বিদেশ ফেরতদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নিষেধাজ্ঞার পরও করোনা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে প্রতিনিয়ত ফিরছে প্রবাসীরা। বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের মধ্যেই এখনো প্রতিদিন গড়ে সাড়ে সাত হাজার প্রবাসী ঢুকছে দেশে। এমনকি করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীন থেকেও আসছে যাত্রী। আইইডিসিআরের তথ্যমতে করোনায় আক্রান্ত ১৭ জনের অধিকাংশই বিদেশ ফেরত বা তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি। যারা দেশে আসছেন তাদের করোনা পরীক্ষা এবং হোম কোয়ারেন্টিনে নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। গত কয়েকদিন আগেও ইতালি ফেরত ১৪২ জনকে তাদের চাপের মুখে চেষ্টা করেও আশকোনাস্থ হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিনে রাখা সম্ভব হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে উচ্চ আদালত বিদেশ ফেরত যাত্রীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে।
এরপর অন্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কোয়ারেন্টিনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না বিদেশ ফেরত যাত্রীদের। বিমানবন্দর থেকে বের হয়েই আত্বীয় স্বজনের সঙ্গে মেলাচ্ছে হাত, করছে কোলাকুলির মতো ঘটনা। শুধু তাই নয় বিদেশ ফেরত হোম কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ না হতেই অনেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকাশ্যে। পরিবারসহ এলাকার বাজার-হাট সবখানেই যাচ্ছেন তারা। অভিযোগ রয়েছে, বিদেশ ফেরত অনেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মানছেন না। কেউ কেউ নিজেদের সুস্থ দাবি করে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কোয়ারেন্টিন এড়াতে কেউ আবার গ্রামে না গিয়ে শহরেই বসবাস করছেন স্বাধীনভাবে। নজরদারি কম থাকায় এমন হচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। এতে করে আতঙ্ক বিরাজ করছে প্রবাসী বেষ্টিত এলাকাগুলোর মধ্যে। যদিও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী প্রশাসনের লোক প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমান আদালত চালিয়ে জরিমানা করছে। কিন্তু কোনো ভাবেই থামানো যাচ্ছে না বিদেশ ফেরতদের অবাধ বিচরন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা বলেন , সবাইকে নজরদারির মধ্যে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতো লোকবলও নেই আমাদের। যতটুকু সম্ভব আমরা আমাদের মতো চেষ্টা করছি। তবে ব্যক্তি সচেতনতার উপর কিছু নেই। এদিকে হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক তৌহিদ-উল-আহসান জানান,‘ প্রতিদিন গড়ে সাড়ে সাত হাজার যাত্রী দেশে আসছেন। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। যাদের তত্ত্বাবধান করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। ’এমন পরিস্থিতিতে মাদারীপুরের শিবচরে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। জনসমাগম এড়াতে সব ধরনের গণপরিবহন ও কিছু এলাকার সব দোকানপাট, ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে বাংলাদেশের দুটি কোয়ারেন্টিনের দায়িত্ব দেয়া হয় সেনাবাহিনীর হাতে। হজরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের কাছে আশকোনা হজক্যাম্প ও উত্তরা দিয়াবাড়ির রাজউকের ফ্ল্যাট প্রকল্প এলাকায় করা কোয়ারেন্টিনের দায়িত্ব পায় সেনাবাহিনী। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যাদের কোয়ারেন্টিনে থাকা উচিত বলে মনে করবে, তাদের সেনাবাহিনীর হাতে ন্যস্ত করা হবে। যদিও আবাসিক এলাকায় কোয়ারেন্টিন সেন্টার খোলার প্রতিবাদ করছে এলাকাবাসী। জানা যায়, সরকারিভাবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য একটি জাতীয় নীতিমালা করা হয়েছে। ৬৫ পৃষ্ঠার এই নীতিমালায় কার কী দায়িত্ব, তা নির্ধারণ করা হয়েছে। নীতিমালার অংশ হিসেবে বিভাগীয়,জেলা,উপজেলা, সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি করে দেয়া হয়েছে।
