পুলিশকে ছাত্রলীগ কর্মীদের মারপিট, যশোর এমএম কলেজের আসাদ হলে অভিযান

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোর সরকারি এমএম কলেজে গতকাল মঙ্গলবার ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে এক পুলিশ সদস্য প্রহৃত হওয়ার পর কলেজের আসাদ হলে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় হামলাকারীদের আটকে কলেজের পাশের কয়েকটি মেসেও অভিযান চালানো হয়। অভিযান চলাকালে ৭জনকে আটক করা হয় ও অস্ত্র খবর পাওয়া গেলেও গতকাল বিস্তারিত জানায়নি পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, দুপুরে এমএম কলেজে মেয়েলি ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী গ্র“পের বলে পরিচিত ছাত্রলীগ কর্মীরা সাদ্দাম নামে এক ছাত্রকে মারধর করেন। সাদ্দাম কলেজে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। এসময় তিনি মাথায় আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত জখম হন। তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে সেখানে ডিএসবিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন অবস্থান নেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি’র) একটি সূত্র জানায়, দুপুর ২টার দিকে তাদের কনস্টেবল তৌহিদ এমএম কলেজের আসাদ হলের সামনের রাস্তায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় তিনি সন্দেহভাজন ৩ যুবককে দেখতে পেয়ে তাদের দাঁড় করিয়ে শরীর তল্লাশি করেন। এক পর্যায়ে তিনি এক যুবকের কোমরে একটি পিস্তল দেখতে পান। কিন্তু অস্ত্রধারী ওই যুবক অবস্থা বেগতিক দেখে দৌড়ে আসাদ হলের দিকে যেতে থাকেন। ডিএসবি কনস্টেবল তৌহিদও তার পিছু নেন। এ সময় আসাদ হল থেকে ৩০-৪০ জন যুবক বেরিয়ে এসে আচমকা কনস্টেবল তৌহিদের হামলা চালান। তারা তাকে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মারেন। এ খবর পেয়ে ডিবি পুলিশ, কোতয়ালি পুলিশ ও ডিএসবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) তৌহিদুল ইসলাম জানান, তাদের ডিএসবি’র একজন কনস্টেবল আসাদ হলের সামনে সন্দেহভাজন কয়েক যুবককে তল্লাশির সময় এক যুবকের কাছে অস্ত্র জাতীয় কিছু দেখতে পান। এ সময় ওই যুবক দৌড় দেয়। কিন্তু এরই মধ্যে আচমকা বেশ কয়েকজন এসে তাদের ওই কনস্টেবলকে মারধর করেন। এ খবর পেয়ে পুলিশ এম এম কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আসাদ হলে তল্লাশি চালায়। পরে আসাদ হল থেকে হামলার সাথে জড়িত সন্দেহে তারা কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে এসেছেন। তিনি আরো বলেন, ডিএসবি কনস্টেবলের ওপর হামলার ঘটনায় তারা জড়িতদের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা করবেন।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ডিবি পুলিশের ওসি মারুফ আহম্মদ, কোতয়ালি থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান ও ডিএসবি’র ডিআই-ওয়ান এম মসিউর রহমানের নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিপুল সদস্য আসাদ হলে তল্লাশি চালান। এর আগে এম এম কলেজ ও আসাদ হলে ঢোকার সকল গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। দেড় ঘন্টা ধরে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে হামলার সাথে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করা হয়। এছাড়া এম এম কলেজ থেকে একজন এবং খড়কির ডিজিটাল ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে আরো একজনকে আটক করা হয়। কোতয়ালি থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, অভিযানে ৭ জনকে তারা আটক করেছেন। আটককৃতদের মধ্যে ২ জনের নাম আক্তারুজ্জামান ওরফে আক্তার এবং তৌফিক বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু অপর ৫ জনের নাম জানাতে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন। এদিকে আসাদ হলে পুলিশের অভিযানে অস্ত্র উদ্ধারের গুঞ্জন রয়েছে। তবে পুলিশের কোন কর্মকর্তা এখনো পর্যন্ত সেখান থেকে অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি স্বীকার করেননি। এদিকে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী বলেন, দলে অনেক কর্মী রয়েছে। তারা নিজেদের বিভিন্ন পক্ষের পরিচয় দেয়। কিন্ত তার মানে এই নয় যে, তাদের অপরাধের দায়িত্ব দল নেবে। উল্লেখ্য, এমএম কলেজের আসাদ হল দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের দখলে রয়েছে। ক্যাডারদের কাছে অস্ত্রও রয়েছে। ছাত্রলীগের এসব অস্ত্রধারী ক্যাডারদের হাতে এম এম কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জিম্মি হয়ে আছেন। এম এম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ আবুল কওছার এ বিষয়ে দৈনিক লোকসমাজকে জানান, দুপুরে খবর পান একাডেমিক ভবনের ৪ তলায় কে বা কারা দর্শন বিভাগের সাদ্দামসহ দুজন ছাত্রকে মারধর করেছে। এ খবর শোনার সাথে সাথে তিনি সেখানে গিয়ে দেখতে পান কর্মচারীরা ওই ছাত্রকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে আহত ছাত্রদের কাছ থেকে জানতে পারেননি কী কারণে কারা তাদের মারধর করেছেন। তবে তিনি এ ঘটনা তদন্তের জন্য দর্শন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক শাহাবউদ্দিনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তাকে ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, এ ঘটনার পর বিকেল ৩ টার দিকে কোতয়ালি থানার ওসি তাকে ফোন করে আসাদ হলে তল্লাশির অনুমতি চান। ওসি তাকে এ কথা বলেন যে, আসাদ হলের ছেলেরা নাকি ডিএসবির একজন কনস্টেবলকে প্রচুর মারধর করেছেন। এ কথা শুনে তিনি আসাদ হল তল্লাশির অনুমতি দেন। এ সময় পুলিশের সাথে দুজন শিক্ষককে আসাদ হলে পাঠান। পরে শুনেছেন পুলিশ আসাদ হল থেকে কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গেছে।