কারাগারে ৮৯,৬০০ বন্দি, করোনা নিয়ে সতর্কতা

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ করোনা ভাইরাসে দেশের ৬৮টি কারাগারে নেয়া হয়েছে সতর্কতা। এসব কারাগারে অবস্থানরত ৮৯ হাজার ৬০০ বন্দির জন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। কারা কর্তৃপক্ষ দেশের ১৩টি কেন্দ্রীয় ও ৫৫টি জেলা কারাগারে থাকা নতুন বন্দিদের জন্য আলাদা কোয়ারেন্টিনের উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন মামলায় যেসব নতুন হাজতি কারাগারে আসছেন তাদের কারা কর্তৃপক্ষ আলাদা ওয়ার্ডে রাখার ব্যবস্থা নিয়েছে। কারাগারে আসা নতুন কোন বন্দি যদি জ্বর ও ঠান্ডা জনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তাদের সরাসরি কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বন্দিরা করোনা ভাইরাস আক্রান্ত না হন সেই জন্য কারারক্ষীরা সতর্ক রয়েছে।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কারা অধিদপ্তর থেকে প্রতিটি কারাগারে করোনা ভাইরাস মোকাবিলার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিদেশ ফেরত দর্শনার্থীদের সঙ্গে কোন বন্দিকে দেখা করতে দেয়া হবে না। এছাড়াও করনো ভাইরাসের কারণে মানবিক বিবেচনায় অসুস্থ ও বয়স্ক বন্দিদের মুক্তির বিষয়টি আলোচনাধীন আছে।
এই মহামারি যাতে কারাগারে ছড়িয়ে না পড়তে পারে এজন্য ইরানসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশ কারাগারকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। একাধিক দেশে কারাগারের অভ্যন্তরে দাঙ্গাও সৃষ্টি হয়েছে। কারা অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কারা মহা-পরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেন জানান, ‘করোনা ভাইরাস যাতে কারাগারে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য আমরা শুরু থেকে সতর্কতা অবলম্বন করছি। প্রত্যেকটি কারাগারে উদ্ভুত পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে তার নিদের্শনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা বিষয়টি সার্বক্ষনিক মনিটরিং করছি। করোনা ভাইরাসের জন্য মানবিক কারণে অন্যান্য দেশের মতো অসুস্থ ও বয়স্ক বন্দিদের মুক্তি দেয়ার কোন উদ্যোগ রয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে এ নিয়ে আলোচনা চলছে বলে তিনি জানান। ওদিকে, এই মহামারিতে অসুস্থ ও বয়স্ক বন্দিদের মুক্তি না দেয়ার সমালোচনা করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন জানান, ‘দেশে ও বিদেশে মহামারি আকারে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। একারণে অনেক দেশ অতি গুরুতর অপরাধে দন্ডিত নয়, এমন বয়স্ক ও অতি অসুস্থদের মুক্তি দিচ্ছে। এটা মানবাধিকার নয়, মানবতার বিষয়। কিন্তু, আমাদের দেশে দেখতে পাচ্ছি, একজন বয়স্ক সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে এখনো জেলে রাখা হয়েছে। কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চীন থেকে যখন করোনা ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো তখন থেকেই কারা কর্তৃপক্ষ সতর্কতা অবলম্বন করেছে। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে এই ভাইরাস যাতে কারাগারের বন্দিরা আক্রান্ত না হতে পারে সেক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষ সতর্কতা জারি করে। কারারক্ষীদের এই বিষয়ে বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা নেয়া হয়। ছবি বা চিহ্ন সংবলিত বিভিন্ন নির্দেশিকা তৈরি করেও সব কারাগারে তা সরবরাহ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রত্যেকটি কারাগারের মূল ফটক ও ওয়ার্ডগুলোতে সাবান ও হান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাখা হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। কারাগারগুলোতে সরবরাহও করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্প্রে। সূত্র জানায়, কারাগারে যেসব নতুন বন্দি আসছেন তাদেরকে আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। ১৪ দিন পর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তাদের অন্য ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বন্দিদের এখন আর আদালতে হাজির করা হচ্ছে না। সূত্র জানায়, দুইজন ছাড়া বন্দির স্বজনরা কারাগারে সাক্ষাৎ করতে পারবেন না। এছাড়াও বিদেশ ফেরত কোন সাক্ষাৎপ্রার্থী কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেনা বলে নিদের্শণা জারি করা হয়েছে। কারাগারে ডিউটি অফিসার ও বন্দিদের ওয়ার্ডগুলো প্রতিদিন ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ধোয়া হচ্ছে। বন্দিদের জন্য যাতে খাবার শক্তভাবে রান্না করা না হয় সেক্ষেত্রে আলাদা নিদের্শনা দেয়া হয়েছে।
কারাগারের এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা জানান, বন্দিদের শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়ের জন্য ইনফা রেড থার্মোমিটার কেনা হচ্ছে। থার্মাল স্ক্যানার কেনার বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। আর করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হচ্ছে। তাই ইনফা রেড থার্মোমিটার দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়া হবে। কারাগারে যারা জ্বরে পড়ছেন তাদের সঙ্গে কোন বন্দি ছিলেন তারাও রয়েছেন নজরদারির আওতায়। সূত্র জানায়, চীনের দুই নাগরিক বাগেরহাট কারাগারে আছেন। তারা জালিয়াতির মামলায় কারাগারে আছেন। তাদের আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। তাদের মুখের লালা ইতিমধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে। সূত্র জানায়, জনসমাগমে করোনা ভাইরাস বেশি ছড়িয়ে পড়ে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। কারাগারে এমনিতেই অনেক বন্দি থাকেন। তাই কারারক্ষীরা চেষ্টা করছেন যাতে কোন বন্দির দ্বারা কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত না হন।