খালেদা জিয়ার মুক্তির সিদ্ধান্ত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে দুই শর্তে তাকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী তিনি এই সময়ে বিদেশ যেতে পারবেন না। নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। বয়স ও মানবিক বিবেচনায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বয়স বিবেচনায় মানবিক কারণে সরকার সদয় হয়ে দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শর্ত হল- এই সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া। প্রথমে তাকে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হলেও গত বছরের ১লা এপ্রিল থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার মুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়ায় পরিবারের তরফে সরকারকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তে জাতি স্বস্তি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এদিকে সরকারি সিদ্ধান্ত জানার পর গুলশানে জরুরি বৈঠক করেন সিনিয়র নেতারা। কয়েকজন নেতা ছুটে যান হাসপাতালে। তবে দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট প্রেক্ষাপটে দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির কারণে কোন ধরণের জনসমাগম না করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রধানমন্ত্রী ফাইলে সই করলে আজই খালেদা জিয়া হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরতে পারেন। দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ দাবি করে তার পরিবার ও বিএনপির তরফে মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে। তার মুক্তির দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছে দলটি। সর্বশেষ বয়স ও মানবিক বিবেচনায় তাকে মুক্তি দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ এর উপধারা ১া অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার সাজার কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে। তাকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়ার সুপারিশ পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যখন তাকে মুক্তি দেবে, তখন থেকেই তা কার্যকর হবে। বাসায় রেখে চিকিৎসার শর্তের বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, এখানে কিন্তু বলা হচ্ছে না যে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। কিন্ত হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে কন্ডিশনের ব্যাপারে দেখা যাবে। সেজন্য কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে, বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। হাসপাতালে যদি ভর্তি হতে হয়, তাহলে বাংলাদেশের সবচেয়ে মানসম্পন্ন হাসপাতাল- সেখানে তো তিনি আছেনই। হাসপাতালে তাকে ভর্তি হতে হবে কি না সেটা অবস্থার প্রেক্ষিতে বোঝা যাবে। কিন্তু শর্ত হচ্ছে, ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। উক্ত সময়ে দেশের বাইরে গমন করতে পারবেন না। আজকের প্রেক্ষিতে কাউকে বিদেশে পাঠানো মানে তাকে সুইসাইড করতে বলা। খালেদা জিয়া কখন মুক্তি পাচ্ছেন এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু মঙ্গলবার বিকালে বলেন, আইন মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তি সংক্রান্ত নির্দেশনা তারা পেয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন দেখে সামারি তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সামারি অনুমোদন হয়ে ফিরে আসলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কারাগারে নির্দেশনা পাঠাবে।
উল্লেখ্য, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ২৯শে অক্টোবর খালেদা জিয়াকে সাত বছর কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া। সেই আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন। তবে তার জামিনের আবেদন গত বছর ৩১শে জুলাই হাইকোর্ট এবং গত বছরের ১২ই ডিসেম্বর আপিল বিভাগ খারিজ করে দেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালত ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। সেদিনই তাকে কারাগারে নেয়া হয়। সেই থেকে তিনি কারাবন্দি। যদিও এ মামলায় হাইকোর্ট ওই বছরের ১২ই মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ জামিন বহাল রাখেন। তবে অন্য মামলায় জামিন না পাওয়ায় তিনি মুক্তি পাননি। এ মামলায় হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ৩০শে অক্টোবর এক রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। হাইকোর্টে এ রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলও আপিল বিভাগে বিচারাধীন।