স্বাস্থ্যকর্মীদের স্যালুট

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বৃহষ্পতিবার রাত আটটা, সন্ধ্যা হওয়ার পরপরই ইংল্যান্ডবাসী নিজেদের বারান্দা, বাগান বা খোলা জানালায় দাঁড়িয়ে একসাথে করতালি দেন। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যারা জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন সেই স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজে উৎসাহ দিতে ছিল এই আয়োজন। ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং চ্যান্সেলর রিশি সোনাক নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে এই করতালি কর্মসূচিতে অংশ নেন। পরদিনই অবশ্য বরিস জনসনের করোনা ভাইরাস রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ার খবর আসে। মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া কভিড-১৯ ধনী- গরীব, সাধারণ-ক্ষমতাধর কাউকেই ছাড়ছে না। প্রিন্স চার্লস, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক, স্কটল্যান্ড বিষয়ক মন্ত্রী অ্যালিস্টার জ্যাক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন সেল্ফ আইসোলেশনে আছেন। বৃটেনে প্রতিদিন বাড়ছে যেমন আক্রান্তের সংখ্যা, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। অন্য সব রাষ্ট্রের মতো বৃটিশ সরকারকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে।
এখানকার বিরোধীদলীয় নেতা পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে দেশের স্বাস্থ্যখাতের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও স্বীকার করেছেন যে, করোনা মোকাবিলায় যে পরিমাণ লোকবল, ভেন্টিলেশন বা আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম থাকা উচিত তার ঘাটতি রয়েছে। এরই মধ্যে ইস্ট লন্ডনে চার হাজার বেডের একটি হাসপাতাল গড়ে তোলা হচ্ছে যাতে ৫শ’ আইসিইউ এবং এক হাজার ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে লোকবল বাড়াতে সরকার স্বেচ্ছাসেবী আহবান করলে এক রাতের মধ্যে আড়াইলাখ কর্মী তাদের নাম নিবন্ধন করেন। এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ কর্মী তাদের নাম নিবন্ধন করেছেন। এছাড়া ৩৫ হাজার সাবেক স্বাস্থ্যকর্মী আবার কাজে যোগ দিয়েছেন। করোনায় সংক্রমনের ঝুঁকি এই স্বাস্থ্যকর্মীদের সবচেয়ে বেশি থাকা সত্বেও তারা নিজ দায়িত্বে কাজ করছেন। এরই মধ্যে অনেক ডাক্তার-নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। গত বুধবার ৭৬ বছর বয়সী চিকিৎসক হাবীব জিয়াদি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার মেয়ে ডক্টর সারাহ জিয়াদী বলেছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন তার বাবা। তিনি আক্রান্ত হওয়ার পর ২৪ ঘন্টর মধ্যেই মারা যান। ড. জিয়াদী পারিবারিক জিপি ছিলেন। পিপিআই ঘাটতি থাকায় তিনি অরক্ষিত অবস্থায় রোগী দেখছিলেন বলে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে তার মেয়ের ধারনা। বৃটিশ মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্তদের সেবা দিতে গিয়ে অনেক স্বাস্থ্যকর্মী এখন মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন। গত ২৫ মার্চ ডেইলি মেইল, গার্ডিয়ান, মিররসহ সহ প্রায় সব গণমাধ্যম এরকমই একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, কিং কলেজ হাসপাতালের এক নার্স মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ওই হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আটজন রোগী মারা যাওয়ার পর ২০ বছর বয়সী ওই নার্স আত্মহত্যা করেন বলে গণমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হয়। কিংস কলেজের এই নার্স আইসিইউতে কাজ করছিলেন। কর্মস্থলেই তিনি নিজেকে হত্যা করেন। করোনা আক্রান্ত রোগীর বিভীষিকাময় মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখার পর সহ্য করতে না পেরে তার এই আত্মহনন বলে জানিয়েছেন তার নিকটজনেরা। নিকটজনদের অনুরোধে ওই নার্সের ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রেখেছে পুলিশ। এ অবস্থায় বিরোধী দলীয় নেতার দাবীর প্রেক্ষিতে রবিবার থেকে প্রত্যেক ডাক্তারকে করোনা ভাইরাসের টেষ্ট করানো হবে। একই সাথে ডাক্তারদের মানসিকভাবে দৃঢ় রাখতে নেয়া হবে বিভিন্ন উদ্যোগ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, স্বাস্থ্যকর্মীদের পরীক্ষা শুরু হলেই বৃটেনের কভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়তে থাকবে। তখন নতুন করে সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে বৃটিশ সরকার। আবার স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলে তাদের মধ্যে এটি আতঙ্কও তৈরি করতে পারে।