ভার্চ্যুয়াল মিডিয়া ব্রিফিং : বড় সংকটের সতর্ক বার্তা সিপিডি’র

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতিতে বড় সংকটের সর্তক বার্তা দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। করোনা ভাইরাসকে ‘মানব ইতিহাসের ভয়াবহ সংকট’ উল্লেখ করে সংস্থাটি বলেছে, শুধু অর্থনীতি নয় দেশের সব সেক্টরেই বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে, উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানি, স্বাস্থ্য খাত, অর্থায়ন, পর্যটন, প্রবাসী আয়, রাজস্ব, অনানুষ্ঠানিক খাত, খাদ্য নিরাপত্তা এবং মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
গতকাল ‘করোনা ভাইরাসের স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি এবং করণীয়’ ভার্চ্যুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সিপিডি। করোনার প্রভাবের কারণে অতীতের মতো গণমাধ্যমকর্মীদের ডেকে সংবাদ সম্মেলন না করে সিপিডি ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে সিপিডি। সংস্থার বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সিপিডি’র কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
প্রবন্ধে সিপিডি জানায়, যেসব দেশে আমদানি-রপ্তানি করা হয় তার সবগুলোই করোনায় আক্রান্ত। ফলে সামগ্রিকভাবে বহি:খাতে যে পারফরম্যান্স তাতে সামনের দিনগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এছাড়া করোনার কারণে সৃষ্ট সামপ্রতিক বৈশ্বিক মহামারী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য একটি উদ্বেগজনক স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করেছে। বাংলাদেশও এখন এই ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে। স্বাস্থ্যখাত, বাণিজ্য, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, সরকারি ব্যয় ও মুদ্রানীতি- এসব খাত বিভিন্নমুখী ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বল্পমেয়াদি কিছু পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছে সিপিডি। রিকশাচালক, দরিদ্র দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য খোলাবাজারে খাদ্যপণ্য (চাল, ডাল ইত্যাদি) বা ওএমএস চালুর পক্ষে সিপিডি। ওষুধসহ জরুরি পণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেয়া দরকার বলেও সংস্থাটি অভিমত দেয়। এর মোকাবিলায় সরকারকে লক্ষ্যনির্দিষ্ট সমপ্রসারণধর্মী পদক্ষেপগ্রহণ করতে হবে। এর পাশাপাশি রাজস্ব সংগ্রহের অবস্থা ভালো নয়। কর-জিডিপি হার এখন ৮.৯ শতাংশ। রপ্তানি কমছে, আমদানিও কম। উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে কারণ উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। প্রবাসী আয় ভালো হলেও সেটিও এখন কমে আসবে। সিপিডির অনুমান, চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতিও ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এমন বাস্তবতায় ভর্তুকি ও প্রণোদনা ব্যবস্থাপনায় পুনর্বিন্যাস আনা দরকার বলে মনে করে সিপিডি। সংস্থাটির মতে, করোনার কারণে যারা প্রকৃতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তারাই যেন ভর্তুকি ও প্রণোদনা পায়। সিপিডি বলেছে, টাকা দিতে না পারলেও আগামী ৩০শে জুন পর্যন্ত খেলাপি গ্রাহক হিসেবে গণ্য হবেন না, বাংলাদেশ ব্যাংকের সামপ্রতিক এই প্রজ্ঞাপন ভালো হলেও ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা যাতে সুযোগটি নিতে না পারেন, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
গবেষণা সংস্থাটি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, কানাডাসহ ইউরোপের অনেক দেশ করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশগুলোতে পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। ফলে চলতি অর্থবছরে পোশাক খাত তথা রপ্তানি আয়েও ধাক্কা আসতে পারে। আবার অনেক ব্যবসায়ী নতুন করে বিনিয়োগে আসবেন না। এতে করে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাবে। সমপ্রসারণমুখী মুদ্রানীতি, অগ্রাধিকার পুনর্বিবেচনা স্বাপেক্ষে রাজস্ব ও সরকারি ব্যয় ও খাতভিত্তিক বরাদ্দের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। একই সঙ্গে চিকিৎসার জন্য বর্তমানে প্রয়োজনীয় ওষুধ, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, মেডিকাল যন্ত্রপাতি প্রয়োজন মাফিক দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। করোনার কারণে নগদ প্রণোদনার বাড়তি চাহিদা বাজেটের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দের অগ্রাধিকারসমূহ পুণর্বিন্যাস করে করোনার ঝুঁকি সামাল দেয়া যেতে পারে। ফাহমিদা খাতুন তার উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন, বর্তমান প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে এমনিতেই, ২০১৯ অর্থবছরে মোট রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা হবে বলে অনুমিত হয়, আর এর সঙ্গে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে অতিরিক্ত অর্থ যোগ করলে এই ঘাটতি আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ মহামারির ফলে তৈরি পোশাক খাত, চামড়া শিল্প, পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়া শুরু হয়েছে। এসব খাতের উদ্ভুত ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা প্যাকেজ বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রেমিটেন্স ২০১৯ সালে ভালো ছিলো। কিন্তু আগামীতে রেমিটেন্সেও নেতিবাচক প্রভাবের সম্ভাবনা রয়েছে। সরবরাহের সমস্যা দেখা দিয়েছে। সরবরাহের যে শৃঙ্খলা সাপ্লাই চেইন, সেখানে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যেক্তারা বেশি সমস্যায় পড়েছে। তাদের প্রতি সরকারের বিশেষ নজর দিতে হবে। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, করোনা আতঙ্কের আগে থেকেই পুঁজিবাজারের অবস্থা এমনিতেই টালমাটাল। তার সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে কারোনা ভাইরাস। তাতে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সাময়িকভাবে কয়েকদিন লেনদেন বন্ধ রাখার যেতে পারে।