যশোরে আরও ২৪৬ জন কোয়ারেন্টিনে সন্দেহভাজন এক রোগীকে নিয়ে হুলুস্থুল : একজন পলাতক

0

বিএম আসাদ ॥ যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে এক রোগীকে নিয়ে হুলস্থুল কান্ড ঘটেছে। এরপর হাসপাতালের কোয়ারেন্টিনে থেকে এক রোগী পালিয়ে গেছে। অপরজনকে সন্দেহমুক্ত হওয়ায় ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। গতকাল বহির্বিভাগের ৩ রোগীকে করোনা উপসর্গ থাকতে পারে সন্দেহে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। ২৪ ঘন্টায় আরও ২শ’ ৪৬ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। প্রাইভেট হাসপাতালগুলো বন্ধ রয়েছে। জানা গেছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে গত সোমবার রাতে এক কিশোরীকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে তাকে হাসপাতালের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। রাত ৮টা ২০ মিনিটে আরও একজন রোগীকে ভর্তি করে কোয়ারেন্টিনে না রেখে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। দু’জনের বয়স ১৫ ও ১৬ বছর। উভয়ের বাড়ি যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি এবং হৈবতপুর ইউনিয়নে। মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীর শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ- জ্বর, সর্দি, কাঁশি, ঠান্ডা, গলায় ব্যথা ইত্যাদি জানতে পারেন রাতে ওয়ার্ডে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স মোসা: শারমিন, শাহীনুরসহ ৩ জন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা ওয়ার্ড ছেড়ে বের হয়ে আসেন। তারা জরুরি বিভাগে কর্মরত মেডিকেল অফিসার ডা. দেলোয়ার হোসেনের শরণাপন্ন হন। এ সময় ওয়ার্ডের অন্য রোগী ও স্বজনরা পালিয়ে যান। তখন হাসপাতালে হুলস্থুল পড়ে যায়। তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায়ের সাথে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি এ খবর জানেন না বলে জানান। পরে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক দেলেয়ার হোসেন করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যসচিব আরএমও ডা. মো. আরিফ আহমেদের সাথে যোগাযোগ করেন। তখন আরএমও’র নির্দেশে ডা. দেলোয়ার হোসেন রোগীকে হাসপাতালের কোয়ারেনটিনে পাঠিয়ে দেন। মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে ওই রোগীকে নিয়ে যাওয়ার সময় কর্মচারী আলেয়া খাতুনসহ তার স্বজনরা ছিল অরক্ষিত। এ সময় আশপাশ থেকে লোকজন ও জরুরি বিভাগে টহলরত পুলিশও সেখান থেকে পালাতে থাকে। পুলিশ এক পর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্স গ্যারেজে গিয়ে অবস্থান নেয়। রোগীকে প্রায় ৪৫ মিনিট জরুরি বিভাগে রেখে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকেন ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন। পরে আরএমও’র নির্দেশ পেয়ে তাকে পাঠানো হয় কোয়ারেন্টিনে।
এরপর ওই রোগী লাপাত্তা হয়ে যায়। তখনও কোয়ারেন্টিনে কোন চিকিৎসক কিংবা নার্স ছিলেন না। কোন কোন চিকিৎসকের দেখা মেলেনি রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। গতকাল মঙ্গলবার সকালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই রোগী নেই। এ ব্যাপারে ডা. আরিফ আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই রোগী রাতে পালিয়ে গেছে। অপরজনের শরীরে করোনাভাইরাসের তেমন লক্ষণ নেই। অন্য রোগ আছে। তাকেও বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। অপর আরএমও ডা. মো. আব্দুস সামাদ জানান, রোগী চিকিৎসা পেয়েছে। গতকাল কোয়ারেন্টিনে খাতাপত্র ও নার্সদের টেবিল দেয়া হয়েছে। কোয়ারেন্টিনে আইসোলেশন ওয়ার্ডে। গতকাল চিকিৎসকগণ ওয়ার্ডে প্রটেকশনে মাস্ক ও হাতে গ্লোভস রোগীর চিকিৎসা দিয়েছেন।
এদিকে, কোয়ারেন্টিনের বিষয়ে করণীয় নিয়ে যশোর জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ২টার দিকে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. গিয়াস উদ্দিনসহ সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এর আগে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত যশোর জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে সতর্কতামূলক ১ হাজারের অধিক প্রটেকশন সামগ্রী পাঠিয়েছেন। এসব সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ৪শ’ পিস -এর ৪ বক্স গ্লাভস, ১শ’ ৩টি সুকডার, প্রটেকটিভ কভার অল ম্যাস্ক ৮০টি, কেস্সিসল ৯০টি, মফক্যাপ ৯০টি, চশমা ৬০টি, ফেসমাস্ক ২শ’ ৪০টি, গাউন ৮০টি, স্যানিটাইজার সেফনিল ৩০টি, চৌগাছা, মনিরামপুর, কেশবপুর, ঝিকরগাছা, বাঘারপাড়া, অভয়নগর ও শার্শা উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসব প্রটেকশন সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এদিকে, যশোরের ৮ উপজেলায় গত ২৪ ঘন্টায় শ’ ৪৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে ১ হাজার ৩শ’ ৫৬ জনকে।