একের পর এক স্থগিত হচ্ছে অর্ডার

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ করোনা ভাইরাসের কারণে একের পর এক অর্ডার স্থগিত করেছে পোশাক খাতের তিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে এইচঅ্যান্ডএম, টেসকো ও এমঅ্যান্ডএসের মতো বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছে। এছাড়া আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো লকডাউন ঘোষণা করছে। ভাইরাসটির কারণে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। জার্মানিও ধুঁকছে। আর বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করায় পোশাকের চাহিদাও কমে গিয়েছে। অনেক পোশাকের ব্র্যান্ড তাদের শত শত বিক্রয়কেন্দ্র ঘোষণা দিয়ে বন্ধ রেখেছে।
যার ফলে এরই মধ্যে দেয়া ক্রয়াদেশগুলোর পরিমাণ কমাচ্ছেন বা চলমান ক্রয়াদেশগুলোর উৎপাদন থেকে বিরত থাকতে বলছেন। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে নতুন রপ্তানি আদেশ না দেয়ার কথা জানাচ্ছেন।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্যমতে, ২০ প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১ কোটি ৭২ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যতের ক্রয়াদেশও বাতিল করছে। তবে ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠান চলমান ক্রয়াদেশ বাতিল করে দিচ্ছে। ইউরোপের ক্রেতারাই মূলত ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারাও সেই পথে হাঁটতে পারেন বলে সূত্র জানায়। বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, শুধুমাত্র দুই-তিনটি প্রতিষ্ঠান নয়, বেশিরভাগ ক্রেতারা ক্রয় আদেশ স্থগিত করছে। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের কাছ থেকে চলমান ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিলের খবর আসছে। শিগগিরই সংগঠনের পক্ষ থেকে স্থগিত হওয়া ক্রেতাদের একটি তালিকা তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, এমন সময়ে অর্ডার বাতিল হচ্ছে যখন সামনে ঈদ। এ অবস্থায় তৈরি পোশাক খাত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বলতে পারছি না।
এদিকে পোশাক রপ্তানির বড় বাজার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় আরো ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, একের পর এক চলমান ক্রয়াদেশ স্থগিত করছে ক্রেতারা। বাতিলের সংখ্যাও বাড়ছে। নতুন ক্রয়াদেশও আসছে না। এমনটা চলতে থাকলে কারখানা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। আরেক উদ্যোক্তা বলেন, ক্রেতারা একের পর এক ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল করছে। নতুন ক্রয়াদেশ দিচ্ছে না। অবস্থা যে পর্যায়ে যাচ্ছে, তাতে বড় কারখানায় দুই মাস পর কোনো কাজ থাকবে না। ছোট ও মাঝারি কারখানা তার আগেই বসে যাবে। করোনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিজেদের সদস্যের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশের তথ্য নিচ্ছে পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
বিজিএমইএ’র বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, সর্বশেষ ৪ ঘণ্টায় বিজিএমইএর সদস্য ২০ প্রতিষ্ঠানের ১ কোটি ৭২ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। স্থগিত হয়েছে ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশ। ২০ প্রতিষ্ঠানের কারখানাগুলোর মধ্যে আছে আমান গ্রাফিকস অ্যান্ড ডিজাইনস, এসকোয়্যার নিট কম্পোজিট, আমান নিটিং, খানটেক্স ফ্যাশনস লিমিটেড, মেহনাজ স্টাইলস অ্যান্ড ক্রাফট, বিটপি, ডেকো লিগ্যাসি গ্রুপ, এসএফ ডেনিম, ভার্সেটাইল অ্যাটায়ার, অ্যামেজিং ফ্যাশনস, শাইনেস্ট অ্যাপারেলস, এপেক্স হোল্ডিংস, রুমানা ফ্যাশন, স্কাইলাইন গার্মেন্টস, ক্রসওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ, নিট এশিয়া, তুর্কি ফ্যাশনস, কে গার্মেন্টস, সালেক টেক্সটাইল, আলটিমেট ফ্যাশন, ডেনিম এশিয়া, মোটেক্স এপিএস ও মোটেক্স ফ্যাশন।
জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো বাংলাদেশি পোশাকের বড় বাজার। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে ৬১.৯১ শতাংশ বা ২ হাজার ১১৩ কোটি ডলারের পোশাকের গন্তব্য ছিল ইইউভুক্ত দেশ। আর যুক্তরাষ্ট্রে গেছে ৬১৩ কোটি ডলারের পোশাক। নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ইউরোপের ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত আমাদের সদস্য কারখানার ৭৩ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ স্থগিত করছে। আশঙ্কা করছি, সেটি ১ কোটি ডলারে চলে যাবে। আমার পোল্যান্ডের এক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান দু’দফার রফতানি আদেশ বাতিল করেছে। এরমধ্যে একটি আদেশ ছিল ২ লাখ ২০ হাজার ডলারের। আরেকটি আদেশ ছিল ২ লাখ ডলারের। তিনি জানান, করোনার কারণে এখন প্রতিদিন, প্রতি ঘণ্টায় রপ্তানি আদেশ বাতিল বা স্থগিতের মেইল পাচ্ছেন গার্মেন্ট মালিকরা। এদিকে শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনের আন্তর্জাতিক জোট ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন (সিসিসি) পোশাকশ্রমিকের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার ওপর করোনা ভাইরাসের প্রভাব সীমিত পর্যায়ে রাখতে ক্রেতাদের জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে সিসিসি বলেছে, করোনার কারণে বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ ও চাহিদা কমে যাওয়ায় ক্রেতারা ক্রয়াদেশ হ্রাস করতে থাকলে অনেক কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ হতে পারে। সেই পরিস্থিতিতে শ্রমিকের মজুরি নিয়মিত পরিশোধের বিষয়টি ক্রেতাদের নিশ্চিত করতে হবে।