দিনাজপুরে শসার কেজি ৫০ পয়সা!

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনাভাইরাসের কারণে দেশের কৃষিক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। প্রান্তিক কৃষকেরা ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। জমিতে ফসল ফলাতে যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে তার কানাকড়িও উসুল হচ্ছে না বলে দাবি কৃষকদের।
সোমবার (৩০ মার্চ) দুপুরে শসার দাম না পেয়ে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের ঝাড়বাড়ী জয়রাম এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক কৃষক মানববন্ধন করেছেন।
মানববন্ধনে কৃষকরা বলেন, ৫০ কেজি শসা বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৩০ টাকায়! বর্তমান সময়ে সরকারের উচিৎ কৃষকদের দিকে নজর দেয়া। কৃষকরাই দেশকে বাঁচিয়ে রাখে। যদি আমরা খাদ্য শষ্যের দাম না পাই তাহলে চাষাবাদের দিকে আমাদের অনিহা সৃষ্টি হবে। আমরা শসা বিক্রি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ শসা জমি থেকে তুলতে যে খরচ হচ্ছে সেই খরচের টাকাই উঠছে না।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা শসা চাষের জন্য বিখ্যাত। এই উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌর শহরের প্রায় বেশিরভাগ ফসলি জমিতে শসা চাষ হয়ে থাকে। তবে শিবরামপুর, পলাশবাড়ী ও শতগ্রাম ইউনিয়ন শসার গ্রাম নামেই পরিচিত। গ্রামাঞ্চলের এসব শসা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। প্রতিদিন বীরগঞ্জ উপজেলা থেকে ১৫ থেকে ২০ ট্রাক শসা রাজধানী ঢাকাসহ, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশালসহ অন্যান্য জেলা শহরে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা।
প্রতি কেজি শসা শহরের বাজার গুলোতে ৮-১০ টাকায় বিক্রি হলেও কৃষকরা মূল্য পাচ্ছেন মাত্র ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা! অথচ এক বিঘা জমিতে শসা চাষ করতে খরচ পড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।
শতগ্রাম ইউনিয়নের শরিফুল ইসলাম বলেন, এবার শসা চাষ করে পুরোটাই লোকসান গুণতে হচ্ছে। আমি প্রতি বছরই আড়াই থেকে ৩ বিঘা জমিতে শসা চাষ করি। এবারও আড়াই বিঘা জমিতে শসা লাগিয়েছি কিন্তু এবার শসার দাম পানির থেকেও কম। পাইকারিভাবে প্রতি কেজি শসা বিক্রি করতে হচ্ছে ৫০ পয়সা অথবা ১ টাকায়। এতে খরচ তো দূরের কথা আসল টাকাও উঠছে না।
শসা চাষী শাকিল আহমেদ বলেন, কষ্টে উৎপাদিত ৫০ কেজির এক বস্তা শসা ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করতে আমাদের বুক ফেটে যাচ্ছে। শসার ফলন ভালো হলেও বর্তমান বাজারে দাম না থাকায় খরচের পুরোটাই লোকসানে যাচ্ছে। শসা তুলতে যে খরচ হচ্ছে সেই টাকাই উঠছে না। দেশের এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে আমাদের কি হবে বলা যাচ্ছে না। কাঁচা বাজারের দিকে সরকারের নজর দেয়া উচিৎ বলেও মনে করেন এই কৃষক।
এ বিষয়ে বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু রেজা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে শসা রাজধানীসহ অন্যান্য জেলা শহরগুলোতে যেতে পারছে না। আবার অনেকেই ঘর থেকে বের না হওয়ার কারণেও শসা কিনছে না। এ জন্যই শসার দাম এত কম। তারপরও আমি কৃষকদের বলেছি, তারা যেনো চাহিদা অনুযায়ী শসা তুলেন। দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হলে আশা করি শসার দাম বৃদ্ধি পাবে।