বেনাপোল পোর্টে ভ্রমণকর বই নেই, অনলাইনে দেয়ার পরামর্শ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেনাপোল চেকপোস্ট সোনালী ব্যাংক বুথে ভ্রমণকর রশিদ বই না থাকার কারণে এ পোর্ট দিয়ে ভারতে গমনকারী পাসপোর্টযাত্রীরা চরম দুভোর্গের শিকার হচ্ছেন। বেনাপোল আন্তজার্তিক চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার পাসপোর্টযাত্রী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করেন। এর মধ্যে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রায় ৫ হাজার যাত্রী বেনাপোল চেকপোস্ট সোনালী ব্যাংক বুথ থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে ভ্রমণকরের রশিদ সংগ্রহ করে ভারতে গমন করেন। ভ্রমণকরের রশিদ বই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। রশিদ বই সংকটের বিষয়ে দুই মাস আগে রাজস্ব বোর্ডকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। অনলাইনে ভ্রমণকর পরিশোধের সিস্টেম চালু হলেও অধিকাংশ যাত্রীই বেনাপোল সোনালী ব্যাংক বুথ থেকেই ভ্রমণকর রশিদ নিয়ে থাকেন।
বেনাপোল সোনালী ব্যাংক থেকে অন্য সময়ে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভ্রমণকর সংগ্রহে সমস্যা না হলেও বর্তমানে ব্যাংকে ভ্রমণকরের রশিদ বই না থাকার কারণে মহাবিপাকে পড়েছে পাসপোর্টযাত্রীরা। সারারাত বাস বা ট্রেনে ভ্রমণ করে আসার পর ক্লান্ত শরীরে বেনাপোল চেকপোস্টে ভ্রমণকরের রশিদ সংগ্রহের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগী ও শিশু যাত্রীরা। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। গতকাল শনিবার (৭ মার্চ) সকাল ৭টা থেকে এ সংক্রান্ত একটি জরুরি নোটিশ টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের সোনালী ব্যাংক বুথ শাখায়। নোটিশে বলা হয়েছে ভ্রমণকর (ট্রাভেল ট্যাক্স) রশিদ বই এর পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় শনিবার (৭ মার্চ) থেকে সোনালী ব্যাংক চেকপোস্ট বুথের মাধ্যমে ভারত ভ্রমণে ইচ্ছুক যাত্রীদেরকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক সরবরাহকৃত ম্যানুয়াল ভ্রমণকর রশিদ প্রদান করা সম্ভব হবে না। ভারত ভ্রমণকারী যাত্রীদের ট্রেজারি চালানে অথবা অনলাইনে ভ্রমণকর পরিশোধের জন্য পরামর্শ দেয়া হলো। ভারত ভ্রমণে যাওয়া সমর সাহা নামে এক পাসপোর্টযাত্রী জানান, তিনি সকাল ৮টায় বেনাপোল চেকপোস্টে এসে পৌঁছেছেন। লাইনে দাঁড়িয়ে ভ্রমণকর রশিদ সংগ্রহ করতে তার দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে তার। ব্যাংকের বুথে ভ্রমণকর রশিদ না থাকার কারণে টিআর চালানের মাধ্যমে ভ্রমণকর পরিশোধ করেছেন। এভাবে শতশত যাত্রীকে প্রতিদিন ভ্রমণকর সংগ্রহ করতে নানাভাবে দুভোর্গের শিকার হতে হচ্ছে। ঢাকা থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রী ফাতেমা আক্তার বলেন, ভারত ভ্রমণে যাওয়ার জন্য ভ্রমণকরের জন্য ব্যাংকে গেলে আমাদেরকে একটি করে ট্রেজারি চালান ধরিয়ে দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আমি মহিলা মানুষ। এতো কিছু বুঝি না। আবার একটি করে ট্রেজারি চালান দেয়া হয়েছে সেটি আবার ফটোকপি করে নিতে হচ্ছে। কোথা থেকে ফটোকপি করবো আর কোথা থেকেই বা চালান লিখে নেব তাও জানি না। এ সংক্রান্ত কোনো নোটিশও আগে থেকে জারি করা হয়নি। এমন আন্তর্জাতিক বন্দরে এ ধরনের সমস্যায় বড়ই বিব্র্রতকর অবস্থায় পড়লাম।