১৯৯১ সালের পর সর্বোচ্চ সাপ্তাহিক দরপতন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ একদিকে বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া, অন্যদিকে বাজারে রাশিয়া-সৌদি আরবের মূল্যযুদ্ধ—এ দুইয়ের প্রভাব পড়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সাপ্তাহিক বাজারে। ১৯৯১ সালের পর আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের সাপ্তাহিক গড় দামে সবচেয়ে বড় পতন দেখা গেছে। একইভাবে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের সাপ্তাহিক গড় দাম ২০০৮ সালের পর সবচেয়ে বেশি কমেছে। খবর রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সর্বশেষ সপ্তাহে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ৩৩ ডলার ৯২ সেন্টে। আগের সপ্তাহের তুলনায় এ সময় জ্বালানি পণ্যটির গড় দাম এক-চতুর্থাংশের বেশি বা প্রায় ২৮ শতাংশ কমে গেছে। ১৯৯১ সালের জানুয়ারির পর এটাই ব্রেন্ট ক্রুডের সাপ্তাহিক গড় দামে সর্বোচ্চ পতন।
একই চিত্র দেখা গেছে ডব্লিউটিআইয়ের দামেও। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সর্বশেষ সপ্তাহে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআইয়ের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ৩২ ডলার ৩০ সেন্টে। আগের সপ্তাহের তুলনায় এ সময় জ্বালানি পণ্যটির গড় দাম প্রায় ২৬ শতাংশ কমে গেছে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের পর এটাই জ্বালানি পণ্যটির সাপ্তাহিক দামে সবচেয়ে বড় পতন।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনসহ সামগ্রিক বৈশ্বিক অর্থনীতি অনেকটাই শ্লথ হয়ে এসেছে। এ পরিস্থিতিতে চাহিদা কমে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দরপতনের আশঙ্কা ছিল। বাজারে অনেকটাই কমে এসেছিল জ্বালানি তেলের দাম।
তবে এ পরিস্থিতিতে ওপেক-নন ওপেক দেশগুলোকে উত্তোলন আরো কমিয়ে জ্বালানি তেলের বাজারে দরপতনের ধাক্কা সামলে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল সৌদি আরব। তবে ভিয়েনা বৈঠকে রাশিয়ার অসম্মতিতে এ প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। সৌদি আরবের হাত ধরে জ্বালানি তেলের বাজারে শুরু হয় নতুন মূল্যযুদ্ধ।
এ পরিস্থিতিতে এপ্রিল থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরামকো। রাশিয়ার পক্ষ থেকেই জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন বাড়ানোর ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। একদিকে মূল্যযুদ্ধ, অন্যদিকে উত্তোলন বৃদ্ধির সম্ভাবনা—এসব কারণে গত সপ্তাহে জ্বালানি তেলের বাজারে রেকর্ড দরপতন ঘটেছে। জ্বালানি পণ্যটির দাম ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের পর একদিনে সবচেয়ে বেশি কমে আসার রেকর্ড গড়েছে।
সোমবারের এ রেকর্ড দরপতনের পর থেকে টানা তিনদিন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম নিম্নমুখী ছিল। এর প্রভাব পড়েছে পণ্যটির সাপ্তাহিক দামেও। ব্রেন্ট ক্রুডের সাপ্তাহিক গড় দাম ১৯৯১ সালের পর সবচেয়ে বেশি কমেছে। ডব্লিউটিআইয়ের সাপ্তাহিক গড় দামে ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চ পতন দেখা গেছে।
এ বিষয়ে সিডনিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সিএমসি মার্কেটসের প্রধান বাজার কৌশলবিদ মিখায়েল ম্যাকার্থি বলেন, জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে অস্থির সপ্তাহ পার করেছে। বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ও ভিয়েনা বৈঠকের কার্যত ব্যর্থ হওয়া পণ্যটির বাজার পরিস্থিতিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে।