মনিরামপুরে ভূমিদস্যু পবিত্র বিশ্বাসের হাত থেকে রেহাই পেতে ছিন্নমূল পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

0

স্টাফ রিপোর্টার, মনিরামপুর (যশোর) ॥ যশোরের মনিরামপুরে ভবদহের টেকা নদীর তীরে সরকারি জমিতে নির্মিত বসতবাড়ি দখলকারী ভূমিদস্যু পবিত্র বিশ্বাসের হাত থেকে রক্ষা পাবার আকুতি জানিয়ে চারটি ছিন্নমূল পরিবারের পক্ষে শনিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে, বসতবাড়ি দখলের পর পবিত্র বিশ্বাস এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রায় প্রতিরাতেই অন্যান্য ছিন্নমূলদের হুমকি-ধামকি দেয়া অব্যাহত রেখেছেন। ছিন্নমূলদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন রমেশ মল্লিক।
মনিরামপুর প্রেস কাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছিন্নমূল পরিবারের রমেশ মল্লিক ও তার স্ত্রী উষা মল্লিক, বিধবা বোন দিলু গাইন এবং বিধবা বৌদি উর্মিলা মল্লিক, শুকান্ত মল্লিকসহ আরো অনেকে।
লিখিত বক্তব্যে রমেশ মল্লিক জানান, তারা বংশ পরম্পরায় ব্রিটিশ আমল থেকে পাঁচাকড়ি মৌজার সরকারি ১৫ শতক জমিতে (টেকা নদীর তীরে) চারটি পরিবার বসবাস করে আসছে। গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত ১১ টার দিকে পাঁচাকাড়ি গ্রামের হরেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের ছেলে নেহালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক প্রভাবশালী পবিত্র বিশ্বাস তার লোকজন নিয়ে ছোটভাই সুফেন মল্লিকের ঘরবাড়ি দখল করেন। তার পর থেকে সুফেন মল্লিক ভারতে চলে গেছেন। এ ঘটনায় অভিযোগ করা হলে ৪ ফেব্রুয়ারি নেহালপুর পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই সৈয়দ বখতিয়ারের মধ্যস্থতায় দু পক্ষের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে পবিত্র বিশ্বাস একটি স্ট্যাম্প দাখিল করেন। তাতে উল্লেখ করা হয়, পবিত্র বিশ্বাস পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে সুফেন মল্লিক ও তার স্ত্রী তাপসী মল্লিকের কাছ থেকে ২৪৬ নম্বর পাঁচাকড়ি মৌজার ৩৯৭৯ নম্বর দাগের ১৬ শতক জমি (ঘরবাড়িসহ) ক্রয় করেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়। তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায় ওই তদন্ত কমিটি। কিন্তু তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত না মেনে পবিত্র বিশ্বাস এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রায় প্রতিরাতেই অন্যান্য ছিন্নমূলদের প্রাণনাশসহ হুমকি দেয়া অব্যাহত রেখেছেন। এমনকি পবিত্র বিশ্বাস ষড়যন্ত্র করে তার কাকাতো ভাই বিশ্বজিৎ মল্লিককে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করিয়ে হয়রানি করেন। আর এসব ঘটনার প্রতিবাদে এলাকাবাসী পবিত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ছিন্নমূল মানুষের পাশে থেকে বিভিন্ন অন্দোলনের কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
লিখিত বক্তব্যে আরো জানানো হয়, পবিত্রের স্ট্যাম্পে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৪৬ নম্বর পাঁচাকড়ি মৌজার ৩৯৭৯ নম্বর দাগে ৬৩.৩৭ শতক জমির মধ্যে তিনি ক্রয় করেছেন ১৬ শতক। কিন্তু ২৪৬ নম্বর মৌজা হলো কপালীয়া মৌজা। প্রকৃতপক্ষে ২৪৫ নম্বর পাঁচাকড়ি মৌজা। এ মৌজায় ১ নম্বর খাস খতিয়ানে সরকারি জমি রয়েছে ৩৯৭৯ দাগে মোট ১৫ শতক। এই ১৫ শতক জমিতে ছিন্নমূল চারটি পরিবার বংশানুক্রমে বাসবাস করে আসছে। এছাড়া পবিত্রের দেয়া ওই স্ট্যাম্পে তাপসী মল্লিক এবং সুফেন মল্লিকের নামের স্বাক্ষর করা রয়েছে। কিন্তু ওই স্বাক্ষর সুফেনের নয়। একই হাতে দুইজনের স্বাক্ষর করা হয়েছে। তাছাড়া পবিত্র বিশ্বাস কী ভাবে সরকারি খাস খতিয়ানের ১৬ শতক জমি ক্রয় করলেন এটাও তাদের বোধগম্য নয়।
রমেশ মল্লিক জানান, ইতিমধ্যে অবৈধ দখলকারী পবিত্র বিশ্বাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এমপি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছি। ইতিমধ্যে প্রতিমন্ত্রী ওই জমি থেকে পবিত্রকে উচ্ছেদের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত পবিত্রকে উচ্ছেদ করা হয়নি। এ অবস্থায় ভূমিদস্যু পবিত্র বিশ্বাসের হাত থেকে ছিন্নমূল মানুষদের রক্ষা করে ওই বসতবাড়িতে পরিবার-পরিজন নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করার সার্বিক সহযোগিতার আহবান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।