ভারত লকডাউন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা ভাইরাস ভারতে ক্রমশ আগ্রাসী চেহারা নিচ্ছে। গতকাল পশ্চিমবঙ্গে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তির কোনো বিদেশ সফরের ইতিহাস নেই বলে জানা গেছে। ভারতে গতকাল পর্যন্ত করোনা সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৯-এ। করোনা সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে ভারত সরকার একের পর এক কঠোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। গতকাল বিকাল থেকে প্রায় সম্পূর্ণ ভারতে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ভারতের ১৯টি রাজ্য সম্পূর্ণ লকডাউন করা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন শহরে লকডাউন শুরু হয়েছে। সোমবার বিকালের পর থেকেই লকডাউন কার্যকর হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ৭টি জেলা সহ রাজ্যের সব পুর শহরে সোমবার বিকাল ৫টা থেকে শুক্রবার পর্যন্ত লকডাউন করা হয়েছে। ভারতজুড়ে ট্রেন, বাস, মেট্রো রেল ও বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
রোববার রাত থেকেই যাত্রীবাহী লোকাল ও দূরপাল্লার সব ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন রাজ্যের মেট্রো বা পাতাল রেল চলাচল। মঙ্গলবার থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সব অভ্যন্তরীণ বিমানের উড়ান। রোববার থেকে বন্ধ রয়েছে আন্তর্জাতিক উড়ানও। জরুরি উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত কারখানা ছাড়া সব কলকারখানাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য চলাচলের জন্য পরিবহন চালু থাকলেও সব ধরনের গণপরিবহন ৩১শে মার্চ পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। লকডাউনের নির্দেশ না মানলে কঠোর সাজারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মানুষ লকডাউনকে গুরুত্ব না দেয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করে টুইট করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, মানুষ এখনো সম্পূর্ণ সচেতন হচ্ছে না। তারা অকারণে বাড়ির বাইরে বেরুচ্ছেন। মোদি সকলকে সতর্ক করে বলেছেন, দয়া করে নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন। লকডাউনের নির্দেশিকা যথাযথভাবে মেনে চলুন। সেই সঙ্গে মোদি রাজ্যগুলোর উদ্দেশ্যে বলেছেন, আইন মেনে লকডাউন নিশ্চিত করুন। এরপরই ভারত সরকারের তরফে রাজ্যগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, লকডাউন কার্যকর করতে প্রয়োজনে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। সোমবারই রাজ্য সরকারগুলোকে পাঠানো নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, লকডাউন না মানলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো ব্যক্তি লকডাউন না মানলে তার ছয় মাসের কারাবাস ও জরিমানা হতে পারে। ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে কেন্দ্রের নির্দেশিকা নিয়ে প্রচার শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাস্তায়, চায়ের দোকানে কিংবা পাড়ার রকে খোশমেজাজে আড্ডার যে ছবি পোস্ট করা হচ্ছে তাতে উদ্বেগ বেড়েছে প্রশাসনিক কর্তাদের। রোববার করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ১৩ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৭৫টি শহরে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। এ ছাড়া রাজস্থান, পাঞ্জাব, দিল্লি সহ বেশ কয়েকটি রাজ্য পুরোপুরি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। দিল্লি সরকার তাদের সীমান্ত সিল করে দিয়েছে। ভারতের বেশ কয়েকটি শহরে জমায়েত বন্ধ করতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কোথাও কারফিউও জারি করা হয়েছে। ব্যাঙ্গালুরুতে পুলিশ কমিশনার ভাস্কর রাও বলেছেন, হাতে হোম কোয়ারেন্টিন স্ট্যাম্প নিয়ে বাইরে ঘুরে বেড়ালে গ্রেপ্তার করবে পুলিশ। ভারতজুড়ে করোনা আতঙ্কের মধ্যে এই কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ। লকডাউনের সময়ে বাসসহ গণপরিবহন, অফিস-আদালত, কলকারখানা সব বন্ধ থাকবে। চলবে না কোনো ট্রেন বা মেট্রো রেল। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাড়ি থেকে না বেরুনোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে মুদির দোকান, ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। কোথাও অযথা ভিড় করা চলবে না বলে জানানো হয়েছে। সোমবার ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪১৫তে পৌঁছেছে। সোমবার সকাল পর্যন্ত দেশে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ জন। আক্রান্তরা মহারাষ্ট্র, গুজরাট, রাজস্থান ও বিহারের বাসিন্দা। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়িয়েছে মহারাষ্ট্র ও কেরালায়। দেশি-বিদেশি মিলিয়ে এই দুই রাজ্যে ইতিমধ্যেই ৬৭ জন সংক্রমিত হয়েছেন। রোববার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ৭। তবে সোমবার সকালে মুম্বইয়ে এক ফিলিপাইন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে করোনায় মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৯ জনে।