যশোরে কলেজছাত্রকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি : ৬ দুর্বৃত্ত আটক, একজনের স্বীকারোক্তি

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর সরকারি সিটি কলেজের ছাত্র সৈয়দ শামীমুজ্জামানকে (২৫) গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অপহরণ করে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে দুর্বৃত্তরা। মারধরের পর ছুরির ভয় দেখিয়ে তার এক ভাইয়ের কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে সাড়ে ৩ হাজার টকাও আদায় করে তারা। পরে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে পুলিশ অপহৃত ছাত্রকে উদ্ধার এবং ঘটনার সাথে জড়িত ৬ দুর্বৃত্তকে হাতেনাতে আটক করেছে। যশোর টাউন হল ময়দান থেকে ওই ছাত্রকে উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া গ্রামের মৃত সৈয়দ মান্নু আলীর ছেলে সৈয়দ শামীমুজ্জামান যশোর সরকারি সিটি কলেজে মাস্টার্সে পড়েন। লেখাপড়ার সুবিধার্থে তিনি সদর উপজেলার হামিদপুরের জনৈক আকবর আলীর বাড়িতে ভাড়া থাকেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে তিনি বিমান বন্দর রোডে আসমা নামে পরিচিত এক যুবতীর সাথে দেখা করতে যান। এরপর তার সাথে সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ইজিবাইকযোগে হামিদপুরে বাসায় ফিরছিলেন। পথে ঝুমঝুমপুরস্থ বিজিবি ক্যাম্পের সামনে পৌঁছালে ৪টি মোটরসাইকেলে দুবর্ৃৃত্তরা এসে গতিরোধ করে। এ সময় তারা তাকে ইজিবাইক থেকে নামিয়ে অপহরণ করে। মোটরসাইকেলে উঠিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় যশোর টাউন হল মাঠের পূর্ব পাশের পুকুরপাড়ে। সেখানে আটকে রেখে দুর্বৃত্তরা তার কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকার করায় এ সময় দুর্বৃত্তরা তাকে চড়থাপ্পড় মারে এবং ছুরি দিয়ে ভয় দেখায়। ফলে প্রাণভয়ে সৈয়দ শামীমুজ্জামান মোবাইল ফোনে বিষয়টি তার বড় ভাই সৈয়দ সোহানকে জানান এবং তাকে টাকা দিতে বলেন। ভাইয়ের বিপদ শুনে সৈয়দ সোহান দুর্বৃত্তদের দেয়া ০১৮৩৭-৬৩২৬২৩ বিকাশ নম্বরে তাৎক্ষণিক ৩ হাজার ৪শ টাকা পাঠিয়ে দেন। কিন্তু এরপর সৈয়দ শামীমুজ্জামানকে দুর্বৃত্তরা ছেড়ে না দেওয়ায় বিষয়টি কোতয়ালি পুলিশকে জানান বড় ভাই সৈয়দ সোহান। পরে এ খবর পেয়ে কোতয়ালি থানা পুলিশের একটি টিম টাউন হল মাঠে অভিযান চালিয়ে অপহৃত সৈয়দ শামীমুজ্জামানকে উদ্ধার এবং ৫ অপহরণকারীকে হাতেনাতে আটক করে। এছাড়া আটক ৫ অপহরণকারীর স্বীকারোক্তিতে পুলিশ শহরে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত আরও একজনকে আটক করে।
আটক ৬ দুর্বৃত্ত হচ্ছে, যশোর শহরতলীর আরবপুর গোড়াপাড়ার মৃত আতিয়ার রহমানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম, জালাল উদ্দিনের ছেলে মেহেদী হাসান, মৃত শিপন দাসের ছেলে বাসুদেব দাস, শহরের রেলগেট পশ্চিমপাড়ার মৃত মনি মিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলাম, ঘোপ সেন্ট্রাল রোড কবরস্থান এলাকার সোবহানের ছেলে রাসেল ও চৌগাছা উপজেলার লস্করপুর পশ্চিমপাড়ার মুঞ্জুর আলীর ছেলে আবু সাঈদ। এ ঘটনায় উল্লিখিত ৬ জনসহ ৯ জনকে আসামি করে কোতয়ালি থানায় মামলা করেছেন সৈয়দ শামীমুজ্জামান। অপর ৩ আসামি হচ্ছে, শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়া কবরস্থান এলাকার লাল মিয়ার ছেলে জাকির হোসেন, কারবালা রোডের রিমন হোসেন এবং আরবপুর কলুপাড়ার আমজাদ হোসেনের ছেলে রানা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালি থানা পুলিশের এসআই কামাল হোসেন জানান, আটক ৬ জনকে শুক্রবার তিনি আদালতে সোপর্দ করেছেন। এর মধ্যে রফিকুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাইফুদ্দিন হোসাইন তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।