সব স্তরে ভোটের মাধ্যমেই নেতৃত্ব নির্বাচন করবে বিএনপি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ২০১৯ সালের এপ্রিলে দলের সব পর্যায়ে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের পরিকল্পনা করেছিল বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই পরিকল্পনা এখন বাস্তবায়ন করতে চায় দলটি। শনিবার (১৪ মার্চ) রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। বৈঠকে অংশ নেওয়া স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের সব স্তরে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়। এই পরিকল্পনা থেকে ঢাকা মহানগর কমিটি নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেন্দ্রে কেন্দ্রে এজেন্ট না থাকার বিষয়টি নিয়ে নেতাদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে খুব দ্রুত ঢাকার দুটি কমিটিকে ঢেলে সাজানোর পক্ষে মত দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।
এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ‘দলের সর্বস্তরে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা সব কমিটিই ভোটের মাধ্যমে করার চেষ্টা করবো।’ ঢাকার কমিটির বিষয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ‘ঢাকার কমিটি ভাঙা হবে না, তবে ঢেলে সাজানোর পক্ষে মত এসেছে। এটাই এখন কীভাবে করা যায়, তা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক করবেন।’ স্থায়ী কমিটির আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জানান, শনিবার রাতের বৈঠকে করোনা ভাইরাস ও ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আরও বেশি করে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম কীভাবে নেওয়া যায়, এ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা করোনা ভাইরাস। এটা নিয়ে ইতোমধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রচারপত্র বিলি শুরু করেছেন। এটাকে কীভাবে আরও বড় পরিসরে করা যায় এবং আর কী কী করণীয় হতে পারে, তা নিয়ে কথা হয়েছে।’ বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, দল পুনর্গঠন ও অঙ্গসংগঠনগুলোকে সক্রিয় করতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চালু করার পক্ষে গত বছরের মার্চে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে পরামর্শ দেন কয়েকজন জ্যেষ্ঠ ও মধ্যম সারির নেতা। সরাসরি কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হলে দলে ‘কর্মমুখরতা’ চালু হবে এবং রাজনীতির প্রতি তরুণ শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হবেন, এমন পরামর্শও ছিল শুভানুধ্যায়ীদের তরফে। বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, প্রায় ১৪ বছর পর গত শুক্রবার (১৩ মার্চ) বগুড়ায় দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া পৌর বিএনপির কমিটি গঠন হয়েছে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বগুড়া সদর আসনের এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর আমরা বগুড়ায় কাউন্সিল করেছি। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব গত বছরই নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন কেবল নেতা নির্বাচন নয়, নেতাকর্মীরা নিজেদের আইডেন্টিটি পান। এই আইডেন্টিটি রাজনীতিতে খুব দরকার। গত কয়েক বছরে দলের নেতাকর্মীরা হামলা-মামলায় বিপর্যস্ত, তবু দুপচাঁচিয়া উপজেলার কাউন্সিলে বাঁধভেঙে কর্মীরা এসেছেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, ঢাকায় আন্দোলন-কর্মসূচি সফল করতে মহানগরীর সব কমিটি পুনর্গঠনের কোনও বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে বিভিন্ন থানায় আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। এ বছরই বিভিন্ন কমিটি কাউন্সিলের উদ্যোগ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে গাবতলী পৌর মেয়র, পৌর আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা পৌর এলাকার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করেছি। এই কমিটির মাধ্যমে কাউন্সিলর করা হবে। এরপর পৌর কমিটির কাউন্সিল হবে।’ তবে, ঢাকা দক্ষিণ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম রাসেল বলেন, ‘মহানগর দক্ষিণে একটি কমিটিও ভোটে হয়নি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে রাতারাতি করা হয়েছে। আমি জেলে ছিলাম, জানতাম না। এমনকি সভাপতি-সেক্রেটারির বাইরে অন্য কাউকে এ উদ্যোগে নেওয়া হয়নি।’ রফিকুল ইসলাম জানান, ডিএসসিসিতে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি হয়েছে। কিন্তু কোনও ভোট হয়নি।
কেন এমন হয়েছে, বিষয়টির ব্যাখ্যা করেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবুন নবী খান সোহেল। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন কমিটিগুলো করি, তখন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম চলছিল। ওই সময় আমরা তো ১০ জন একত্রে বসতেও পারিনি। আর দ্বিতীয়ত, সরাসরি ভোটের নির্দেশনা এসেছে ২০১৯ সালে। ফলে, আমাদের সুযোগ হয়নি।’ তবে, কিছু ওয়ার্ড ও ৩টি থানা কমিটি গঠন এখনও বাকি বলে জানান দলের কেন্দ্রীয় এই যুগ্ম মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের সামনে সুযোগ এসেছে। আমরা চাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কমিটি করতে। এটা সবচেয়ে বেস্ট পদ্ধতি। বাকি কমিটিগুলোও আমরা বসবো, সবার মতামত নিয়ে করবো।’