এই কমিটির প্রথম কাজ হচ্ছে, বিদেশ থেকে কারা এসেছে, কোয়ারেন্টিন ঠিকমতো মেনে চলছে কি না, তা খতিয়ে দেখা। এটা কর্মপরিধিতে বলা রয়েছে। যদি না মানে, তা প্রশাসনকে জানাতে হবে। এসব বিষয় সমন্বয় করবেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। স্বাস্থ্য দপ্তর বা সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ প্রশাসন বিদেশফেরতদের তালিকা সংরক্ষণ করে কমিটিগুলোকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ফলে ইউনিয়ন পর্যায়ে তা পর্যবেক্ষণ করা যাবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু প্রবাসীরাই অবাধে বিচার করছে বিষয়টি এমন নয়। তাদের আত্বীয় স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশীরাও এসে মিশে যাচ্ছে তাদের সঙ্গে। হবিগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(বানিয়াচং ও আজমেরীগঞ্জ সার্কেল) শেখ মোহাম্মদ সেলিম বলেন, প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিনে রাখা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ কাজ করছে আমাদের মধ্যে। এসব ক্ষেত্রে নিজে যদি সচেতন না হয় তাহলে তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা খুব কষ্টসাধ্য ব্যপার হয়ে দাড়াবে। তবে দিনে দিনে মানুষ সচেতন হচ্ছে। আমরা যখন প্রথম কাজ করতে যাই কেউ আমাদের সহযোগিতা করতো না, সেটা এখন করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় স্তরে আছে। এখনো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে (কমিউনিটি) সংক্রমণ সেইভাবে শুরু হয়নি। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হলে তা হবে তৃতীয় স্তরে। ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ এখন সংক্রমণের তৃতীয় স্তরে রয়েছে। যদি সারা দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সংক্রমণ ঘটে, তখন তা হবে চতুর্থ স্তরে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া শুরু হয় চলতি বছরের ২১শে জানুয়ারি থেকে। তখন থেকে এই পর্যন্ত প্রায় সাত লাখেরও বেশি লোক বাংলাদেশে এসেছেন। এসব প্রবাসীদের খুব অল্প সংখ্যকই তাদের করোনা পরিক্ষা করিয়েছে। এদিকে রোগতত্ত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৭টি হটলাইন চালু করেছে। সেখানে টেলিফোন করে কথা বললে অপরপাশ থেকে দু্থটি প্রশ্ন করা হয়, সমপ্রতি বিদেশ থেকে এসেছেন কিনা, বা বিদেশ থেকে আসা কারও সংস্পর্শে ছিলেন কিনা? এই দু্থটি ঘটনা না ঘটলে শরীরে জ্বর বা কাশি থাকলেও এখন নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন নেই বলে এমন পরামর্শ দেয়া হয় হট লাইন থেকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তদের উপ-পরিচালক ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, বিদেশ ফেরতদের নিয়ন্ত্রন করা খুব কষ্ট সাধ্য হয়ে দাড়িয়ে ছিলো। যদি তারা নিজেরা সচেতন না হয়, তাহলে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে। প্রশাসনের প্রতিটি স্তর থেকে তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারা তাদের মতো কাজ করছে। এদিকে ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীর হাতে দু’টি কোয়ারেন্টিনে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, সংক্রমণ ঠেকাতে কোভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে আসা লোকজন এবং বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এর মধ্যে েেদশে আসা প্রবাসীরা যেখানে অবস্থান করবেন, সেই এলাকার জেলা সিভিল সার্জন বা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দপ্তরে রেজিস্ট্রেশন করবেন। এর পর তিনি ১৪ দিন পর্যন্ত একটি আলাদা রুমে থাকবেন। ওই সময়ে চিকিৎসা নেয়া ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না।