উপনিবেশ নেই, মানসিকতা আছে

0
ইকতেদার আহমেদ
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ ‘উপনিবেশ’ শব্দটির সাথে বিশেষভাবে পরিচিত। আমাদের এ দেশসহ সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ ১৯০ বছর ব্রিটিশদের উপনিবেশ ছিল। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটলেও আমাদের ভাগ্যে কার্যত সে স্বাধীনতা জোটেনি। ১৯৪৭ সাল-পরবর্তী ২৩ বছর আমরা পাকিস্তানিদের দিয়েই শাসিত হয়েছি। ওই শাসকরা এ দেশের মানুষদের মূলত ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখত। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সপ্তদশ শতকের গোড়ার দিকে ব্রিটিশরা তাদের উপনিবেশ স্থাপনের সূচনা করেছিল এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে দেখা গেল, উপনিবেশ স্থাপনের মাধ্যমে ব্রিটিশদের সীমানা এত বেশি বিস্তৃত যে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য অস্তমিত হতো না। এসব উপনিবেশ স্থাপনের আগে ব্রিটিশরা ছিল খুবই দরিদ্র। তাদের নিজ দেশে যে খাদ্য উৎপন্ন হতো তা দিয়ে তারা এক মাসের চাহিদাও মেটাতে পারত না। সে সময় ব্রিটেনসহ ইউরোপের দেশে দেশে একটি সামাজিক প্রথা প্রচলিত ছিল যে, গাছ হতে ফল পেকে মাটিতে পড়লে যে প্রথমে এটি নেবে ফলটি তারই। এ ক্ষেত্রে গাছের মালিকের কোনো অধিকার থাকত না। এমনও দেখা গেছে, গাছ থেকে কখন ফল পড়বে এবং সেটি প্রথমে কে কুড়িয়ে নেবে, এর জন্য একটি গাছের নিচে একসাথে ১০-১২ জন লোক অপেক্ষমাণ। সে সময় ব্রিটেন ও ইউরোপের অন্যান্য দেশে আপেল ও আঙ্গুর এ দু’টি ফলই বেশি উৎপন্ন হতো। আপেল পাকলে প্রাকৃতিকভাবেই গাছ থেকে নিচে পড়ত, আঙ্গুরের ক্ষেত্রে সেটি হতো না। তাই আপেল গাছের মতো আঙ্গুর গাছকে ঘিরে ফল পড়ার আশায় কাউকে অপেক্ষারত দেখা যেত না।
দারিদ্র্যের কারণে ব্রিটিশরা তাদের বিভিন্ন উপনিবেশে চাকরি ও ব্যবসার উদ্দেশে পাড়ি জমায়। প্রতিটি উপনিবেশ থেকে তারা সম্পদ লুণ্ঠন করে তাদের নিজ দেশকে সমৃদ্ধ করেছিল। লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়াম পরিদর্শন করলে যেকোনো সচেতন ব্যক্তির বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুষ্পাপ্য এবং মূল্যবান বস্তুগুলোর ঠাঁই সেখানে হয়েছে কিভাবে। ব্রিটিশদের নিজ দেশ থেকে তাদের উপনিবেশগুলো অনেক দূরে অবস্থিত হওয়ায়, এসব উপনিবেশে চাকরি নিয়ে যেসব ব্রিটিশ নাগরিক আসতেন তাদের উচ্চ পদ দেয়া হতো। এসব পদের সুযোগ সুবিধার আধিক্যতার কারণে স্বদেশীয় মানুষের কাছে যেকোনো ব্রিটিশ পদধারী ক্ষমতা, প্রাচুর্য ও ভোগবিলাসের দিক থেকে জমিদারসদৃশ ছিল। একজন ব্রিটিশ পদধারীর পদভেদে নিজ দফতর ও বাসায় কাজ করার জন্য নেস্টিভ বা দেশীয়দের নিয়োগ দেয়া হতো। দফতর সংশ্লেষে যারা নিয়োগ লাভ করতেন- তারা হলেন করণিক, পিয়ন, আরদালি, চাপরাশি, দারোয়ান, ফরাশ, কোচোয়ান, সহিস, ঝাড়–দার, মালি, মেথর প্রমুখ। বাসগৃহে কাজের জন্য বাবুর্চি, মশালচি, পিয়ন, ঝাড়–দার, মেথর, মালী, নৈশপ্রহরী এবং ক্ষেত্রবিশেষে করণিক, কোচোয়ান, সহিস প্রভৃতির ব্যবস্থা থাকত। বেশির ভাগ ব্রিটিশ নাগরিকই সন্তানদের পড়ালেখা এবং চাকরিস্থলের দূরত্বের কারণে উপনিবেশগুলোতে বসবাস করতেন একা। তাদের স্ত্রী বা সন্তানরা বছরে দু-একবার ভ্রমণের উদ্দেশে স্বামী বা পিতার কর্মস্থলে এসে দু-এক মাস আনন্দফুর্তিতে কাটিয়ে দেশে ফিরে যেতেন।
আমাদের এ উপমহাদেশে ব্রিটিশদের শাসন শেষের দিকে ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের জন্য ধীরে ধীরে মোটরগাড়ির ব্যবস্থা করা হতে থাকলে এগুলো ঘোড়ার গাড়ির স্থলাভিষিক্ত হয়। এ কারণে কোচোয়ান ও সহিস পদের অবসান হলেও ড্রাইভার পদের আবশ্যকতা দেখা দেয়। পাকিস্তান আমলের গোড়ার দিকেও আমাদের বিভিন্ন জেলা শহরে পদস্থ কর্মকর্তাদের ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে অফিসে যাওয়া-আসার প্রচলন ছিল। ব্রিটিশরা বিভিন্ন উপনিবেশে তাদের পদধারী কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য দালানকোঠা নির্মাণ করেছিল। অফিস-আদালতের সংশ্লেষেও প্রতিটি শহরে দালানকোঠা গড়ে উঠেছিল। তখনকার অফিস আদালতের বহিরাঙ্গনের ইটের দেয়ালে কোনো আস্তর দেয়া হতো না এবং এ দেয়ালগুলো লাল বর্ণের হতো। আমাদের বিভিন্ন শহরে ঐতিহ্য হিসেবে এখনো এসব লাল দালান সংরক্ষণ করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এবং চট্টগ্রাম, পাবনা, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল প্রভৃতি পুরো জেলার আদালত ভবনের কথা। ব্রিটিশরা তাদের বিভিন্ন উপনিবেশে কর্মরত পদধারীদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য যেভাবে বিভিন্ন নিম্ন পদের সমারোহ ঘটিয়েছিল, তাদের নিজ দেশে কিন্তু কোনো পদধারীর জন্য এ ধরনের পদ বর্তমানে নেই এবং অতীতেও ছিল না। আমাদের দেশে এখনো জেলাপর্যায়ে জেলা জজ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন প্রভৃতি পদে কর্মরতরা তাদের দফতর ও গৃহে কাজ করার জন্য করণিক, গাড়িচালক, পিয়ন, আরদালি, মালী, ঝাড়–দার, বাবুর্চি প্রমুখকে পেয়ে থাকেন। তারা সবাই সরকারি কর্মচারী। আমাদের দেশে এমন কোনো অফিস নেই, যেখানে পিয়ন ও ঝাড়–দারের পদ নেই। ব্রিটেনসহ পৃথিবীর সব সভ্য ও উন্নত দেশ থেকে করণিক, পিয়ন ও ঝাড়–দার পদের অবসান হয়েছে বহু আগেই।
যেকোনো উন্নত দেশে গেলে দেখা যায়, একজন কর্মকর্তার অফিস চলাকালে চা খাওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে তিনি অফিসের টি-কর্নারে এসে নিজেই চা বানিয়ে খাচ্ছেন। কোনো অতিথি একজন কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাৎ করতে এলে বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, অতিথিকে কর্মকর্তার কক্ষে নেয়া হয় না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অফিসের অতিথি কক্ষে বসে অতিথির সাথে আলাপ সম্পন্ন করেন এবং চা খাওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে টি-কর্নারে গিয়ে সে অতিথিও চা নিজে বানিয়ে পান করেন। অধুনা উন্নত দেশগুলোতে মন্ত্রী পদধারী ব্যতীত সরকারের উচ্চ পদে কর্মরত কোনো কর্মকর্তা গাড়ির সুবিধা পান না। আর গাড়ির সুবিধা না পেলে চালক নিয়োগের প্রশ্নই আসে না। আমাদের দেশে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের সময় কর্মকর্তারা এক জেলা থেকে অন্য জেলায় কিংবা জেলা থেকে মহকুমায় বা জেলা ও মহকুমা থেকে থানায় সফরে গেলে তাদের আবাসনের কথা ভেবে সার্কিট হাউজ ও ডাকবাংলো গড়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও থানা শহরে এখনো সার্কিট হাউজ ও ডাকবাংলো বিদ্যমান এবং এগুলোকে কর্মকর্তাদের চাহিদা অনুযায়ী আধুনিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে সমৃদ্ধ করার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
