সৌদি রাজপরিবারে ধরপাকড়: কে এই প্রিন্স আহমেদ?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সৌদি আরবের বাদশাহ কিং সালমান বিন আব্দুল আজিজের বেঁচে থাকা একমাত্র আপন ভাই আহমেদ বিন আব্দুল আজিজ। বর্তমানে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে আটক হয়েছেন তিনি। তাকে আটকের বিষয়টি বেশ আলোচিত হচ্ছে বিশ্ব গণমাধ্যমে। শুক্রবার তারসঙ্গে আটক করা হয় রাজ পরিবারের গুরুত্বপূর্ন আরো কয়েক জনকে। এরমধ্যে রয়েছেন কিং সালমানের ভাইয়ের ছেলে ও দেশটির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন নায়েফ।
বাদশাহ সালমানের বয়স ৮৪ বছর। ফলে তার পর দেশটির বাদশাহ কে হবেন তা নিয়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব জোরদার হচ্ছে। সৌদি রাজ পরিবারের নিয়ম অনুযায়ী বর্তমান ক্রাউন প্রিন্সের পাশপাশি এ পদে তার বিকল্প হতে পারতেন নতুন আটক দুই জনই।
ফলে নিজের রাস্তা পরিস্কার করতেই তাদেরকে আটক করেছেন ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমান এমনটাই ধারণা করছে গণমাধ্যমগুলো।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের দেয়া তথ্যানুযায়ী, প্রিন্স আহমেদ ও প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ বর্তমান সৌদি বাদশাহ ও তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে সরিয়ে দেয়ার জন্য একটি অভ্যুত্থান চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তাদেরকে আটকের পর একদিনের মধ্যে আটক করা হয় রাজপরিবারের সদস্যসহ আরো কয়েক ডজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা ও সন্দেহভাজনকে। তারা সকলেই বাদশাহ ও তার সন্তানকে সরিয়ে ক্ষমতা দখলের পায়তারা করছিলেন। তবে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এমন অবস্থায় সবার আগ্রহের মূলে রয়েছেন আটক হওয়া প্রিন্স আহমেদ। তিনি সৌদির আল-সৌদ পরিবারের সবথেকে উর্ধতন সদস্যদের একজন। এই পরিবারটিই প্রথম থেকে সৌদি আরব শাসন করে আসছে। আধুনিক সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় দেশটির সাবেক বাদশাহ কিং আব্দুল আজিজকে। তার স্ত্রীদের মধ্যে সবথেকে প্রিয় ছিলেন হুসসা বিন্ত আহমেদ আল-সুদাইরি। তাদের সাত ছেলে পরবর্তীতে পরিচিত হয় ক্ষমতাধারী সুদাইরি সেভেন নামে। সেই সাত জনের মধ্যে দুজন এখনো টিকে আছেন। যারমধ্যে একজন হচ্ছেন সৌদির বর্তমান শাসক কিং সালমান ও আরেকজন হচ্ছেন তার ভাই প্রিন্স আহমেদ। এখন ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বে নেমেছেন এই দুই ভাই।
১৯৪০ এর দশকে জন্ম নেন প্রিন্স আহমেদ। তিনি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পারি জমান তিনি। সেখানে তিনি ১৯৬৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক রেডল্যান্ডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ক্ষমতা ভাগাভাগির অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন সৌদি আরবের সহকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১২ সালে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পদ পান। কিন্তু এর মাত্র ৫ মাসের মাথায় তাকে এই পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তার জায়গায় বসানো হয় মোহাম্মদ বিন নায়েফকে। সম্প্রতি প্রিন্স আহমেদের সঙ্গে এই মোহাম্মদ বিন নায়েফকেও আটক করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব হারানোর পর কয়েক বছর মক্কা ও মদীনার দায়িত্ব পান প্রিন্স আহমেদ। সুদাইরি ভ্রাতাদের সবথেকে ছোট হিসেবে তাকে দেখা হত সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ প্রধান হিসেবে। কিন্তু তাকে অন্তত দুইবার এ সুযোগ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
২০১৭ সালে অনেক উর্ধতন প্রিন্সকে সরিয়ে সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ বাদশাহর তালিকায় উঠে আসেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। এসময় এর বিরোধীতা করেছিলেন প্রিন্স আহমেদ। ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা হওয়ার পর রাজ পরিবারে বড় ধরণের আটক অভিযান চলে। তবে এর আগেই ২০১৭ সালের নভেম্বরে দেশ ছারেন প্রিন্স আহমেদ। বেশ কয়েক সপ্তাহ তাদেরকে দুর্নীতির দায়ে আটক করে রাখা হয়েছিল। প্রিন্স আহমেদকে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল যে দেশে ফিরে এলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে না। সেই বিশ্বাস নিয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবরে দেশে ফিরে আসেন প্রিন্স আহমেদ।
তবে বিদেশে থাকাকালীন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স এমবিএসের ইয়েমেনে যুদ্ধ চালানোর সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচক ছিলেন প্রিন্স আহমেদ। ২০১৫ সালে শিয়া যোদ্ধাগোষ্ঠী হুতিকে পরাজিত করতে ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরু করে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন আরব জোট। এরপর থেকে ইয়েমেনে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকট চলছে। এর পেছনে সৌদির ভুমিকার সমালোচনা করে প্রায় দুই মিনিটের একটি ভিডিও তিনি অনলাইনে প্রচার করেছিলেন ২০১৮ সালে। এর জন্য তিনি তার ভাই ও ভাইয়ের ছেলেকে দায়ি করেছিলেন তখন। বলেছিলেন, ইয়েমেনে যা হচ্ছে তার জন্য আল-সৌদ পরিবারের অন্যরা নয় বরং নির্দিষ্ট দু-একজনই দায়ি। আর তারা হচ্ছেন, বাদশাহ ও ক্রাউন প্রিন্স এবং রাষ্ট্রের আরো কিছু কর্মকর্তা। এরপরেও গ্রেপ্তার করা হবে না এমন আশ্বাস পেয়ে সৌদি আরবে ফিরে গিয়েছিলেন প্রিন্স আহমেদ। তবে সম্প্রতি বাদশাহর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের অভিযোগে আটক হলেন তিনি।