ভারতের করোনা যুদ্ধের জন্য ১৯১৮ সালের অভিজ্ঞতা কেন গুরুত্বপূর্ণ ?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চীন থেকে বিশ্বের বহু দেশে ছড়িয়ে পড়েছে মহামারি করোনাভাইরাস। বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়ানো এই ভাইরাসটি হানা দিয়েছে ভারতেও। বর্তমানে দেশটির সরকার ও জনগণ রীতিমত যুদ্ধ করছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটির বিরুদ্ধে। তবে ভারত এবারই যে প্রাণঘাতী কোনো মহামারীর বিরুদ্ধে লড়ছে এমনটা নয়। এর আগেও এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলো দেশটি, যা ইতিহাসের পাতায় আজও লেখা রয়েছে।
বর্তমান সময় থেকে প্রায় ১০২ বছর আগে ১৯১৮ সালে ভয়াবহ মহামারি স্‌প্যানিশ ফ্লু ছড়িয়ে পড়েছিলো ভারতে। এর প্রভাবে দেশটির ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকে, অফিসগুলো লক্ষ্য করে যে তাদের কর্মীরা অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে এবং ছুটি নিচ্ছে। কিন্তু তখনও কেউই বুঝতে পারেনি যে সামনে কি ঘটতে যাচ্ছে।
অসুস্থ্যদের জন্য সংবাদপত্রগুলোতে পরামর্শ দেয়া হয় দুশ্চিন্তা না করে বিশ্রাম নেয়ার জন্য।
মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে জুনের মাঝামাঝি সময়ে রহস্যজনকভাবে অসুস্থ্য হওয়ার এই খবর মাদ্রাজ এবং এলাহাবাদে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
এদিকে ভাইরাসটির প্রথম সংক্রমণের মাত্র তিনমাসের মধ্যে অক্টোবরে তৎকালীন বম্বে শহরে ভয়াবহ রূপ নেয় নভেল ফ্লু ভাইরাসটি। এটির বেশি সংক্রমণ ঘটে শহরটির জাহাজঘাটগুলোতে।
ভাইরাসটির প্রকোপে ভেঙ্গে পড়ে গোটা বম্বের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা। দেশের নাগরিকদেরকে ‘স্বসহায়তার’ ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানায় সংবাদপত্রগুলো।
১৯১৮ সাল আর বর্তমান ২০২০ সালের মধ্যে অনেক পার্থক্য। ভারত এখন আর কোনো উপনিবেশিক সরকার দ্বারা পরিচালিত হয় না।
ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মহামারির আঘাত
১৯১৮ সালের অভিজ্ঞতা ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ করোনার আগ পর্যন্ত সেই সময়ের এই ভাইরাসটিই ছিলো ভারতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া সর্বশেষ বৈশ্বিক মহামারি। এটি একটি অভিজ্ঞতার ইতিহাস যেখানে দেখা যায় যে একটি অপ্রস্তুত দেশে আকস্মিক মহামারি শুরু হলে কি হয়।
এ সম্পর্কে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট আহমেদাবাদ (আইআইএমএ) – এর অর্থনীতি ইতিহাসবিদ চিন্ময় তুম্বে ইতিহাসের পাতা উল্টে বলেন, ‘পরিস্থিতি কতটা খারাপ হতে পারে তা জেনে রাখা দরকার। মহামারি জাতীয় জিনিস খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’
১৯১৮ সালে মহামারি রূপ নেয়া ভাইরাসটি মাত্র কয়েক মাস সময় নিয়েছিলো ছড়িয়ে পড়তে। আর এতে প্রাণ হারিয়েছিলো প্রায় এক থেকে দুইকোটি ভারতীয় নাগরিক, মহামারিতে প্রাণ হারানোর বৈশ্বিক তালিকায় যা পঞ্চম।