ভোট বন্ধে এখনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ইসি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২১ ও ২৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা-১০সহ ৫টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে এখনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এই সাংবিধানিক সংস্থাটি। তবে, জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে নির্বাচনি এলাকায় সভা, সমাবেশ, জমায়েত সম্ভব পরিহার করতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পরামর্শ দিয়েছে।
আগামী ২১ মার্চ গাইবান্ধা-৩, ঢাকা-১০ ও বাগেরহাট-৪ এবং ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, বগুড়া-১ ও যশোর-৬ সহ কয়েকটি উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পক্ষ থেকে এসব নির্বাচন স্থগিতের দাবি উঠলেও নির্বাচন কমিশন ভোট আয়োজনে এখনও অটল রয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) মুজিববর্ষ উপলক্ষে ইসির এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা নির্বাচন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেইনি। নির্বাচনের তো ব্যাপক প্রস্তুতি শেষের দিকে। আমাদের তো জীবনের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে না। আমি তো চলাচল করি, হাটে যাই, বাজারে যাই, নামাজে যাই, অফিসে যাই। করোনা কতখানি অ্যাফেক্ট (আক্রান্ত) করবে, সেটা আমরা বিশ্লেষণ করতে চাচ্ছি। পরিস্থিতি আমরা আরও একটা দুইটা দিন দেখবো। তখন দুটো (২১ ও ২৯ মার্চের নির্বাচন) নির্বাচনই বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।
প্রধান নির্বাচন কমিশনের এই অবস্থানের পরদিনই করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি নতুন ৪ জনসহ ১৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। করোনা সন্দেহে সারা দেশে হোম কোয়ারেন্টাইনের সংখ্যাও উল্লেখেযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের জনসমাগমকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় কমিশনার রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে এখনও অন্য কোনও সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করিনি। কোনও সিদ্ধান্ত থাকলে সেটা আমরাই জানিয়ে দিতাম। আমরা পরিস্থিতি অবজার্ভ করছি।
জানা গেছে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) মতামত চাইবে কমিশন। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে মতামত চাওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন একেবারেই কাছে চলে আসায় অন্তত: ঢাকা-১০সহ ২১ মার্চের নির্বাচনগুলো সম্পন্ন করতে চায় কমিশন। এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর পরিস্থিতি বিবেচনায় চট্টগ্রাম সিটিসহ ২৯ মার্চের নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে চিন্তা করবে। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বিবেচনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ কয়েকটি সংসদীয় আসনের ভোটগ্রহণ স্থগিতের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে আইইডিসিআরের মতামত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে বুধবার ইসি থেকে সব রিটার্নিং কমকর্তাদের চিঠি দিয়ে জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় রেখে প্রার্থীদের প্রচার চালানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন তফসিলভুক্ত নির্বাচন বন্ধ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগের পরামর্শ মতে জনস্বাস্থ্য নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে সভা, সমাবেশ, জমায়েত ইত্যাদি যতদূর সম্ভব পরিহার করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পরামর্শ দেওয়া হলো। ওই চিঠিতে প্রবাসীদের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণ দেশ থেকে আগত কোনও ভোটারকে নির্বাচন প্রচারণায় অংশ নিতে ও ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় সারাদেশে প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রম আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্থগিতের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। এ সময়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন সংক্রান্ত অন্যান্য সেবাও বন্ধ থাকবে। বুধবার কমিশন সচিবালয়ে এক বৈঠকে প্রাথমিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠ প্রশাসনের অনানুষ্ঠানিকভাবে এসব সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) এসব সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য কমিশনে তোলা হবে। এরপরই আনুষ্ঠানিক জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবা বন্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। অনেক প্রবাসী দেশে এসেছেন। এসব বিবেচনায় আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা বন্ধের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বৃহস্পতিবার কমিশন অনুমোদন করার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা, স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ ও অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।