ঝিনুকে মুক্ত চাষ করে স্বাবলম্বী হতে চান দেলোয়ার

0

আলমগীর খান, কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) ॥ ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার মামুনসিয়া গ্রামের শিক্ষিত যুবক দেলোয়ার হুসাইন। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে সরকারি চাকরির চেষ্টা করেও পাননি। শেষমেষ কিছু একটা করার চেষ্টায় ময়মনসিংহ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিণ নেন তিনি। চলে আসেন নিজ গ্রামে। সেই থেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পুকুরে ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করে এখন তিনি হয়েছেন অনেকটাই স্বাবলম্বী।
নিজেদের ১০ শতক জলকর (পুকুর) দিয়ে ঝিনুক থেকে মুক্তা আহরণে নেমে পড়েন তিনি। সাথে চীনা হাঁসের খামার পাশাপাশি বাড়ির সাথেই এলাকার ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে কোচিং সেন্টার খোলেন তিনি। এ ক্ষেত্রে অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে তিনি কোনো টাকা পয়সা নেন না। একটি পরিপূর্ণ কিন্ডার গার্টেন স্কুল খুলবেন বলে তার ইচ্ছার কথা জানান তিনি। দেলোয়ার হুসাইন বলেন, পুকুরে ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের পাশাপাশি মাছও চাষ করেছি। কারণ মাছের খাবার দিলে ওই খাবার থেকেই এবং মাছের উচ্ছিষ্ট থেকে পানিতে যে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়, সেই ভেসে থাকা ব্যাকটেরিয়া খেয়েই ঝিনুক বেঁচে থাকে। যে কারণে ঝিনুকের কোনো বাড়তি খাবার দিতে হয় না। তিনি বলেন, চাষ করা ঝিনুক নিজে অপারেশন করে তার মধ্যে লকেট সাইজের বিভিন্ন ধরনের ডিজাইনের ডাইস দুই পাশে দুটি বসিয়ে দেওয়া হয়। পরে আবারো ওই ঝিনুক নেটের প্যাকেটে মধ্যে রেখে পুকুরে পানিতে বেঁধে রাখা হয়। এছাড়াও পুকুরের পানিতে অপারেশনের মাধ্যমে ডাইস বসানো যে ঝিনুকগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়, সে ঝিনুকগুলোতে বিশেষ চি‎হ্ন দিয়ে রাখা হয়। ঝিনুকের লালা ডাইসের ওপর প্রলেপ (লেয়ার) পড়ে পরিপূর্ণ মুক্তা হতে সময় লাগে এক বছর। তিনি বলেন, ঝিনুকের মধ্যে ডাইস বসিয়ে ২ হাজারেও বেশি ঝিনুক পুকুরের পানিতে রাখা হয়েছে। তার এই কর্ম-পরিকল্পনার বয়স ৭মাস। তিনি ইতোমধ্যেই পরীক্ষামূলক কিছু ঝিনুক তুলে দেখেছেন তাতে মুক্তা জমতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, আশা করি আর কয়েক মাস পর ২ হাজার ঝিনুক থেকে ৪হাজার বিভিন্ন ডিজাইনের মুক্ত পাবো। যা ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবো। ঝিনুক থেকে বিভিন্ন ডিজাইনের তৈরি মুক্তা দেশে এবং ভারতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে তিনি জানান। মুক্তা নেয়ার জন্য পাইকারি অনেক ক্রেতাই তার সাথে যোগাযোগ রাখছেন। এই মুক্তা সোনা, রুপাসহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থ দিয়ে বাঁধিয়ে লকেট হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর ঝিনুকের শক্ত খোসা মহিলাদের বিভিন্ন অলঙ্কারে ব্যবহার হয়। দেলোয়ার হুসাইন বলেন, এ কাজে ৫দিনের টেনিং নিয়েই ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করা সম্ভব। তেমন একটা টাকাও খরচ লাগে না। নিজেদের ছোট একটা পুকুর থাকলে তাতে ৫০ হাজার টাকা খরচ করলেই যথেষ্ট। দেলোয়ার নিজেই ঝিনুকের খোসা দিয়ে তৈরি পাউডার বা ডেন্টাল পাউডার দিয়ে আল্লাহু লেখা ,শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, নৌকা মার্কা, ঠাকুরের মূর্তি, বিভিন্ন নামসহ পছন্দ মত ডাইস তৈরি করে ওই ডাইস অপারেশনের মাধ্যমে জীবিত ঝিনুকের মধ্যে বসিয়ে দেন। আর ডাইসের আকৃতি নিয়ে ঝিনুকের মধ্যে মুক্তা তৈরি হয়। তিনি এ ডাইস ভারতসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রিও করে থাকেন। ঝিনুকের মধ্যে থেকে মুক্তা বের করে আনার সময় ওই ঝিনুক মারা যায়। যে কারণে তিনি ঝিনুকের ভেতরের মাংস নষ্ট না করে হাঁসের খাওয়ানোর জন্য চীনা হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন। তিনি বলেন, দেশে আমার মত প্রচুর বেকার যুবক রয়েছে, তাদের জন্য তেমন কিছু করতে না পারলেও তাদেরকে জানাতে চায়, প্রতিষ্ঠিত হতে হলে সরকারি চাকরি লাগে না। লাগে শুধু মনোবল, কর্মদক্ষতা ও সততা। তিনি ভবিষ্যতে এলাকার বেকার যুবকদের কাজে লাগাতে চান।