সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞান নির্বাসনের পথে

0

ইকতেদার আহমেদ
সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞান- এ তিনটির একটি অপরটির পরিপূরক। সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানের পরিপন্থী যেকোনো কাজই অন্যায়। তাই সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানকে বলা হয় ন্যায়ের সমার্থক। একজন সৎ ব্যক্তির পক্ষে কখনো কোনো অনৈতিক ও নীতিজ্ঞানবহির্ভূত কাজ করা সম্ভব নয়। যে কোনো অসৎ, অনৈতিক ও নীতিজ্ঞানবহির্ভূত কাজ অন্যায় হিসেবে পরিগণিত। ন্যায়ের বিপরীত হলো অন্যায়। ন্যায় সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানকে আকৃষ্ট করে থাকে। পৃথিবীর যেকোনো দেশ ও সমাজ যত বেশি সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ দিয়ে সমৃদ্ধ হবে, সে দেশ ও সমাজ তত বেশি আদর্শ ও ন্যায়নিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। পৃথিবীর প্রধান সব ধর্মমত যথা ইসলাম, খ্রিষ্টান, ইহুদি, বৌদ্ধ প্রভৃতি ধর্মে ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধাচরণের কথা বলা হয়েছে। সব দেশের প্রচলিত আইনে অন্যায়-গর্হিত কাজ মাত্রাভেদে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বীর জন্য ঈমানদার হওয়া অত্যাবশ্যক। ঈমানদার ব্যক্তি মনেপ্রাণে অন্যায়কে বর্জন ও ঘৃণা করেন। পবিত্র হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে- একজন ঈমানদার ব্যক্তি যেকোনো অন্যায় দেখলে তা শক্তি দিয়ে প্রতিহত করবেন, শক্তি দিয়ে প্রতিহত করার সাহস না থাকলে সে ক্ষেত্রে মুখে প্রতিবাদ করবেন আর মুখে প্রতিবাদ করার সাহসও যদি দেখাতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে অন্তত ঘৃণা করবেন। প্রথমোক্তটির চেয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয়টি অপেক্ষাকৃত দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক। আমাদের বাংলাদেশের অধিবাসীদের ৯০ শতাংশের অধিক ইসলাম ধর্মাবলম্বী। কিন্তু এ কথাটি সত্য আজ আমাদের দেশে দুর্বল ঈমানদার মানুষের সংখ্যাই অধিক। বর্তমানে আমাদের এ পৃথিবীতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স প্রভৃতি নিজেদের সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানসম্পন্ন দেশ ও জাতি হিসেবে দাবি করে থাকে। কিন্তু তাদের এ দাবি অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে অনেকটা সঠিক হলেও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বেঠিক।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ‘বহুজাতিক বাহিনী’ ইরাকের কাছে মানববিধ্বংসী রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র রয়েছে- এ অভিযোগে ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ করেছিল। বহুজাতিক সম্মিলিত বাহিনীর কাছে ইরাক পরাভূত হয় এবং আত্মগোপনে থাকাকালে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন গ্রেফতার হলে প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে তা কার্যকর করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী সাদ্দাম হোসেনকে মধ্যপ্রাচ্যের তথা বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ মনে করে তাকে উৎখাতপূর্বক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সেখানে ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা স্থাপনে’ সচেষ্ট হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সাদ্দামের উৎখাত এবং তার মৃত্যু-পরবর্তী সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য এখন অস্থিতিশীল। ইত্যেমধ্যে এই সত্য উদঘাটিত হয়েছে যে, মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতেই ইরাক আক্রমণ করা হয়েছিল এবং এটা ছিল ভুল। এ কথাটি ঠিক যে, ন্যায় প্রতিষ্ঠার কথা বলে ইরাক আক্রমণ করা হয়েছিল। কিন্তু আজ বিশ্ববাসীর কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট, এ হামলার মধ্য দিয়ে ন্যায় অবদমিত হয়েছে এবং মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অন্যায়। আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত রাশিয়ার বিতাড়নের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ও মদদে আল কায়দা ও তালেবান বাহিনীর সৃষ্টি করা হয়েছিল। এ দু’টি বাহিনীর সম্মিলিত শক্তি সামর্থ্যরে কারণে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত বাহিনী বিতাড়িত হলে তথায় আলকায়েদা ও তালেবান সমর্থিত ‘ইসলামী শাসনব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়। পরে দেখা গেল, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী আফগানিস্তান থেকে তালেবান ও আলকায়েদা উৎখাতে তৎপর। কার্যত এ দু’টি বাহিনীকে উৎখাতপূর্বক তথায় তারা তাঁবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। আফগানিস্তান এখনো অস্থিতিশীল। অথচ অন্যায়কে প্রতিহত করার নামেই আফগানিস্তানে বহুজাতিক বাহিনীর অভিযান পরিচালিত হয়েছিল।
সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে আইএসআইএসের যে আবির্ভাব ঘটেছে; ধারণা করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের মদদেই এ বাহিনীর সৃষ্টি। এ বাহিনী যখন ব্যাপক সফলতা লাভ করতে থাকে তখন দেখা গেল, যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা এর অগ্রাভিযান থামিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। য্ক্তুরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আসল উদ্দেশ্য মধ্যপ্রাচ্যের তেলসম্পদের ওপর নিজেদের আধিপত্য অক্ষুণ্ণ রাখা। আর যখনই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর যেকোনো জাতীয়তাবাদী নেতা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রভাব বলয় থেকে বের হয়ে এসে নিজ পায়ে দাঁড়াতে প্রত্যয়ী হয়েছে তখনই দেখা গেছেÑ সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে অন্যায়ের আশ্রয় নিয়ে তাদের স্বার্থসিদ্ধি ঘটিয়েছে। বিগত শতকের ৬০-৭০ দশক অবধি আগেকার পূর্ব পাকিস্তান ও বর্তমান বাংলাদেশ ছিল খুবই দারিদ্র্যপীড়িত। সে সময় এ দেশটির এক ব্যাপক জনগোষ্ঠী অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করত। সে তুলনায় আজ অনাহারে বা অর্ধাহারে থাকা মানুষের সংখ্যা নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস একদা বলেছিলেন, বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের প্রথমার্ধে বাংলাদেশে দারিদ্র্য জাদুঘরে স্থান পাবে। ড. ইউনূসের বক্তব্য যে সত্যে পরিণত হতে চলেছে, তা আজ আর কেউ অবিশ্বাস করে না। কিন্তু শুধু দরিদ্রতা দূরীভূত করে এবং সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানের অনুপস্থিতিতে আমাদের পক্ষে কি সম্ভব সুখী ও সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা? সে প্রশ্নটি আজ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের মত প্রকাশের সুযোগ পায়। বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে গণতান্ত্রিক দেশ। এ দেশে দলীয় সরকারের অধীনে যতগুলো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, এর প্রতিটিতেই ক্ষমতাসীন দল বিজয়ী হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর মধ্যে তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ ও দশম সংসদ নির্বাচনে কলুষতার মাত্রা এত অধিক ছিল যে, এ নির্বাচনগুলো জনগণের স্বাধীন মতামতের প্রতিফলনে অনুষ্ঠিত হয়েছে- এমনটি বলার অবকাশ নেই। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অনুসৃত হয় এমন সব দেশে জনপ্রতিনিধিরা রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পরিচালনা করে থাকেন।
এ নির্বাচনগুলো অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কোনো মহল থেকে কোনো ধরনের প্রশ্ন উত্থাপিত হয় না। আর কোনো নির্বাচন যদি কলুষতায় পরিপূর্ণ হয় তখন স্বভাবতই নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। এরূপ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী যদি সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানসম্পন্ন হন তার পক্ষে কোনো ধরনের অন্যায়ের আশ্রয় গ্রহণপূর্বক নির্বাচনকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। আমাদের দেশসহ পৃথিবীর সর্বত্র জাতীয় নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হয়ে থাকে। দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কলুষতার অবলম্বনে যদি ক্ষমতাসীনরা বিজয় হাসিল করেন, সে বিজয় কোনোভাবেই দলের ও দেশের জন্য গৌরবের নয়। কিন্তু আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে আজ এ কথাই সত্য যে, এ ধরনের বিজয় হাসিলের ‘গৌরব’ দেশের বড় দলগুলোর রয়েছে। জাতীয় নির্বাচন একটি বিরাট কর্মযজ্ঞ। এ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সহায়তা অত্যাবশ্যক। যেকোনো দলীয় সরকার জনমতের প্রতি উপেক্ষা দেখিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে চাইলে তাদের নির্বাচনী কাজের সাথে সম্পৃক্ত শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আনুকূল্য গ্রহণের প্রয়োজন হয়। আর এ ধরনের আনুকূল্য গ্রহণ কোনো কিছুর বিনিময় ছাড়া হয় না। সে বিষয়ে সচেতন দেশবাসী সম্যক অবহিত। জনগণের স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে যদি কোনো দল সরকার গঠনপূর্বক রাষ্ট্র পরিচালনা করে, সে নির্বাচনকে বলা হয় বৈধ নির্বাচন। আর নির্বাচন বৈধ হওয়ার কারণে সরকারের বৈধতাও তখন দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। একটি সরকার বৈধ হলে সে সরকার পরিচালনার ভার যাদের ওপর ন্যস্ত, তারা সর্বদা সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানের প্রতি আস্থাশীল থেকে দাফতরিক কাজ সমাধায় সচেষ্ট থাকেন।
নির্বাচনে স্বচ্ছতা ক্ষুণ্ণ করার মাধ্যমে যখন কোনো দল ক্ষমতাসীন হয় তখন নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে, সে দলটি যাদের অনৈতিক সহযোগিতার কারণে ক্ষমতাসীন হয়েছে তাদের পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে আইন ও বিধিবিধানের অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করে হলেও অতিমূল্যায়ন করতে দেখা যায়। এরূপ অতিমূল্যায়ন করতে গিয়ে সরকারের বিভিন্ন বিভাগে পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ, সৎ, দক্ষ, যোগ্য ও মেধাবীদের অবমূল্যায়নপূর্বক রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাকে প্রাধান্য দিয়ে দলবাজ বিবেচনায়, কনিষ্ঠদের অযোগ্যতাকে সার্বিকভাবে উপেক্ষা করে সততা ও যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তাদের আকর্ষণীয় পদ দিয়ে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। অনুরূপ, গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের ক্ষেত্রেও দেখা যায় সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও মেধাবীদের বঞ্চিত করে অসৎ, অদক্ষ ও অযোগ্যদের লোভনীয় পদে বসিয়ে বিভিন্ন দফতরের কর্মস্থলের শৃঙ্খলা বিনষ্ট করা হচ্ছে। এমন কিছু বিভাগের কথা শোনা যায়, যেখানে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাকে মুখ্য বিবেচনাপূর্বক পদোন্নতি ও পদায়ন- উভয় ক্ষেত্রে যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে শত শত কর্মকর্তাকে অতিক্রান্ত করা হয়েছে। যেকোনো বিভাগে যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে জ্যেষ্ঠদের অতিক্রান্তের মাধ্যমে যদি পদোন্নতি ও পদায়ন কার্যকর করা হয় সে বিভাগে সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানের কোনো বালাই থাকে না। গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে, দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন। যেকোনো দেশে দুষ্টরা অসৎ ও নীতিহীন হয়ে থাকে। কোনো ধরনের অন্যায় করার ক্ষেত্রে তাদের বিবেক কখনো বাধা হয় না। অপর দিকে পৃথিবীর সর্বত্র শিষ্টরা ন্যায়ের সপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে থাকেন। সরকারের পক্ষে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন তখনই সম্ভব যখন সরকারের বৈধতা প্রশ্নে কোনো ধরনের বিতর্ক থাকে না। বিগত দুই দশকেরও অধিক সময় ধরে আমাদের দেশে ক্রমান্বয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা প্রধান যোগ্যতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ কারণে আজ বিভিন্ন বিভাগের শত শত কর্মকর্তা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে কর্মহীন থেকেই বেতন ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে চলেছেন। এতে সরকারি অর্থের যে ব্যাপক অপচয় ঘটছে সে দিকে সরকারের কোনো ভ্রƒক্ষেপ নেই। অপর দিকে যেসব কর্মকর্তাকে ‘শেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’ হিসেবে কর্মহীন রাখা হচ্ছে তারা তাদের জ্যেষ্ঠতা, সততা, দক্ষতা ও যোগ্যাতার মূল্যায়ন না হওয়ায় হতাশায় ভোগেন। এদের অনেকেরই কথা ‘জনগণের করের টাকায় আমাদের বেতনভাতা দেয়া হয়। আর আমরা যদি অযোগ্য, অদক্ষ বা অসৎ হই, আমাদের চাকরিতে রেখে কেন কর্মহীন অবস্থায় বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার তকমা এঁটে দেয়া হচ্ছে?’
দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য সরকারব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানের উপস্থিতি অপরিহার্য। রাষ্ট্রপরিচালনার ভার রাজনীতিবিদদের ওপর ন্যস্ত। সরকারি কর্মকর্তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের সহায়তা করে থাকেন। একটি মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে মন্ত্রী পদধারী রাজনীতিবিদদের মধ্যে সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞান থাকলে তার অধীনে কারো পক্ষে যেকোনো ধরনের অসৎ, অনৈতিক ও নীতিজ্ঞানবহির্ভূত কাজ করা দুরূহ। মন্ত্রীসহ সরকারি কর্মকর্তাদের বেতনভাতা ও সুযোগ-সুবিধাদি বাবদ ব্যয়িত অর্থ সরকারের কোষাগার থেকে নির্বাহ করা হয়। কোষাগারটির অর্থের জোগান আসে জনগণ দেয়া কর থেকে। করের টাকা সঠিকভাবে ব্যয় করা হচ্ছে কি না তা জানার অধিকার জনগণের আছে। জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে জনমতের প্রতিফলনে দেশ ও জাতির জন্য সঠিক নেতৃত্ব নির্ধারিত হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের সঠিক নেতৃত্ব দেশ ও জাতিকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়। আমাদের দেশটির অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা কাক্সিক্ষত উন্নতি ও সমৃদ্ধি অর্জনে আজো ব্যর্থ। এর কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যায়, অস্বচ্ছ নির্বাচন সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞান বিবর্জিত কাজের শক্তির উৎসের প্রধান খোরাক। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা স্বচ্ছ হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানের নির্বাসন ঠেকিয়ে রাখা দায়।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: [email protected]