আরো তিনজন করোনায় আক্রান্ত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশে প্রতিদিনই করোনা রোগী শনাক্তের খবর দিচ্ছে সরকার। গতকালও করোনা ভাইরাসে দেশে নতুন করে আরো তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজন পুরুষ ও একজন নারী। তারা একই পরিবারের সদস্য। ইতালি ফেরত প্রবাসীর মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন তারা। সবমিলিয়ে দেশে এখন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ জনে দাঁড়ালো। আর মারা গেছেন একজন। গতকাল আইইডিসিআর’র মিলানায়তনে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য জানিয়েছেন। এই ব্রিফিং আইইডিসিআর’র পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা করার কথা থাকলেও তিনি নিম্ন রক্তচাপ সমস্যায় অসুস্থ বোধ করায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি মিডিয়ার সামনে কথা বলেন।
বাংলাদেশে প্রথম একজন করোনায় আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন। ১৮ই মার্চ তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইতালিফেরত করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে থাকায় একই পরিবারের এই তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন আক্রান্ত নারীর বয়স ৪২ বছর, পুরুষ একজনের বয়স ৬৫ বছর এবং অপরজনের বয়স ৩২ বছর। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশে কমিউনিটিতে এই ভাইরাসের সংক্রমন ঘটেনি। বিদেশ ফেরতদের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, একটি নির্দিষ্ট এলাকা থেকে বেশি আক্রান্তের খবর আসছে। তিনি জানান, আইসোলেশনে রয়েছেন ১৯ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিইনে ৪৩ জন। সুস্থ হয়েছেন তিনজন। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করানো হয়েছে ২৫টি। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩৬৬টি। ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআর-এ ফোন এসেছে ২৫ হাজার ৯১৬টি। এর মধ্যে করোনা সম্পর্কিত কল ৪ হাজার ৫০১টি। দেশে করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুতি প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে বেশ কটি মন্ত্রণালয় নিয়ে ব্রিফ করেছি। সতর্কতা মেনে চলছে না। কঠোরতা নেয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বার্তা দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ শুরু করেছে। কোয়ারেন্টিনের নিয়ম না মানলে ব্যবস্থা নেবে আইনশৃংখলা বাহিনী। সতর্কতার পত্র পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসক-নার্সদের উদ্দেশে বলেন, চিকিৎসক ভাইবোনদের অনুরোধ করব-এটা জাতীয় দুর্যোগ। ১০ লাখ পিপিই নিরাপত্তা সামগ্রী সরবরাহ করছি। জাতির স্বার্থে মানবতার স্বার্থে সেবা কাজ থেকে বিরত থাকবেন না। সেবা দেবেন। চিকিৎসক-নার্সদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে অধিদপ্তর।
অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের বিষয়টিকে সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখছে। সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কিট ও স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক-নার্স কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুসারে পার্সোনাল প্রটেকশন (পিপিই), কোনো কিছুরই অভাব হবে না। তিনি বলেন, রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভবনের দ্বিতীয় তলায় বাংলাদেশের ইতিহাসে জাতীয় কোনো দুর্যোগে সর্ববৃহৎ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষটি সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকছে। রাজধানীসহ সারা দেশে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো ক্ষেত্রেই অবহেলা দেখানো হচ্ছে না, বরং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, বরিশাল ব্যতীত দেশের বিভিন্ন বিভাগে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার পরীক্ষাগার রয়েছে। আমরা আগেও বলেছি প্রয়োজনে আইইডিসিআরের বাইরের ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা করা হবে। অনেকেই অনেক কথা বলতে পারেন, কিন্তু এই ল্যাবরেটরিগুলোতে নমুনা পরীক্ষার জন্য কিছুটা প্রস্তুতিরও প্রয়োজন রয়েছে। ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে ব্যাকআপ সুবিধার জন্য অতিরিক্ত ১৬টি পিসিআর মেশিনের ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয়েছিল। ইতিমধ্যে সাতটি মেশিন পাওয়া গেছে। তিনি জানান, প্রতিদিনই নমুনা পরীক্ষার জন্য কিট সংগ্রহ করা হচ্ছে। চীন থেকে ২/১ দিনের মধ্যে টেস্ট কিট ও পিপিই আসবে। গতকালই দুই হাজার কিট এসেছে। দ্রুত আরো এক লাখ কিট আনা হচ্ছে বলে জানান তিনি। রাজশাহীসহ যেখানে পিপিই চাওয়া হয়েছে সেখানে সাপ্তাহিক এবং এমনকি দৈনিক বাসে করে পাঠানো হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিএমএইচ-এ পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে করোনা রোগীরা। মিরপুর পরিবার পরিরকল্পনার মা ও শিশু একটি হাসপাতালকেও প্রস্তুত করা হচ্ছে করোনা রোগীদের জন্য। অন্য কোনো হাসপাতালে এ মুহূর্তে এই রোগী ভর্তি শুরু করার প্রয়োজন নেই। বিষয়টি সরজমিনে অধিদপ্তরের লোকজন গিয়ে দেখবে বলেও জানান তিনি। প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে উৎপত্তি হওয়া এই ভাইরাস বিশ্বের অন্তত ১৬৪টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে। ২ লাখের উপরে আক্রান্ত হয়েছে এ ভাইরাসে। মারা গেছে ৮ হাজারের বেশি। যে চীনে এই ভাইরাসের শুরু সেই দেশটি ৮০ দিনের মাথায় এই ভাইরাসটিকে পুরো নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে।