স্কুল-কলেজে কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র খোলার চিন্তা

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ বিশ্বে অন্তত আশি দেশে নোভেল করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে। যার উৎপত্তি দু’মাস আগে চীনের উহান শহরে। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। আর এতে উদ্বেগ আস্তে আস্তে বাড়ছেই। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৪শ’ লোক ইতিমধ্যেই এই রোগে মারা গেছে। আক্রান্ত লাখের কাছাকাছি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা রোগী ধরা না পরলেও এই ভাইরাসের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে দেশ। এদিকে দেশে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সু্কল-কলেজেও কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র করার চিন্তা করছে সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট(আইইডিসিআর) জানায়, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে করোনা ভাইরাস বা কভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রলালয়। জাতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রীর নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সমূহের মন্ত্রীবর্গ ও সচিববৃন্দের সমন্বয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটি এখন থেকেই স্থানীয় স্কুল-কলেজ-অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন হলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র করা যায় কিনা তার সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করবেন। কোনো গ্রাম/পাড়া/মহল্লায় করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটলে সেখানে সামাজিক কোয়ারেন্টিন করার প্রস্তুতি এখন থেকেই গ্রহণ করা হবে। বিদেশ থেকে আগত সকল যাত্রীকে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিন মেনে চলতে সহায়তা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জেলা সমন্বয় কমিটিতে থাকবেন জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপার, মেডিক্যাল কলেজ/সদর হাসপাতালের পরিচালক/তত্ত্বাবধায়ক, জেলার সকল উপজেলা চেয়ারপারসন, সদর পৌরসভার মেয়র, সরকারী বিভাগসমূহের জেলা পর্যায়ের নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ প্রমুখ। উপজেলা সমন্বয় কমিটিতে থাকবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউএফপিও, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট পৌর মেয়র, সরকারি বিভাগসমূহের উপজেলা পর্যায়ের নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ প্রমুখ। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান যথাক্রমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটির উপদেষ্টা থাকবেন। জেলা-উপজেলা সমন্বয় কমিটগুলোর এ মুহূর্তে করণীয়-জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মাল্টি সেক্টোরাল কমিটিগুলো সক্রিয় করা। পরিস্থিতির চরম পর্যায়ে যেতে পারে এটা বিবেচনায় রেখে সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাখা। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আইসোলেশন হাসপাতাল/ইউনিট নির্ধারণ করে পূর্ণ প্রস্তুতি নিশ্চিত করা। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সকল গঠিত রেসপন্স টিমের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। এলাকায় অবস্থিত বিমান বন্দর, সমুদ্র বন্দর ও স্থল বন্দরে পরিচালিত স্ক্রিনিং কাজের তদারকি করা। জনসচেতনতার উদ্দেশ্যে প্রচার/ প্রচারণা করা, গুজব, বিভ্রান্তি দূর করতে সক্রিয় থাকতে হবে। এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যের জন্য আইইডিসিআর ওয়েবসাইট দেখার আহবান জানানো হয়েছে। সরকারের অন্যান্য বিভাগের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করা বিশেষ করে নিরাপত্তা, কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থাপনা ইত্যাদিতে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া।
