গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা পয়েন্ট কমেছে বাংলাদেশের

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ গণতন্ত্র, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিয়ে গবেষণা করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন ফ্রিডম হাউজের বার্ষিক প্রতিবেদনে ২ পয়েন্ট পিছিয়েছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার সংগঠনটি প্রকাশ করে তাদের ‘ফ্রিডম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড-২০২০’। বাংলাদেশকে সংগঠনটি রেখেছে ‘আংশিক মুক্ত’ দেশগুলোর কাতারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দেশের বিরোধী দল ও এর মিত্রদের হয়রানি করে রাজনৈতিক ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেছে। এছাড়া শাসক দলের হয়রানির শিকার হয়েছে সমালোচনাকারী গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজও। বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দুর্নীতি অত্যন্ত বড় ধরনের একটি সমস্যা এবং দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টাগুলো রাজনৈতিক কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে ফ্রিডম হাউজের প্রতিবেদনে।
২০১৮ সালে ফ্রিডম হাউজের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ পেয়েছিল ১০০-এর মধ্যে ৪১।
কিন্তু ২০১৯ সালে তা আরো নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ৩৯-এ। গত এক দশকে এ সূচকে নিচের দিকে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯ নম্বরে। এ বছরের প্রাপ্ত ৩৯ পয়েন্টের মধ্যে রাজনৈতিক অধিকারে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪০ এর মধ্যে ১৫। আর নাগরিক অধিকার ক্যাটাগরিতে ৬০ এর মধ্যে পেয়েছে ২৪। মোট প্রাপ্ত স্কোর ৩৯ গতবারের তুলনায় ২ কম। দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির এমন দুর্দশার জন্য সংগঠনটি কিছু প্রধান পয়েন্ট উল্লেখ করেছে। এরমধ্যে সবার প্রথমে রাখা হয়েছে, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে থাকা ব্যাপক অভিযোগের বিষয়টি। বলা হয়, গত বছরের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় বসেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়া জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় পায়। কিন্তু এ নির্বাচনে ছিলো সহিংসতা, বিরোধী দলীয় প্রার্থী ও সমর্থকদের ভীতি প্রদর্শন, শাসক দলের পক্ষে কারচুপি এবং নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণে বাধা দেয়ার মতো অভিযোগ। এছাড়া, বিরোধী দল বিএনপি’র প্রধান খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে কারাগারে রয়েছেন সেটি বলা হয় ওই প্রতিবেদনে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে জয়ী হওয়া এমপিরা প্রথমে বয়কট করলেও পরবর্তীতে এপ্রিল মাসে তাদের মধ্যে চারজন সংসদে যোগ দেন সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে আসা সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু তাদের শিবিরগুলোতে জরুরি সেবার স্বল্পতা রয়েছে। শিবিরগুলোকে নিরাপত্তাহীন বলে উল্লেখ করেছে ফ্রিডম হাউজ। বলেছে, বাংলাদেশ সরকার গত বছর থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর ক্রমাগত আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গাদের মোবাইল সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ও শিবিরের চারদিকে বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয় ওই প্রতিবেদনে। বৈশ্বিক সংকট: শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বেই গণতন্ত্রের জন্য কোনো সুসংবাদ নেই ফ্রিডম হাউজের প্রতিবেদনে। এতে বিশ্বের ১৯৫ টি দেশ ও ১৫ টি অঞ্চলের স্বাধীনতার চিত্র বর্ণনা করা হয়েছে। গত ১৪ বছর ধরে লাগাতার বৈশ্বি গণতন্ত্র পশ্চাদমুখী। ২০১৯ সালে শুধুমাত্র ৩৭টি দেশ গণতন্ত্র সূচকে ইতিবাচক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পেরেছে। অপরদিকে ৬৪ দেশে গণতন্ত্রের অবস্থার অবনতি হয়েছে। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের অবস্থারও অবনতি হয়েছে। গত বছর যেখানে দেশটির স্কোর ছিল ৭৫, এ বছর সেটি নেমে এসেছে ৭১-এ। বলা হয়েছে, আসামে এনআরসি’র কারণে নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ। এছাড়া, স্থান পেয়েছে সিএএ নিয়ে বিক্ষোভ ও বাবরি মসজিদ ইস্যুও।