পৃথিবীর কোনো উন্নত ও সভ্য দেশে বর্তমানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সার্কিট হাউজ, গেস্ট হাউজ ও ডাকবাংলো পরিচালিত হয় না। উন্নত দেশের যেকোনো শহরে নাগরিকদের চাহিদানুযায়ী হোটেল রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি যেকোনো ব্যক্তি এসব শহরে গেলে নিজের অবস্থান ও সামর্থ্য অনুযায়ী হোটেলে আবাসন গ্রহণ করেন। এ কারণে উন্নত দেশগুলোর প্রতিটি শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল গড়ে উঠেছে। এসব হোটেল উন্নত দেশগুলোর পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিপুল কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো ঔপনিবেশিক মানসিকতা ধারণ করে জেলা ও থানা শহরগুলোতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সার্কিট হাউজ, গেস্ট হাউজ ও ডাকবাংলোর সুবিধা অক্ষুণœ রেখে এগুলোকে আরো আধুনিক করার প্রয়াসে ব্যস্ত বিধায় আমাদের বিভিন্ন জেলা ও থানা শহরে অত্যাধুনিক হোটেল গড়ে ওঠেনি। নির্দ্বিধায় বলা যায়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত সার্কিট হাউজ, গেস্ট হাউজ ও ডাকবাংলোর অবসান হলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের চাহিদা অনুযায়ী হোটেল গড়ে উঠবে বিভিন্ন জেলা ও থানা শহরে। কোনো জেলা বা থানা শহরে সরকারি সফরে আগত কর্মকর্তাদের সফরকালে বা স্বল্পকালীন অবস্থানের সময়ে আবাসনের নিমিত্ত সার্কিট হাউজ, গেস্ট হাউজ ও ডাকবাংলো প্রভৃতি নির্মিত হলেও দুই দশক ধরে দেখা যাচ্ছে, এগুলোতে অবস্থানের ব্যয় খুবই কম হওয়ায় অনেক সরকারি কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে শুধু মাস নয়, একটানা বছরের পর বছর এগুলোতে অবস্থান করছেন। একজন সরকারি কর্মকর্তাকে সার্কিট হাউজ, গেস্ট হাউজ ও ডাকবাংলোতে এক দিন অবস্থানের জন্য যে অর্থ দিতে হয় তা এতই সামান্য যে, এটি কোনোভাবেই এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের খরচের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ আমলে আমাদের দেশে সরকারের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য যেসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল, এগুলোর ভূমির পরিধি ছিল বিস্তৃত। এখনো আমাদের দেশে বিভিন্ন বিভাগের বিস্তৃত ভূমির ওপর অবস্থিত অনেক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এগুলোর কোনোটিতেই বছরব্যাপী প্রশিক্ষণের কাজ চলে না। এমন অনেক কেন্দ্র রয়েছে, যেগুলোতে বছরে মাত্র দু-এক মাস প্রশিক্ষণের কাজ চলে আর অবশিষ্ট পুরো সময় দেখা যায়, প্রশিক্ষণার্থীদের আবাসনের কক্ষগুলো জনশূন্য এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গল্পগুজবে অলসভাবে দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন। ঔপনিবেশিক শাসকরা নিজ দেশে শ্রম ও সম্পদের অপচয় রোধে এবং পর্যটনের বিকাশের স্বার্থে অনেক আগেই বিভিন্ন বিভাগের পৃথক পৃথক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়ে প্রতিটি বিভাগের জন্য প্রশিক্ষণ সেল স্থাপন করে বাইরে হোটেলে প্রশিক্ষণ গ্রহণের ব্যবস্থা করে থাকেন। বিভিন্ন বিভাগের প্রশিক্ষণ সেলগুলো স্বল্পসংখ্যক কর্মকর্তা সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে এবং তারা বছরব্যাপী বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু নির্ধারণসহ আমন্ত্রিত আলোচকদের তালিকা প্রণয়ন করেন। আমাদের বিভিন্ন বিমানবন্দর, গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশন ও নৌ টার্মিনালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। উন্নত দেশকগুলোতে অনুরূপ ভিআইপি লাউঞ্জ আছে; কিন্তু এগুলো পরিচালনার দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থার। উন্নত দেশে যেকোনো সরকারি বা বেসরকারি ব্যক্তি নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে ভিআইপি লাউঞ্জের সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। এর মাধ্যমে সরকারের পরিচালন ব্যয় ছাড়াই বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের রাজধানী ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে গেলে দেখা যায়, ভিআইপির পদচারণায় লাউঞ্জ সরগরম। এক ভিআইপির প্রস্থান ও আগমনে পদভেদে দুই থেকে ২০ জনেরও আগমন ঘটছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একজন যাত্রীর প্রস্থান বা আগমনের সময় কোনো আত্মীয়স্বজন বা শুভানুধ্যায়ী তাকে বিদায় জানানো বা আনার জন্য টার্মিনালে প্রবেশ করতে চাইলে মাথাপিছু ৩০০ টাকা গুনতে হয়। কিন্তু ভিআইপিদের প্রস্থান ও আগমনের সময় যারা ভিআইপি লাউঞ্জে উপস্থিত হন তাদের কোনো অর্থ দিতে হয় না। এ ধরনের বৈষম্য কোনো উন্নত, সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে চলতে পারে না।
দেশে অধুনা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা নিরাপত্তা প্রহরী সরবরাহ করে থাকে। উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে বিভিন্ন কার্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী সরবরাহের কাজ, ভবনের অভ্যন্তরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ এবং ভবনের সামনে বাগান পরিচর্যার কাজ বেসরকারি সংস্থার ওপর ন্যস্ত। এসব সংস্থা তাদের ওপর দায়িত্বগুলো অত্যন্ত সুচারুরূপে সম্পাদনের কারণে এগুলোর ওপর আস্থা শতভাগ। আমরা কি পারি না, ব্যক্তিগত লাভের বিষয়টি পরিহার করে বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ের এ দায়িত্বগুলো বেসরকারি সংস্থার ওপর অর্পণ করতে? আশার কথা, প্রধানমন্ত্রী বিগত ডিসেম্বর ২০১৪ সালে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়কালে ঐতিহ্য রক্ষার ঔপনিবেশিক মানসিকতা ত্যাগ করে ‘লাল দালান আর নয়’ বলে এগুলো ভেঙে ফেলে নতুন ভবন নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য দেশপ্রেমে পরিপূর্ণ। তিনি লাল দালান ভেঙে ফেলে ঔপনিবেশিক মানসিকতা ত্যাগের যে আহ্বান জানালেন, অনুরূপ আহ্বানে তার পক্ষ থেকে সার্কিট হাউজ, গেস্ট হাউজ, ডাকবাংলো, ভিআইপি লাউঞ্জ প্রভৃতির পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা বেসরকারি সংস্থার ওপর ছেড়ে দেয়াসহ সরকারের বিভিন্ন দফতর ও কার্যালয়ে করণিক, গাড়িচালক, পিয়ন, আরদালি, নৈশপ্রহরী, ঝাড়ুদার, মালী প্রভৃতি পদের বিলোপ সাধন করে এবং করণিকদের কর্মকর্তায় রূপান্তরপূর্বক অন্য পদগুলোর কাজ বেসরকারি সংস্থার ওপর অর্পণের নির্দেশ দেয়া হলে ধীরে ধীরে হলেও ঔপনিবেশিক মানসিকতার অবসান ঘটবে। আর আমরা নিজেদের উন্নত, সভ্য ও গণতান্ত্রিক জাতি এবং দেশে পরিণত করতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় বলতে গেলে, ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতা’ পরিহার করতে হবে; তবে শুধু ‘লাল দালান’ ভেঙে কি তা সম্ভব?
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: [email protected]