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, এর আগে বেনাপোল চেকপোস্টে ভ্রমণকর দেয়ার ব্যাপারে এ ধরনের কোনো জটিলতা আমাদের চোখে পড়েনি। এমন বন্দরে এ ধরনের সমস্যা খুবই হতাশাজনক। যেখানে গড়ে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। সেখানে আগে থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া এ ধরনের কার্যক্রম এ বন্দরের সুনাম নষ্ট ছাড়া কিছুই না। সকাল থেকেই দেখছি যাত্রীরা চরম হতাশা নিয়ে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে। এ বিষয়ে বেনাপোল সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক রাকিবুল হাসান জানান, অনলাইনে ভ্রমণকর সংগ্রহের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। তবে আমাদের এখানে প্রিন্টার না থাকা ও অনলাইনে ম্যাসেজ দেখার কোনো ব্যবস্থা না থাকার কারণে যাত্রীরা অনলাইনে ভ্রমণকর পরিশোধ করার প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন না। গত কয়েকদিন ধরে ব্যাংকে ভ্রমণকর রশিদ বই না থাকার কারণে টিআর চালানের মাধ্যমে ভ্রমণকর নিতে হচ্ছে। টিআর চালানের মাধ্যমে ভ্রমণকর নিতে সময় লাগছে অনেক। এ জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, ভ্রমণকরের রশিদ বই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। রশিদ বই সংকটের কথা দুই মাস আগে রাজস্ব বোর্ডকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এ কারণে যাত্রীদের একটু কষ্ট ও সমস্যা হচ্ছে। ভ্রমণকর রশিদ বই এলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যন আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এতদিন ভ্রমণকর ব্যাংকের মাধ্যমে ম্যানুয়ালি পরিশোধ করা হতো। এজন্য মানুষকে দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়াও হয়রানির শিকার হতে হতো। এই কর আদায়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে (বিশেষত স্থলপথ ও জলপথে) অনলাইনে ভ্রমণকর আদায় ব্যবস্থা চালু করেছে এনবিআর। এজন্য সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করতে হবে সর্বোচ্চ ১০ টাকা। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর এবং দর্শনা ও খুলনার ভোমরা ভ্যাট কমিশনারেট অফিসে এটি চালু করা হয়েছে। শিগিগরই দেশের অন্যান্য স্থল ও নৌবন্দরে এ কার্যক্রম চালু করা হবে। অনলাইন ব্যবস্থায় এ কার্যক্রমে ভ্রমণকর আদায়ের ব্যবস্থাটি দেখভাল করবে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। সব ব্যাংকের ডেবিট, ক্রেডিট বা প্রি-পেইড কার্ড ছাড়াও বিকাশ, রকেট ও ইউ ক্যাশসব মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতিতে যে কোনো জায়গা থেকে কর পরিশোধ করা যাবে। এছাড়া সোনালী ব্যাংকের যে কোনো শাখার মাধ্যমেও এ অর্থ পরিশোধ করা যাবে। বর্তমানে স্থলপথ ও জলপথে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে ভ্রমণকর যথাক্রমে ৫০০ ও ৮০০ টাকা। আর শিশুদের ক্ষেত্রে (পাঁচ বছরের নিচে) তা অর্ধেক। অন্যদিকে বিমানে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার ক্ষেত্রে ভ্রমণকর আড়াই হাজার টাকা, সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ৮০০ টাকা ও অন্যান্য দেশে ১ হাজার ৮০০ টাকা। শিশুদের ক্ষেত্রে এই কর প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অর্ধেক।