করোনা মোকাবিলায় সার্ক নেতাদের কনফারেন্স : তহবিল গঠনের প্রস্তাব মোদির

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর ভয়াবহতা মোকাবিলায় সার্ক তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সার্ক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের নিয়ে আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্সে মোদি ওই প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে ওই কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি ফান্ডে ভারতের পক্ষ থেকে প্রাথমিক অনুদান হিসাবে ১০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেদের সহযোগিতা ও সক্ষমতা বিনিময় এবং সার্ক স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের কনফারেন্সে আয়োজনের প্রস্তাব করেন। ভিডিও কনফারেন্সে অন্যান্য রাষ্ট্র, সরকার প্রধান এবং প্রতিনিধি নিজ নিজ প্রস্তাব ও মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আহ্বানে রোববার দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) নেতাদের ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতিনিধি হিসাবে তার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা (প্রতিমন্ত্রী) জাফর মির্জা অংশ নেন। কনফারেন্সে পারস্পরিক সহযোগিতা বিনিময়ে একমত হন সার্ক নেতারা।
করোনার বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াইয়ের আহবান প্রধানমন্ত্রীর: করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার জন্য সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, এই জনস্বাস্থ্যের হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সার্কের ব্যাপক কৌশল অবলম্বন করা দরকার। এই অঞ্চলের মারাত্মক করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি শক্তিশালী কৌশল তৈরি এবং নিবিড়ভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার দরকার। ভিডিও কনফারেন্সে শেখ হাসিনা বলেন, এই মহামারী মোকাবিলার জন্য আমাদের সম্মিলিত সক্ষমতা, দক্ষতা এবং সম্পদের সাহায্যে সহযোগিতা তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশ তার সক্ষমতা এবং দক্ষতা ভাগ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজনে যৌক্তিক সহায়তা প্রদানসহ সার্কের দেশগুলোর সাথে সর্বোত্তম অনুশীলনের জন্যও প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।
সার্ক তহবিল গঠনের আহবান মোদির: সার্কভুক্ত দেশগুলিকে করোনার আতঙ্ক কাটিয়ে, রোগ ঠেকাতে একজোট হয়ে, উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সার্কের নেতাদের তিনি বলেন, ভয় পাবেন না, রোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকুন। সেই সঙ্গে এ রোগ ঠেকাতে ভারত কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তাও-ও তুলে ধরেন তিনি। মোদি বলেন, করোনাভাইরাস যাতে আতঙ্ক তৈরি করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সাবধানী ছিলাম। আমরা ওই ভাইরাসের প্রকোপ রুখতে ধাপে ধাপে পদক্ষেপ নিয়ে চলেছি। ধাপে ধাপে নানা পদক্ষেপই এর আতঙ্ক মুছে দিতে আমাদের সাহায্য করেছে। গোটা দেশ জুড়েই করোনা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার শুরু হয়েছে। এছাড়াও চিকিৎসা সংক্রান্ত সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর কাজও চলছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্ক্রিনিং, সংক্রমণ খুঁজে বের করা, কোয়ারেন্টিন এবং আইসোলেশন। করোনা প্রতিরোধে সার্কের দেশগুলিকে একটি জরুরি তহবিল গড়ার প্রস্তাব দিয়ে মোদি বলেন, ভারতীয় মুদ্রায় সাড়ে ৭৩ কোটি টাকার বেশি অনুদান দিতে চান তিনি। তিনি বলেন, আমরা একটি র‌্যাপিড রেসপন্স টিম তৈরি করছি। তাতে চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। থাকবে পরীক্ষার কিট, ওষুধপত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জামও। আপনাদের প্রয়োজন পড়লে তাঁদের পাঠানো হবে। এ নিয়ে অনলাইন প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। করোনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই’র আহাবান মোদির, সার্ক নেতাদের সমর্থন: এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেভিড-১৯ ইমারজেন্সি ফান্ড’ গঠনের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, এই ফান্ডে যে যত চাইবে, দিতে পারে। এতে অর্থ অনুদানে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। প্রাথমিকভাবে ভারত ১০ মিলিয়ন বা ১ কোটি ডলার দিয়ে এই তহবিলের শুরু করতে পারে। তহবিলের অর্থ ব্যয় সমন্বয়ের কাজটি ভারতের দূতাবাসগুলো করতে পারে বলেও প্রস্তাব করেন মোদি। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্ক দেশগুলোর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবদের নিয়ে এমন একটি ভিডিও কনফারেন্সের প্রস্তাব করেন, যাতে সবাই তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারেন। জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রতিরোধে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর একসঙ্গে কাজ করার তাগিদ দিয়ে এ সংক্রান্ত একটি ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন শেখ হাসিনা। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা ও সক্ষমতা বিনিময়ের কথাও বলেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি দেশটির স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জাফর মির্জা সার্ক সেক্রেটারিয়াটে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্থাপিত সমুদয় প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানান। একই করোনা মোকাবিলায় চীনের অভিজ্ঞতা শোনার প্রস্তাবও করেন তিনি। বলেন, সার্কের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসাবে চীনের অভিজ্ঞতা আমরা শুনতে এবং শুনাতে পারি। শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট করোনার জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্ক নেতাদের দ্রুত উপায় খোঁজার তাগিদ দিয়ে তার দেশের নেয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। বলেন, আমরা ন্যাশনাল টাস্কফোর্স গঠন করেছি। পাবলিক হেলথ ইনসপেক্টররা কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের ওপর নজরে রাখছেন। কলম্বো তার পরিকল্পনায় থাকা সব আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, খেলাধুলা স্থগিত করেছেন।
একইসঙ্গে বড় জমায়েত এমনকি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ২ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছেন। শ্রীলঙ্কা সব দেশের অন অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা আপাতত স্থগিত করেছে বলেও জানান তিনি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় চীনের অভিজ্ঞতা প্রহণের পরামর্শ দেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি। টেলিমেডিসিন সেবার একটি অভিন্ন রূপরেখা প্রণয়নের জন্য সার্ক নেতাদের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং বলেন, শুধু এই ভাইরাস ঠেকানোই নয় বরং পরবর্তীতে আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতেও আমাদের একই ধরণের আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রয়োজন। পরস্পরের অর্থনৈতিক বিপদে একে অন্যের পাশে থাকা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। নেপালের প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে জানান, উদ্ভূত করোনা পরিস্থিতিতে নেপাল পর্বত আরোহীদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তিনি করোনার প্রভাব ঠেকাতে হাত মেলানো নিরোৎসাহিত করে দূর থেকে নমস্কার বলার পরামর্শ দেন। অন্যান্য রোগে উপশম হিসাবে ট্রেডিশনার মেডিসিন ব্যবহারে জোর দেন। প্রায় দেড় ঘন্টার ভিডিও কনফারেন্সের সমাপ্তিতে মোদি জোর দিয়ে বলেন, আসুন, আমরা এক সঙ্গে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করি এবং একত্রেই জয়ী হই।