পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমছেই

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ স্বাভাবিকভাবেই নানামুখী সমস্যার কারণে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় কমছেই। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে সারা পৃথিবীতে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাসের কারণে পোশাক রপ্তানি আয়েও আরো বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে শুধু পোশাক খাতই নয়, দেশের সার্বিক রপ্তানি আয়েও ধাক্কা লেগেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ২ হাজার ৬২৪ কোটি ১৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪.৭৯ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে ১২.৭২ শতাংশ। অন্যদিকে, জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২ হাজার ১৮৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.৫৩ শতাংশ কম। লক্ষ্যের চেয়ে কমেছে আরো বেশি, ১৩.৪৫ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বিজিএমইএ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে বলে মনে করা হয়েছিল। ওই সুবিধা এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ না পেলেও আগামী দিনে আরো খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাবে রপ্তানি খাত। বিশেষ করে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমছে বিশ্বব্যাপী। এ কারণে ক্রেতারা দর আরো কমাচ্ছেন। অথচ উৎপাদন ব্যয় বাড়ছেই। ফলে উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জ আরো বাড়ছে। চলতি মার্চ মাস থেকেই বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পোশাক শিল্প মালিকরা। জানা গেছে, সুখবর নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর শুরু হলেও দ্বিতীয় মাস অগাস্টে এসেই ধাক্কা খায় রপ্তানি আয়। প্রথম মাস জুলাইয়ে গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছিল। কিন্তু আগস্ট মাসে গত বছরের আগস্টের চেয়ে সাড়ে ১১ শতাংশ আয় কম আসে। সেপ্টেম্বরে কমে ৭.৩০ শতাংশ। অক্টোবরে আরো বড় ধাক্কা খায়, এ মাসে কমে ১৭.১৯ শতাংশ। নভেম্বরে কমে প্রায় ১১ শতাংশ। টানা চার মাস কমার পর গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ৩ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু পরের মাস জানুয়ারিতে তা ১.৭ শতাংশ কমে যায়। এখন নতুন করে শুরু হয়েছে করোনা ভাইরাস। ইপিবি ও বিজিএমই পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা কোনোটাই স্পর্শ করতে পারেনি দেশের তৈরি পোশাক খাত। গত আট মাসে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় এসেছে ১ হাজার ৮৯ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ কম। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর ওভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১ হাজার ৯৪ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৮৮ শতাংশ কম। পাশাপাশি ১৪.৩৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ওভেনে। এদিকে, একক মাস হিসেবে ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে ৩৩২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭২ কোটি ২০ লাখ ডলার।
জানা গেছে, দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই খাত থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি আয় এসেছিল ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে তৈরি পোশাক খাতে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় অর্জিত হয়েছে ২ হাজার ১৮৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় এসেছিল ২ হাজার ৩১২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। সে হিসেবে এ খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫.৫৩ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি কমার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি তৈরি পোশাক খাত। লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১৩.৪৫ শতাংশ।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ‘র সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, প্রতি মূহুর্তে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। এমনিতেই আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে বেশ খারাপ অবস্থা চলছিল। নানা বাধা-বিপত্তির কারণে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছিলাম না। এখন করোনা ভাইরাস আমাদের সবকিছু ওলট-পালট করে দিচ্ছে। শিল্পের কাঁচামাল সঙ্কট তৈরি হবে। মার্চ থেকে যে সব পণ্য রপ্তানি করা হবে, তাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ইতোমধ্যে পোশাকের কিছু কাঁচামাল ও এক্সেসরিজের দাম বেড়ে গেছে। এর মধ্যে দেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে উৎপাদন ব্যয় অতিরিক্ত ৫ শতাংশ বাড়বে। সব মিলিয়ে একটা অস্বন্তিকর অবস্থা চলছে। এই পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য সরকারের সহায়তা দরকার। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ (৪০.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করে। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০.৫৫ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছিল ৪ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি (৪৫.৫০ বিলিয়ন) ডলার।