প্রধানমন্ত্রীর উপলব্ধি

0
ড. আবদুল লতিফ মাসুম
উপলব্ধি একটি মানসিক পরিপূর্ণতা। এই পরিপূর্ণতা কখনো আসে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতার পর। কখনো কখনো আকস্মিকভাবে এই উপলব্ধির প্রকাশ ঘটতে পারে। সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্রে’ একটি আকস্মিক উপলব্ধির বর্ণনা আছে। ঘটনাটি এ রকম- একজন গাঁয়ের বধূ শেষবেলায় কলসি কাঁখে পানি নিয়ে ঘরে ফিরছে। সে স্বগতভাবে বলছে- ‘বেলা তো শেষ। আর সময় নেই।’ তখন পথ অতিক্রম করছিলেন পালকি চড়ে একজন জমিদার। তার কানে কথাগুলো এক অমোঘ উপলব্ধির জন্ম দিলো। তিনি জমিদারিতে ফিরে গেলেন এবং চিরকালের জন্য জমিদারি পরিত্যাগ করলেন। সন্ন্যাসীর জীবন গ্রহণ করলেন। বাংলা সাহিত্যের গল্প কথায় এ রকম অনুভূতি ও উপলব্ধির কাহিনী আছে অনেক।
‘মুজিববর্ষ’ পালন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী গত সোমবার (১০ মার্চ ২০২০) এমন কিছু কথা বলেছেন, যা অনেকের অনুভূতিকে নাড়া দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই উপলব্ধিগত সত্যতা ও বাস্তবতা অনেকের কাছেই ‘ব্যতিক্রমধর্মী’, ‘আশাতীত’ ও ‘বিরল’ মনে হয়েছে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী দুটো অনুষ্ঠানে প্রায় একই ধরনের উপলব্ধি প্রকাশ করেন। প্রথমত, তার প্রবল অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে গণভবনে আয়োজিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সূচনা বক্তব্যে। দ্বিতীয়ত, সাপ্তাহিক ক্যাবিনেট মিটিং, অবশেষে তার অনানুষ্ঠানিক বৈঠকেও তিনি তার উপলব্ধির সরব প্রকাশ ঘটান। জনগণের পক্ষ থেকে আজকাল যে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, তা প্রধানমন্ত্রীরও প্রশ্ন ও উপলব্ধির বিষয় হতে পারে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর লাশ পড়ে রয়েছিল, কিন্তু তখন কোনো নেতা সেই লাশের কাছে ছিলেন না কেন? কেন ভয়াবহ শোকাবহ সে ঘটনার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করতে পারলেন না? অথচ তারা এখন ‘রক্ত ঢেলে দেয়ার’ শপথ নিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী আজকের আতিশয্য ও বাড়াবাড়িকে লক্ষ করে জিজ্ঞাসা করতে পারেন- জাতির পিতাকে আপনারা কতটুকু ভালোবাসেন, তা ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রমাণিত হয়ে গেছে। তিনি এ কথাও নেতাকর্মীদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকবে না বা তার পরেও কি এই অবস্থা বর্তমান থাকবে?
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষ পালন নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। অতি আনুষ্ঠানিকতা ও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়েরও সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রসঙ্গক্রমে তিনি ১৫ আগস্টের ঘটনাবলির স্মৃতিচারণ করেন বলে সামাজিক মাধ্যমে জানা যায়। এই প্রথমবারের মতো তিনি যে, এসব মন্তব্য করলেন, এমন নয়। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সামনে তার দুঃখ-কষ্ট ও ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। বস্তুত এটাই নির্মম সত্য যে, এখন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সুবিধা নেয় না, এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। আর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের দিন বা তৎপরবর্তীকালে যারা আওয়ামী লীগের পরিচয় দিত তাদের সংখ্যা খুবই কম। সমাজতাত্ত্বিকরা দীর্ঘকাল ধরেই দেখিয়ে আসছেন যে, বাংলাদেশের জনচরিত্রে সুবিধাবাদ একটি মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী সঙ্গতভাবেই বাঙালি চরিত্রের এই দিকটির প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন। বাংলা ভাষায় একটা প্রবাদ আছে, ‘সুসময়ে অনেকেই বন্ধু বটে হয়, অসময়ে হায় হায় কেউ কারো নয়’। ১৫ আগস্টের আগে যখন বঙ্গবন্ধুর আকাশচুম্বী ব্যক্তিত্ব ছিল, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, তখন জনতার স্রোতও বয়ে যেত গণভবন অথবা ৩২ নম্বরে। দলীয় অফিস গমগম করত মানুষে। সুবিধাবাদী ও লোভাতুর মানুষেরা দলীয় পরিচয়ে তদবির করত অফিসে অফিসে। প্রশংসা ও প্রশস্তিতে ঢাকা পড়ে যেত ঘুষ, দুর্নীতি ও অন্যায় আচরণ। কিন্তু যখন বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেন তখন যাদের দায়িত্ব ছিল তার নিরাপত্তা বিধানের, তারা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা নেতৃত্ব দিতে অপারগ হন। লাখ লাখ কর্মী ও সমর্থক প্রতিবাদ করতে ব্যর্থ হলেন। এ ক্ষেত্রে কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম একজন ব্যতিক্রম। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো- আজকে যখন মুজিববর্ষের নামে সর্বত্র তোড়জোড় চলছে, তখন কাদের সিদ্দিকীর পরিবার এক রকম বন্দী। তারা এক রকম অবাঞ্ছিত। বন্দনার আধিক্য ও তীব্রতা এতই ব্যাপক যে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে ধমক দিতে হয় এটা হ্রাসের জন্য। দলীয় সাধারণ সম্পাদককে গলদঘর্ম হতে হয় উপদেশ দিয়ে।
মুজিববর্ষ উদযাপন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, তা নিশ্চয়ই তোষামোদ চাটুকারদের হতাশ করবে। তিনি বলেছেন, অবশ্যই মুজিব শতবর্ষ পালন করা হবে। কিন্তু সেটি এমনভাবে পালন করা হবে যাতে জনগণ ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে। কেননা, করোনাভাইরাস বিশ^ব্যাপী একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আর জনসমাগম থেকেই তা ছড়ায়। তাই লোক সমাগম যাতে কম হয়, জনগণ যেন ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে, সে বিষয়গুলো মাথায় রেখেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। সে জন্য মুজিববর্ষের কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখানে আমাদের দেশের মানুষের নিরাপত্তা, তাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে আমরা মনে করি। উল্লেখ্য, ১৭ মার্চ স্টেডিয়ামে জাঁকজমকপূর্ণ লাখ লাখ মানুষের যে সমাবেশ আয়োজনের কথা ছিল তা বাতিল করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরেকটি উপলব্ধির প্রকাশ ঘটেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের নেতা হিসেবে তিনি নিশ্চয় সাধারণ মানুষের নাড়ির খবর রাখেন। যেহেতু জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানটি বাদ দেয়া হয়েছে সেহেতু ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির ঢাকা সফরটি হয়ে পড়েছে অপ্রাসঙ্গিক। এভাবে একটি বিব্রতকর অবস্থা থেকে আওয়ামী লীগ সরকার সসম্মানে পশ্চাদপসরণ করেছে। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর নানা উপলব্ধির প্রকাশ ঘটেছে। মুজিববর্ষের থিম সং গাইতে চান তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা: মুরাদ হাসান। এ কথা শুনে ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভর্ৎসনা করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রীসহ যারা এমন আগ্রহ দেখিয়েছেন, তাদের। তিনি আরো অভিযোগ করেন, কেউ কেউ চাপ দিচ্ছেন তাকে থিম গাইতে দেয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেশ কয়েকজন গীতিকারকে দিয়ে থিম সং লেখানো হয়েছে। সেই গানগুলো আমি এবং শেখ রেহানা বারবার শুনে শব্দচয়ন ও অন্যান্য বিষয় দেখিয়ে দিয়েছি। আর এখন কেউ কেউ থিম সং পরিবেশন করতে চান। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, যারা থিম সং গাইতে চান, তাদের অডিশন নেব। না পারলে কঠোর ব্যবস্থা নেব। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী কাশবনের ভেতর গান গাইতে ও নাচতে চান। প্রধানমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, নেচে-গেয়ে এসব গান গাওয়ার মধ্যে ‘আরো কিছু বিষয়’ আছে। বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমানের ওপরও প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়েছেন। মুজিববর্ষ উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে তাকে না জানিয়ে টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় দুই হাজার ৮০০ গৃহহীনকে ঘর দেয়ায় প্রশংসা না করে গালমন্দ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় এত গৃহহীন কোথায় পেলেন? আমি জানি না, আপনি বরাদ্দ দিয়ে দিলেন। আমার এলাকায় তো গৃহহীন নেই। এটা উপকূলীয় এলাকাও নয়। আজই বরাদ্দ বাতিল করুন। প্রধানমন্ত্রী এই প্রতিমন্ত্রীকে আরো জিজ্ঞাসা করেন, এত টাকা পেলেন কোথায়? এ সময় প্রতিমন্ত্রী জবাব দেন, আমরা বিভিন্ন খাত থেকে কাটছাঁট করে অর্থ বের করেছি। প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের সচিবের কাছে জানতে চান, টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়ার তালিকা কে করে দিয়েছে? জবাবে বলেন, তাদের কাছে যে তথ্য ছিল সেটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তখন বলেন, সব বরাদ্দ বাতিল করুন। সবাইকে নিয়ে বৈঠক করে সমন্বয়ের মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
