করোনা মহামারীতে চীনের ইস্পাত রফতানিতে ধস

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর সূতিকাগার চীন। এর প্রভাবে দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। শ্লথ হয়ে এসেছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি। বাদ যায়নি ইস্পাত শিল্প। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) চীনের ইস্পাত রফতানিতে ধস নেমেছে। এক বছরের ব্যবধানে চীন থেকে পরিশোধিত ইস্পাত রফতানি কমেছে ২৭ শতাংশ। অপরিশোধিত ইস্পাত রফতানি কমেছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। খবর রয়টার্স, সিনহুয়া ও নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ।
বছরের প্রথম দুই মাসে ইস্পাত শিল্পের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমস। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে চীনা রফতানিকারকরা সব মিলিয়ে ৭৮ লাখ ১১ হাজার টন পরিশোধিত ইস্পাত রফতানি করেছেন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ কম। ২০১৩ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির পর এবারই চীন থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে কম পরিশোধিত ইস্পাত রফতানি হয়েছে।
শুধু পরিশোধিত ইস্পাত খাতই নয়, বছরের প্রথম দুই মাসে চীন থেকে অপরিশোধিত ইস্পাত রফতানিতেও ধস নেমেছে। এ সময় চীনা রফতানিকারকরা সব মিলিয়ে ৫৭ লাখ ৭০ হাজার টন অপরিশোধিত ইস্পাত রফতানি করেছেন বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে দেশটির রাজস্ব বিভাগ। এক বছরের ব্যবধানে দেশটি থেকে পণ্যটির রফতানি কমেছে ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, একই সময় চীনা আমদানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ২০ লাখ ৪১ হাজার টন ইস্পাত আমদানি করেছেন। বছরের ব্যবধানে দেশটিতে শিল্প ধাতুটির আমদানি বেড়েছে ২ দশমিক ১ শতাংশ।
চীনা ট্রেডাররা জানান, গত দুই মাসে চীন যে পরিমাণ পরিশোধিত ও অপরিশোধিত ইস্পাত রফতানি করেছে, তার বেশির ভাগ রফতানি হয়েছে জানুয়ারিতে। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ফেব্রুয়ারিজুড়ে চীনা রফতানি খাত অনেকটাই স্থবির ছিল। উহানের সংকটময় পরিস্থিতির কারণে অনেক দেশ চীন থেকে পণ্য কেনা বন্ধ রেখেছিল। এ কারণে বছরের প্রথম দুই মাসে চীন থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ইস্পাত রফতানিতে ধস নেমেছে।
তবে চলতি মার্চ ও আগামী এপ্রিলে চীনের ইস্পাত রফতানি খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আগের তুলনায় কমেছে। এমনকি দেশটিতে কয়েক দিন ধরে নতুন কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। এটি বড় একটি অর্জন। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে। মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারে ইস্পাত শিল্পও।
খাতসংশ্লিষ্টদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, এ দুই মাসে চীন থেকে ৬০ লাখ টন করে ইস্পাত রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও আগের বছরের মার্চে দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ৬৩ লাখ ২৭ হাজার টন ইস্পাত রফতানি হয়েছিল। আর ২০১৯ সালের এপ্রিলে চীনা রফতানিকারকরা ৬৩ লাখ ২৬ হাজার টন ইস্পাত রফতানি করেছিলেন।
তবে মার্চ-এপ্রিলে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে চীনের ইস্পাত রফতানি খাতকে। এর মধ্যে অন্যতম রফতানি বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে হারানো রফতানি বাজার পুনরুদ্ধারে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ইস্পাত রফতানিকারকরা ক্রেতাদের জন্য বিশেষ মূল্যছাড় দিয়েছে। এটা বাজারে চীনের জন্য প্রতিযোগিতা বাড়িয়েছে।
অন্যদিকে ভারত, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইরানসহ এশিয়ার অনেক দেশ এখনো নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছে। অনেক দেশ লকডাউনে রয়েছে। ফলে এশিয়ার দেশগুলোয় রফতানি চাহিদা না বাড়লে চীনের ইস্পাত রফতানি খাতকে প্রবৃদ্ধির ধারায় ফেরানোর লড়াই অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে।