আনিসুর হত্যাকাণ্ড : প্রেমিক রফিকুল স্বামীকে হত্যা করেছেন আদালতে সাবিনা খাতুনের স্বীকারোক্তি

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়া মাঠপাড়ায় ডাব বিক্রেতা আনিসুর রহমান খুনের ঘটনায় আটক তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রেমিক রফিকুল ইসলাম শ্বাসরোধে তার স্বামীকে হত্যা করেছেন বলে তিনি আদালতকে জানিয়েছেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাইফুদ্দিন হোসাইন তার জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বয়ারডাঙ্গী গ্রামের আকবর মোল্লার মেয়ে সাবিনা খাতুন জানিয়েছেন, ১৫ বছর আগে কেশবপুর উপজেলার কুড়খালী গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে আনিসুর রহমানের সাথে তার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তার সন্তান না হওয়ায় তিনি স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার স্বামী এতে সায় দেননি। ফলে তিনি বোনের একটি মেয়েকে এনে লালন করতে থাকেন। তিনি বলেন, বছরখানেক আগে তারা যশোর শহরের বারান্দী মাঠপাড়ার মীমের বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ৩ মাস আগে তার স্বামী আনিসুর রহমান ইটভাটায় কাজ করার জন্য ঢাকায় যান। কয়েকদিন পর যশোরে ফিরে এসে আবার নাটোরে যান ইটভাটায় কাজ করতে। তবে নাটোরে যাবার পর তার স্বামী সমিতির কিস্তির টাকা ঠিকমতো পাঠাতেন না। এরই মধ্যে সাথী নামে একজন প্রতিবেশী তাকে জানান, আনিসুর রহমান নাটোরে মনি নামে একটি নারীকে বিয়ে করেছেন। এ জন্য তিনি তাকে টাকা পাঠাচ্ছেন না। ফলে সমিতির (এনজিও) কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। আর এই সুযোগটি নেন পাশের ভাড়াটিয়া রিকশাচালক রফিকুল ইসলাম। তিনি (রফিকুল ইসলাম) তাকে কিস্তির টাকা পরিশোধ করে দেওয়ার প্রলোভন দেখান। এছাড়া তাকে বিয়ে করার স্বপ্নও দেখানো হয়। এরই মধ্যে এলাকার সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত শিমুল ও রাসেল এসে তাকে রফিকুল ইসলামের সাথে সম্পর্ক রাখতে চাপ সৃষ্টি করেন। রফিকুল ইসলামের সাথে বিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরে তারা তার কাছ থেকে ২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। ফলে কিস্তির টাকার জন্য কোনো উপায় না পেয়ে তিনি রফিকুল ইসলামের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই সম্পর্ক শারীরিক পর্যায়ে গড়ায়। এরই মধ্যে গত ১৬ মার্চ তার স্বামী আনিসুর রহমান যশোরের বাসায় ফিরে আসেন। রফিকুল ইসলামের সাথে তার সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারায় তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। পরে শিমুল ও রাসেল এসে তার স্বামীর সাথে দেখা করে। এ সময় তারা সবকিছু মীমাংসা করে দেওয়ার কথা বলে তার স্বামীর কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। সাবিনা খাতুন আরও জানান, ১৭ মার্চ রফিকুল ইসলাম তার স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে রাতে তাকে দেখা করতে বলেন। কিন্তু রাতে তিনি স্বামীকে ঘুমের ওষুধ গোপনে খাওয়ার পর নিজেও খেয়ে নেন। তবে তিনি রাতে রফিকুল ইসলামের সাথে দেখা করেননি। পরদিন ১৮ মার্চ সকালে রফিকুল ইসলাম তাদের বাসায় আসেন। এ সময় তার হাতে ১২০ টাকা দিয়ে তাকে বাজার করতে পাঠিয়ে দেন রফিকুল ইসলাম। বাসায় তার স্বামীও ছিলেন। তিনিও তাকে বাজার করতে টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু বাজার করে বেলা ১১টার দিকে বাসায় ফিরে দেখতে পান রফিকুল ইসলাম তার স্বামীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর পালিয়ে গেছেন।