করোনা ভাইরাসের কারণে সময় বৃদ্ধি হচ্ছে না : জেলে ও শুঁটকী ব্যবসায়ীরা দুবলার চর ছাড়ছেন

0

মনিরুল হায়দার ইকবাল, মোংলা (বাগেরহাট)॥ করোনা ভাইরাসের কারণে সমুদ্রগামী জেলে ও শুঁটকী ব্যবসায়ীরা এখন সুন্দরবনের দুবলার চরাঞ্চল ছাড়তে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে জেলেদের তৈরী অস্থায়ী ঘর, শুঁটকি তৈরীর মাচাসহ অন্যান্য স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ দেখিয়ে বন বিভাগের কাছে আরো ১৫দিন থেকে মাস খানেক পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছিলেন জেলে মহাজন ও শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু করোনা ভাইরাস রোধে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে জেলে ও শুটকী ব্যসায়ীদের সুন্দরবন ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বনবিভাগ থেকে। আর এ নির্দেশনা পাওয়ার পর সাগরপাড়ের দুর্গম এ চরাঞ্চল ছেড়ে গত দু’দিনে কয়েক হাজার জেলে লোকালয়ে তাদের বাড়ি ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে অনেক জেলে বাড়ি ফিরে এসেছেন। জেলে ও ব্যবসায়ীরা লোকালয়মুখী হওয়ায় আবার নিঝুম ও কোলাহল মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ রুপ নিতে শুরু করেছে সুন্দরবন সংলগ্ন সাগরপাড়ের চরাঞ্চল।
মোংলা বন্দর থেকে নদী পথে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোসাগরের দুবলার চরাঞ্চালের দূরত্ব প্রায় ১শ’২০ কিলোমিটার। প্রতি বছর শীত মৌসুমের শুরুতে সুন্দরবন উপকুলে দক্ষিণাঞ্চচল ও বৃহত্তর চট্রগ্রাম অঞ্চলের কয়েক হাজার জেলে সমবেত হয় সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপ সাগরের সুন্দরবন উপকূল পাড়ের দুবলার চরের সমুদ্রে নানা প্রজাতির মাছ শিকার ও চরে শুটকী তৈরির কাজে নিয়োজিত হয়।
দুবলার শুটকী ব্যবসায়ী জালাল আহম্মেদ বুলবুল জানান, প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মার্চ মাস সময় পর্যন্ত সুন্দরবন উপকুলের কয়েক হাজার জেলে সমবেত হয় সুন্দরবন সংলগ্ন সাগর পাড়ের দুবলা সহ আশপাশের ৮/১০ চরে। এখানে অবস্থান নিয়ে তারা সমুদ্রে নানা প্রজাতির মাছ শিকার শেষে তা চরে এনে শুটকী তৈরির কাজে নিয়োজিত হয়। গেল নভেম্বরে ঘুর্নিঝড় বুলবুল ও পরবর্তি সময়ে কয়েক দফা বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে জেলে ও মহাজনদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ কারণে এসব আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি পোষাতে জেলে মহাজনরা বন বিভাগের কাছে নির্ধারিত সময়ের চাইতে আরও ১৫ থেকে মাস খানেক সমুদ্রে মাছ আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়ার জন্য সময় বৃদ্ধির আবেদন জানায়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে বন বিভাগ জেলে মহাজনদের সময় বৃদ্ধির এ আবেদন নাকচ করে আগামি ৩১ মার্চের মধ্যে তাদের সাগর ও সুন্দরবনের চর এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশনা দেয়। ফলে মহাজন ও জেলেরা জাল-নৌকা ও ট্রলার নিয়ে লোকালয় ফিরে আসতে শুরু করেছেন। এর মধ্যে অনেকেই জাল, নৌকা ও ট্রলার নিয়ে লোকালয়ে তাদের বাড়িতে পৌছে গেছেন।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ বেলায়েত হোসেন জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবার বন বিভাগ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম রাজস্ব আয় করেছে। এ ছাড়া একই কারণে জেলেরাও পর্যাপ্ত মাছ আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়া করতে না পারায় মোটা অংকের টাকা লোকসান দিয়েছে। এরপরও করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে জেলেদের সময় বৃদ্ধির আবেদন গ্রহণ করা যায়নি। তিনি আরো বলেন, এখনও যে সকল জেলে ও ব্যবসায়ী সীমিত আকারে চরে অবস্থান করছেন তারা আগামি ৩১ মার্চের মধ্যে অবশ্যই লোকালয়ে তাদের বাড়িতে ফিরে যাবার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যথায় এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।