থায়ী শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয়েছে। বাংলাদেশে চীনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের ঘনিষ্ঠ এই ব্যবসায়ী বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্ট কারখানাগুলোর ক্ষতিই সবচেয়ে বেশি। তার ভাষ্য, “এটি তাদের জন্য বড় এক মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”