বঙ্গবন্ধু ছিলেন পাশবিকতা বিরোধী এবং যে কোন জুলুমের বিরুদ্ধে একজন ঢাল : মোদি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিগত শতাব্দির এক মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার সমগ্র জীবন আমাদের সকলের জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা। তার ভাষায়- বঙ্গবন্ধু মানে এক সাহসী নেতা, একজন দৃঢ়চেতা মানুষ, একজন ঋষিতুল্য শান্তিদূত, ন্যায়, সাম্য ও মর্যাদা রক্ষাকর্তা। বঙ্গবন্ধু ছিলেন পাশবিকতা বিরোধী এবং যে কোন জোর-জুলুমের বিরুদ্ধে একজন ঢাল। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুক্তির মহানায়ক’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে দেয়া ভিডিও বার্তায় মঙ্গলবার তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি তার বক্তৃতার সূচনায় বাংলায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশকে ১৩০ কোটি ভারতীয়ের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানান। এরপর হিন্দিতে তার পুরো বক্তব্য দেন। বাংলা ভাষায় বক্তৃতার ট্রান্সক্রিপ্ট প্রচারিত হয়।
মোদি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (মহোদয়া) আমাকে ঐতিহাসিক ওই সমারোহে (১৭ই মার্চের বণাঢ্য উদ্বোধনীতে) অংশগ্রহণের জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের জন্য আমি যেতে পারলাম না। তারপর তিনি এই বিকল্প সুযোগ দিয়েছেন, এজন্য আমি ভিডিও’র মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছি। মোদি তার বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করে বলেন- ওই মহান নেতার ব্যক্তিত্বের গুণাবলী সেই সময় লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীকে বাংলাদেশের মুক্তির জন্য, প্রত্যেক সমস্যার মোকাবেলায় একটা নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চার করেছিল। মোদি বলেন, আজ আমার খুব ভালো লাগে যখন দেখি বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে দিন-রাত নিজেদের প্রিয় দেশকে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলতে কাজ করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবন, আজকের আন্তর্জাতিক পরিবেশে একবিংশতাব্দির বিশ্বের জন্য অনেক বড় বার্তা দেয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি দমনকারী অত্যাচারী শাসন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নস্যাৎকারী ব্যবস্থা, কীভাবে বাংলাভূমির সঙ্গে অন্যায় করেছে, মানুষের সর্বনাশ করেছে তা আমরা সবাই খুব ভালো করে জানি। সেই সময় যে ধ্বংসলীলা হয়েছিল, যে গণহত্যা হয়েছিল, তা থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনতে একটি ইতিবাচক এবং অগ্রগামী নির্মাণের জন্য বঙ্গবন্ধু নিজের প্রতিটি মূহুর্ত উৎসর্গ করে গেছেন। মোদি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্পষ্ট মত ছিল, যে কোনো দেশের উন্নয়নের ভিত্তি ঘৃণা এবং নেতিবাচক হতে পারে না। কিন্তু তাঁর এই ভাবনা, এই প্রচেষ্টা, কিছু মানুষের ভাল লাগেনি। আর একারণেই তাঁকে আমাদের মধ্য থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। নরেন্দ্র মোদি বলেন, বাংলাদেশ এবং আমাদের সকলের সৌভাগ্য যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা উপর ইশ্বরের আশীর্বাদ ছিল। তা না হলে হিংসা এবং ঘৃণার সমর্থকরা তো চেষ্টা কম করেনি। মোদি কোনো দেশের নাম মুখে না নিয়ে বলেন, আতঙ্ক এবং হিংসাকে রাজনীতি ও কূটনীতির হাতিয়ার করে তোলা, কীভাবে গোটা সমাজের, সমগ্র দেশের সর্বনাশ করতে পারে তা আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি। সন্ত্রাস ও হিংসার সমর্থকরা আজ কোথায়, কীভাবে আছে? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আজ বিশ্ববাসী দেখছে বাংলাদেশ কোন উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর প্রেরণায় এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ যেভাবে অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং উন্নয়নমুখী নীতিমালা অনুসরণ করে এগিয়ে চলেছে তার ভূয়সী প্রশংসা করে মোদি বলেন, অর্থনীতি থেকে শুরু করে অন্যান্য সামাজিক সূচক কিংবা ক্রীড়াক্ষেত্র দক্ষতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, মাইক্রোফাইন্যান্সের মত এমন অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। আমি আনন্দিত যে গত পাঁচ-ছয় বছরে ভারত ও বাংলাদেশ তার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি যুগান্তকারী অধ্যায় রচনা করেছে। আমাদের দুই দেশের অংশীদারিত্বকে নতুন মাত্রা পেয়েছে। উভয় দেশের ক্রমবর্ধমান আস্থার কারণেই আমরা স্থল ও সমুদ্র সীমানার মতো জটিল সমস্যাগুলি সহজে সমাধানে সফল হয়েছি। মোদি বলেন, আজকে বাংলাদেশ কেবল দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার নয়, সবচেয়ে বড় উন্নয়নের সঙ্গীও। ভারতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ বাড়ি-ঘর ও কারখানাকে আলোকিত করছে। ‘ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’ এর মাধ্যমে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। সড়ক-রেলপথ-আকাশপাথ-জলপথ কিংবা ইন্টারনেট- এমন অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা দুই দেশের মানুষকে আরো বেশি সম্পৃক্ত করেছে। মোদি বলেন, আমাদের যৌথ ঐতিহ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, লালনশাহ, জীবনানন্দ দাশ এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো মনীষীরা। এই ঐতিহ্যকে বঙ্গবন্ধুর প্রেরণা, তার উত্তরাধিকার আরও ব্যাপকতা দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং মূল্যবোধের সঙ্গে ভারত সর্বদা সংযুক্ত ছিল। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার গভীর সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে এই অভিন্ন ঐতিহ্যের ভিত্তিতে। আমাদের ঐতিহ্য, আত্মিক বন্ধন, বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ এই দশকেও উভয় দেশের অংশীদারিত্ব, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মজবুত ভিত্তি। মোদি তার ভিডিও বার্তার সমাপনীতে বলেন, আগামীবছর বাংলাদেশের মুক্তির ৫০ বছর পূর্ণ হবে। আর তার পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হবে। আমার বিশ্বাস এই উভয় পর্যায়ে আমাদের ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক-বন্ধুত্ব নতুন উচ্চতায় পৌছাবে।