যেভাবে ইতালি ফেরত এক প্রবাসীর মাধ্যমে ৬ জন করোনায় আক্রান্ত হলেন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যে ৩৩ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষ চিহ্নিত হয়েছেন তাদের মধ্যে সাতজনই মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার একটি পরিবার থেকে এসেছেন। তারা শিবচরের একজন ইতালিফেরত প্রবাসীর পরিবারের সদস্য এবং শ্বশুরপরে আত্মীয়-স্বজন। সরকারের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে জানায়, বিদেশফেরতদের জন্য জারি করা স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে নির্দেশ লঙ্ঘন করে অসতর্ক চলাফেরা ও আচরণের মাধ্যমে ওই ব্যক্তিটি শিবচরের এতগুলো মানুষকে সংক্রমিত করেছেন।
এই পরিবারটি সংক্রমণ চিহ্নিত হওয়ার পরেই সরকারিভাবে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলাকে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। শিবচরে এই সংক্রমণের শুরু হয় দুজন ইতালিফেরত প্রবাসীর মাধ্যমে। এরা মূলত দুজন বন্ধু। প্রথমেই এদের দুজনকে কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পরে এদের আত্মীয় স্বজনকে পরীা করে দেখা যায়, একজনের বাবা, স্ত্রী, দুই সন্তান, শাশুড়ি এবং শ্যালকের স্ত্রীও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। শাশুড়ি, শ্যালকের স্ত্রী এবং ইতালিফেরত একজন এখন মাদারীপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর বাকি পাঁচজন, অর্থাৎ ইতালিফেরত অন্য প্রবাসী, তার বাবা, স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে আসা হয়েছে ঢাকায়। ওই কর্মকর্তা বলেন, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষজনকে ঘরে আটকে রাখাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, এক বাড়িতে গিয়েছি, সে বাড়ির সবাই হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে। সবার ঘরের ভেতরে থাকার কথা। কিন্তু ঢুকে দেখি সেখান থেকে একজন ফেরিঅলা বের হচ্ছেন। বাড়ির সবাই এই ফেরিঅলার কাছ থেকে কেনাকাটা করছেন। যে ব্যক্তিটি ছয়জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছেন তার সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা বলেন, তিনি গত সাতই মার্চ বাংলাদেশে ফেরেন। এর একদিন পরেই বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়ার খবর প্রকাশ হয়। কিন্তু ইতালিফেরত ওই ব্যক্তি তার বাড়ির এবং শ্বশুরপরে আত্মীয়দের সাথে মেলামেশা অব্যাহত রাখেন। ১১ই মার্চ ওই ব্যক্তিটির শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়। উপসর্গ দেখা দিলে তিনি মাদারীপুরের চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকায় আসেন। ঢাকাতে পরীায় তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত বলে ধরা পড়েন। সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকা থেকে প্রতিনিধিদল শিবচরে যায় এবং তার পরিবারের সদস্যদের কোয়ারেন্টাইনে করে। ধীরে ধীরে পরিবারের বাকি সদস্যদের মধ্যেও উপসর্গ দেখা দেয় এবং তারা একে একে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। ইতালি থেকে আসা দুজন ছাড়া সরকারি হিসেব অনুযায়ী শুধু শিবচরে ৬৮৪ জন লোক বিদেশ থেকে এসেছেন যাদের মধ্যে অনেকেই ১৪দিন পার করেছে। ১৯ মার্চ শিবচর উপজেলার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামসুদ্দিন খান বলেন, শিবচর উপজেলায় শুধু ওষুধের দোকান এবং অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খোলা থাকবে। এ ছাড়া বাকি সবকিছু বন্ধ থাকবে। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত এই লকডাউন চলবে। এ সময়ের মধ্যে শিবচর উপজেলায় থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না এবং সেখান থেকে বেরও হতে পারবেন না।