‘রাজা যা বলে পারিষদ বলে তার শতগুণ’- এটি রাবীন্দ্রিক উচ্চারণ। এ কথার যে সত্যতা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপলব্ধিতে তা আবার প্রমাণিত। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে কেউ কেউ টাকা বানানোর বাহানা বানিয়েছেন। বিপুল অর্থ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে খরচ হচ্ছে। প্রতিটি কার্যালয় ও প্রতিষ্ঠানকে জন্মশতবার্ষিকী পালনে বাধ্য করা হচ্ছে- এ রকম অভিযোগ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া জন্মশতবার্ষিকী পালনের প্রক্রিয়া ও ধরন নিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো উদযাপন হতে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বিশ্বাস ও সংস্কৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একদল লোক মহররম মাসের তাজিয়া মিছিলের মতো করে শিকল দিয়ে বুকে আছড়াচ্ছে আর ‘হায় মুজিব! হায় মুজিব!’ ধ্বনি তুলছে। অপর একটি চিত্রে দেখা যায়, একদল ছাত্রী বঙ্গবন্ধুর ছবিকে সালাম করছে। দেশের হাক্কানি আলেম সমাজ এ বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। আমরা সবাই জানি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো এত কিছু হতে পারত না। বঙ্গবন্ধুর একসময়ের সহচর প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখায়ও এর সমর্থন পাওয়া যায়। একটি জনপ্রিয় দৈনিকের কলামে তিনি লিখেছেন, ভাষা আন্দোলনের সময় জেলে বসে তারা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালনের প্রয়াস পেয়েছিলেন।
পরবর্তীকালেও যখনই তারা এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু উষ্মা প্রকাশ করেছেন। ১৯৭২-৭৩ সালে যখন এভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী পালনে আধিক্য দেখা যায় তখন বঙ্গবন্ধু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘এ অর্থ দিয়ে গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা উত্তম।’ মুজিববর্ষ পালন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বিনয় ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মুজিববর্ষ পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এর অনুষ্ঠান যেন আত্মপ্রচারের মাধ্যম না হয়। উল্লেখ্য দলীয় নেতা, পাতি নেতা, উপনেতারা লাখ লাখ পোস্টারে বঙ্গবন্ধুর ছবির সাথে তাদের ছবি সংযোগ করে নগ্ন আত্মপ্রচারে মেতে উঠেছেন। গ্রাম ও শহরের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে এ রকম পোস্টার চোখে পড়ছে না। ওবায়দুল কাদের আরো বলেছেন, মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানের নাম করে কেউ চাঁদাবাজির দোকান খুলবেন না। চাঁদাবাজি করে এ অনুষ্ঠান যাতে কেউ না করে। অমুক দোকানদারকে এত টাকা দিতে হবে, অমুক ব্যবসায়ীকে অত টাকা দিতে হবে, অমুক বাড়িওয়ালাকে অত টাকা দিতে হবে- এমন বাড়াবাড়ি কোনো অবস্থায় সহ্য করা হবে না। অথচ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এমনকি গ্রামগঞ্জের সাধারণ দোকানপাট থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলার ঘটনা ঘটেছে। কাদের আরো বলেছেন, মুজিববর্ষে ক্ষমতার দাপট দেখাবেন না।
নেতাকর্মীরা এ ধরনের হিতোপদেশ অগ্রাহ্য করে দাপটের ঠেলায় জনগণকে অস্থির করে তুলেছে। ওবায়দুল কাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে বিনয়, ধৈর্য আর ত্যাগের শিক্ষা নেয়ার। তিনি আরো বলেন, মুজিববর্ষে ক্ষমতার দাপট দেখাবেন না। আমরা ক্ষমতায় আছি, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। যতটা সম্ভব বিনয়ী থাকবেন। মানুষের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলবেন। যেকোনো পরিস্থিতিতে মাথা ঠাণ্ডা রেখে মুজিববর্ষের ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখবেন। নেতাকর্মীদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উদযাপনের নামে এলাকায় কারো সাথে এমন কোনো আচরণ করবেন না, যাতে তারা কষ্ট পায়। কোনো প্রকার হয়রানির শিকার যেন কেউ না হয়, এটা খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিটি কর্মসূচি সুন্দরভাবে করবেন। কিন্তু এসব উপদেশ দলের কেউ কেয়ার করেনি। মুজিববর্ষ নিয়ে মারামারি ও সংঘর্ষের বিস্তর ঘটনা ঘটেছে। আমাদের বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের নির্দেশনার বিপরীত চিত্র সম্পর্কে যথার্থই অবহিত। জনগণ এসব ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর বাস্তব উপলব্ধির প্রকাশ দেখতে চায়। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের একক সম্পত্তি নন, তিনি সবার। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এ কথা বারবার বলেছেন। অথচ তাকে দলীয় স্বার্থে একান্ত সঙ্কীর্ণ পরিসরে নিয়ে গেছেন তারা। মুজিববর্ষ পালনে সব মত ও পথের সমন্বয়ে জাতীয় উদ্যোগ প্রতিষ্ঠিত হলে, দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধুর সম্মান ও মর্যাদা আরো অনেক বৃদ্ধি পেত। প্রধানমন্ত্রীর উপলব্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে আগামী দিনের কর্মসূচি পুনর্নির্ধারিত হোক। বাংলাদেশের নাগরিক সাধারণের এই নিবেদন।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]