কোয়ারেন্টিন আইন ভাঙায় কারাগার ডাকছে ইয়োভিচকে!

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ ফুটবলের এক মহাতারকার দিন কাটছে কারাগারে। আরেকজন এখনও যিনি উদীয়মান তারকা, অবশ্যই মহাতারকা হয়ে ওঠার মতো প্রতিশ্রুতিশীল, তাকেও কারাগার ডাকছে হাতছানি দিয়ে। ব্রাজিলিয়ান মহাতারকা রোনালদিনহো আসুনসিয়নের কারাগারে বন্দি জাল পাসপোর্টে প্যারাগুয়েতে অনুপ্রবেশের অপরাধে। আর সার্বিয়ার উদীয়মান তারকা লুকা ইয়োভিচ কারাগারে যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন ভিন্ন কারণে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে তার বিরুদ্ধে সার্বিয়ান সরকারের কোয়ারেন্টিন আইন ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে।
বেচারা ইয়োভিচ! রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাবের অনুমতি নিয়েই স্পেন থেকে বেলগ্রেড এসেছেন। বিদেশ থেকে এলেই কোয়ারেন্টিনে যেতে হবে, এই আইন মেনে বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু হঠাৎই একদিন দেখা গেলো ইয়োভিচ বেলগ্রেডের রাস্তায় হাঁটছেন। সংবাদমাধ্যমের চোখ ফাঁকি দিতে পারেননি। ফলাও করে প্রচার হয়ে গেল তার অপকীর্তি। পুলিশি তদন্তেও ধরা পড়ে যায় ইয়োভিচ কোয়ারেন্টিন আইন মানেননি। খবরে প্রকাশ, বেলগ্রেডের মডেল বান্ধবী সোফিয়া মিলোসেভিচের জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছিলেন।
সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনা বার্নাবিচ ঝাঁজালো কণ্ঠে সমালোচনা করেছেন ইয়োভিচের, ‘দুভার্গ্যজনকভাবে আমাদের ফুটবল তারকারা এখানে নেতিবাচক উদাহরণ সৃষ্টি করছেন। তারা কোটি কোটি টাকা রোজগার করেন, কিন্তু দেশে ফিরে স্বেচ্ছায় আলাদা থাকার নির্দেশ মানেন না।’ সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার ভুচিচ তো আরেক কাঠি বাড়া, জেলের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন ইয়োভিচকে, ‘সে যদি তার অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে যায়, তাহলে তাকে গ্রেফতার করা হবে।’ ক্ষুব্ধ ভুচিচ আরও বলেছেন, ‘ আমার মনে হয় সে যা করেছে সেজন্য তার ক্ষমা চাওয়া উচিত। কিন্তু আমি একটি বিষয় তাকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমার জনসাধারণের জীবন তার কোটি টাকার চেয়েও মূল্যবান।’
ইয়োভিচ নিজের আত্মোপলিব্ধর কথা বলেছেন, কিন্তু সুকৌশলে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন, ‘আমি খুব দু:খিত যে আইসোলেশনে কীভাবে থাকতে হবে কিছু মানুষ সে ব্যাপারে সঠিক নির্দেশনা না দিয়ে তাদের দায়িত্বটা পালন করেননি।’ ইয়োভিচকে নিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশই জটিল হয়ে পড়ছে সার্বিয়ায়। তাই আবারও মুখ খুলেছেন গত মৌসুমে ৬ কোটি পাউন্ড ট্রান্সফার ফিতে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়া স্ট্রাইকার। নিজের পক্ষে সাফাই-ই গেয়েছেন ২২ বছর বয়সী ফুটবলার, ‘ প্রথমত আমি দু:খিত যে এই সময়ে আমিই হয়ে উঠেছি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। দু:খিত যে যারা এই সংকটময় মুহূর্তের নায়ক অর্থাৎ সেই সব চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের নিয়ে না লিখে আমাকে নিয়েই অবিরাম লেখালেখি হচ্ছে।’ ইয়োভিচ মাদ্রিদ থেকে আসা এবং বেলগ্রেড শহরে তাকে ঘুরে বেড়াতে দেখার একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, ‘ মাদ্রিদে আমার কোভিড-১৯ পরীক্ষা নেগেটিভ এসেছে। সুতরাং আমি সিদ্ধান্ত নিই যে আমাদের জনগণের পাশে দাঁড়ানো এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য সার্বিয়া যাবো এবং অবশ্যই ক্লাবের অনুমতি নিয়ে। সার্বিয়া আসার পরও আমার পরীক্ষা হয়েছে এবং সেটির ফল নেগেটিভ পাওয়া গেছে।’
‘স্পেনে আপনাকে সুপার মার্কেট বা ফার্মেসিতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, কিন্তু এখানে নয়।’ ইয়োভিচ পরের বাক্যে ক্ষমাও চেয়েছেন, ‘ আমি যদি কারোর ক্ষতি করে থাকি বা কাউকে বিপদে ফেলি, সবার কাছে ক্ষমা চাই। আশা করি আমরা সবাই মিলে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো।’ এদিকে পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠায় ইয়োভিচের বাবা মিলান ইয়োভিচ খুব বিচলিত। ছেলের পক্ষে দাঁড়িয়ে নানা যুক্তি ও ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তিনি, ‘ আমি ঠিক জানি না আমার ছেলের বিরুদ্ধে একটা সংগঠিত প্রচারণা চলছে কি না। মানুষ যা-ই ভাবুক না কেন, আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে সে সব আইন মেনেই চলছে।’ নভোস্তি পত্রিকায় ইয়োভিচ সিনিয়র আরও বলেছেন, ‘সে তার ঘর ছেড়ে বাইরে যায়নি, শুধু খাবার কেনার জন্য একবার সুপার মার্কেটে গিয়েছিল। এটি আমি জেনেছি আমার মেয়ের কাছ থেকে, কারণ সে তখন তার ভাইয়ের সঙ্গে ছিল। সব সময়ই আমরা ছেলে-মেয়েদের খবরাখবর রাখি, তারা কখনও মিথ্যে বলবে না।’
ইয়োভিচ সিনিয়র আরও বলেন, ‘আমি যদি তাদের ঠিকভাবে মানুষ না করতাম তাহলে তারা আজকের এই পর্যায়ে আসতো না। মনে হচ্ছে আমার ছেলেটা কাউকে খুন করে ফেলেছে।’ গত মৌসুমে ইয়োভিচ ছিলেন ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের চরম আকর্ষণীয় এক চরিত্র। এইনট্রাখ্ট ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে বেনফিকায় যাওয়ার পর তাকে নিয়ে তো তুমুল শোরগোল পড়ে যায়। বার্সেলোনা তাকে পেতে রীতিমতো মরিয়া হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ‘বার্সেলোনায় কখনও যাবো না’ বলে ইয়োভিচ যোগ দেন কাতালানদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ পর্যন্ত রিয়ালে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। ইয়োভিচ আবার আলোয় এলেন। তবে বড্ড ভুল এক কারণে!