কভিড-১৯ সংক্রান্ত যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণে পর্যায় অনুযায়ী আইইডিসিআর-এ কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, সিভিল সার্জন বা ইউএইচএফপিও-এর সিদ্ধান্ত অবহিত হওয়া। বিদেশ থেকে আগত সকলকে আবশ্যিকভাবে নিকটস্থ সিভিল সার্জন/ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে রিপোর্ট করতে হবে। রিপোর্টকালীন সময়ে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের তারিখ; সর্বশেষ ভ্রমণকৃত দেশ; দেশের সংখ্যা একাধিক হলে বিগত ১৪ দিনে যে সকল দেশ ভ্রমণ করেছেন সে সকল দেশের নাম; ভ্রমণের সময়কাল; দেশে অবস্থানকালীন ঠিকানা, ফোন নম্বর, মোবাইল ফোন নম্বর; দেশে প্রত্যাবর্তনের পরে দেশে অন্য কোন স্থানে/ জেলায় ভ্রমণ করে থাকলে সে স্থানের নাম/ঠিকানা লিখতে হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উপজেলা চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নিয়ে সভা করে এ বিষয়ে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবেন ও এ সংক্রান্ত তথ্য স্থানীয় কেবল টিভি অপারেটরদের মাধ্যমে প্রচার ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কাউকে করোনা আক্রান্ত বলে সন্দেহ হলে পরিচালক/ সিভিলসার্জন/ তত্ত্বাবধায়ক/ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তাৎক্ষনিকভাবে আইইডিসিআরকে অবহিত করবেন।
একটি ল্যাবেই করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণের পরীক্ষার প্রস্তুতি: করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণের পরীক্ষা সরকার আপাতত একটি ল্যাবরেটরিতে (পরীক্ষাগার) সীমিত রাখতে চায়। বিশ্বব্যাংকের টাকায় কোয়ারেন্টিন অবকাঠামো গড়ে তোলারও পরিকল্পনা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সারা বিশ্ব এখন উদ্বিগ এই ভাইরাস নিয়ে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কারও করোনা ভাইরাস শনাক্ত না হলেও এ নিয়ে রয়েছে উৎকণ্ঠা। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে আনেন একজন আইনজীবী। পরে হাইকোর্ট করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিদেশ থেকে যারা বাংলাদেশের স্থল, নৌ ও বিমানবন্দর দিয়ে প্রবেশ করছেন, তাদের কী ধরনের পরীক্ষা করা হচ্ছে, সে ব্যাপারে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য মৌখিক নির্দেশনা দেন। দেশে এ পর্যন্ত ১১১ জনের নমুনা (লালা বা রক্ত) পরীক্ষা করেছে আইইডিসিআর। কারও করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। তিন জন আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনে আছেন। তবে এদের মধ্যে বিদেশি কেউ নেই। বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরে এবং একটি ট্রেনে মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আপাতত নমুনা পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরীক্ষার যন্ত্র বা রিএজেন্ট থাকলেই চলবে না; জৈবনিরাপত্তা (বায়োসেফটি) আছে এমন ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা করতে হয়। যেন পরীক্ষার সময় স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত না হন। এ ধরনের ল্যাবরেটরি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) আছে। করোনা পরীক্ষার প্রযুক্তি ও রিএজেন্টও আছে তাদের। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, এক হাজার নমুনা পরীক্ষা করার সক্ষমতা সরকারি প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের আছে। প্রয়োজন হলে আইসিডিডিআরবির সহায়তা নেয়া হবে।
কুযেত গমনেচ্ছুদের স্বাস্থ্য সনদের প্রয়োজন নেই: আইইডিসিআর জানায়, কুয়েত সরকার ও স্থানীয় কুয়েত দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, বাংলাদেশের নাগরিকদের কুয়েত যেতে কভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সনদের প্রয়োজন নেই। সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, ইটালি ছাড়া অন্যান্য কোন দেশে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রবাসী বাংলাদেশী কোভিড-১৯ আক্রান্ত হননি। সিঙ্গাপুরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন বাংলাদেশি রোগীর অবস্থার উন্নতি হয় নি। দিল্লিতে উহান থেকে আগত ২৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক দিল্লিী শহর থেকে ৪০ মাইল দূরে একটি কোয়ারেন্টিনে আছেন। মংলা বন্দরে অপেক্ষারত জাহাজের তিন নাবিকের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি: মংলা বন্দরে দায়িত্ব পালনরত মংলা বন্দর স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মেডিক্যাল টিম সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, মংলা সমুদ্র বন্দরে ইন্দোনেশিয়া থেকে আগত মালবাহী জাহাজে ৩ জন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারেন এমন তিনজন ব্যক্তি শনাক্ত করা হয়। তারা ফিলিপিনের নাগরিক। তাদের রোগতাত্ত্বিক তথ্য নিয়ে জানা গেছে যে, তারা ১৪ দিনের অনেক পূর্বেই ইন্দোনেশিয়া ত্যাগ করেছেন এবং তারা এর মধ্যে জাহাজ থেকে কোথাও নামেন নি। তাদের করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তারপরেও অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে তারা পর্যবেক্ষণে থাকবেন।