করোনা প্রতিরোধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের যত উদ্যোগ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা প্রতিরোধে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন, কর্মক্ষেত্র পরিচ্ছন্ন রাখা, থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহার বাধ্যতামূলক ও দাফতরিক সভা সীমিতকরণসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগগুলো নিম্নরূপ:
কেরু অ্যান্ড কোম্পানির হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাষ্ট্রায়ত্ত কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন শুরু করেছে। ‘কেরুস হ্যান্ড স্যানিটাইজার (Carew’s Hand Sanitizer)’ নামে এই জীবাণুনাশক সোমবার (২৩ মার্চ) থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বাজারজাত করা হবে। কয়েক দিন পর থেকে এটি পুরোদমে বাজারে পাওয়া যাবে।
ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় দেখা গেছে, কেরু উৎপাদিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ জীবাণু ধ্বংস করতে সক্ষম। ইতোমধ্যে চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় প্রশাসন ও কেরু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে এটি বিতরণ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১৬টি বিপণন কেন্দ্র, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সামনে এ স্যানিটাইজার পাওয়া যাবে।
এছাড়া, চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এটি সরবরাহ করা হবে। প্রতি ১০০ মিলিলিটার বোতলের স্যানিটাইজারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হবে ৬০ টাকা। উল্লেখ্য, কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় অবস্থিত বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অধিভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৩৮ সালে স্থাপিত কারখানাটি উন্নতমানের স্পিরিট উৎপাদন করে আসছে।
কর্মক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণ
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে কর্মক্ষেত্রের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে নিয়মিত বিরতিতে হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, আইইডিসিআর কর্তৃক নির্দেশিত পন্থায় হাঁচি-কাশি দেওয়া, করমর্দন বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকা এবং জনসমাগম পরিহার করতে মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন দফতর/সংস্থা, মাঠ পর্যায়ের আঞ্চলিক অফিস, জেলা অফিস, শিল্পনগরী কার্যালয়, শিল্প-কারখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সবার কার্যালয়, শিল্প-কারখানা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজ নিজ প্রাঙ্গণ পরিষ্কার রাখতে বলা হয়েছে।
সংক্রমণ প্রতিরোধে সাময়িকভাবে বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি স্থগিত করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিসিক শিল্পনগরীগুলোতে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া, শিল্পনগরীগুলোর মূল ফটক এবং দর্শনযোগ্য স্থানে করোনার ঝুঁকি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক সচেতনতামূলক ব্যানার টানানো হয়েছে।
কন্ট্রোল রুম স্থাপন
করোনার প্রাদুর্ভাবে উদ্ভূত যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন দফতর/সংস্থাগুলোয় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। মতিঝিলে অবস্থিত শিল্প মন্ত্রণালয়ের চতুর্থ তলায় ৪১৯ নং কক্ষে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সাধারণ সেবা) প্রতুল কুমার শাহাকে মন্ত্রণালয়ের ফোকাল পয়েন্ট মনোনীত করা হয়েছে। যেকোনও জরুরি প্রয়োজনে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের কন্ট্রোল রুমের হট লাইন নম্বর +৮৮০২৯৫৫৮৪১৩, মোবাইল নম্বর ০১৭২০-০৯৮৩৬১, ই-মেইল: [email protected]এ যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব দফতর ও শাখা কার্যালয় এবং সংস্থা/করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়সহ সব কারখানা, আওতাধীন শিল্পনগরী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসা কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসারদের কন্ট্রোল রুম চালু করে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নির্ধারণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব কন্ট্রোল রুমের ফোকাল পয়েন্টের তথ্য সংশ্লিষ্ট এলাকার সব শিল্প মালিক এবং শ্রমিকসহ সবাইকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।
থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহার বাধ্যতামূলক
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর নির্দেশনা প্রতিপালনের পাশাপাশি শিল্প মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন দফতর/সংস্থা এবং মাঠ পর্যায়ের আঞ্চলিক অফিস, জেলা অফিস, শিল্পনগরী কার্যালয়, শিল্প-কারখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব জায়গায় কর্মরত সব কর্মীকে দেহের তাপমাত্রা পরিমাপক থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহারের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বিসিক শিল্পনগরীগুলোর কারখানা কর্তৃপক্ষ ও মালিকপক্ষকেও এ নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর আলোকে ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়সহ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব প্রতিষ্ঠানে থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি বিসিক শিল্পনগরীগুলোর মালিক সমিতিকে থার্মাল স্ক্যানারের ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
সংগনিরোধ (কোয়ারেন্টিন) ছুটি
শিল্প মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন দফতর /সংস্থা এবং মাঠ পর্যায়ের আঞ্চলিক অফিস, জেলা অফিস, শিল্পনগরী কার্যালয়, শিল্প-কারখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত কারও দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের বেশি হলে এবং সর্দি, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা থাকলে অর্থাৎ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে বাধ্যতামূলক সংগনিরোধ ছুটি দিয়ে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দাফতরিক সভা সীমিতকরণ
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে দাফতরিক সভা সীমিত করার নির্দেশনা জারি করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। জরুরি প্রয়োজনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কোনও সভার প্রয়োজন হলে সেগুলো সার্কুলেশনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কোনও প্রয়োজনে অফিস কক্ষে না ডেকে যথাসম্ভব ইন্টারকম, টেলিফোন, ই-মেইল ও ই-নথির মাধ্যমে যোগাযোগ করে কার্য সম্পাদনের অনুরোধ করা হয়েছে।
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ চালু
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রান্ত তথ্য ও নির্দেশনা দ্রুত বিনিময় এবং যোগাযোগ সহজ করার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ গঠন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়।