চীনের বিকল্প হিসেবে ভারত থেকে আদা আমদানি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চীনের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে নভেল করোনাভাইরাস। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রভাবে চীন থেকে দেশের বাজারে আদা আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়তে শুরু করেছে আদার দাম। এ পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ সরবরাহ স্বাভাবিক রেখে আদার মূল্য বৃদ্ধির লাগাম টানতে ভারতের প্রতি ঝুঁকেছেন আমদানিকারকরা। দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিনই ভারতীয় আদা দেশে ঢুকছে। ভারত থেকে আমদানি বাড়ানোর কারণে আগামী দিনগুলোয় দেশের বাজারে আদার দাম খুব একটা বাড়বে না বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
জানুয়ারির শুরুর দিকে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে আদা আমদানি কমতে শুরু করে। এক পর্যায়ে তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। হিলি স্থলবন্দর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় থেকেই হিলির আমদানিকারকরা ভারতে আদার আমদানি উৎস খুঁজতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে ভারত থেকে পণ্যটির আমদানি বাড়ানো হয়। শুরুর দিকে প্রতিদিন হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে এক-দুই ট্রাক আদা আমদানি হয়েছিল। সময়ের ব্যবধানে ভারতীয় আদার আমদানি বেড়েছে। বর্তমানে এ স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন পাঁচ-সাত ট্র্রাক আদা আমদানি করা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর শুল্কস্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, চলতি মাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৮৩২ টন আদা আমদানি হয়েছে। এ আমদানি প্রক্রিয়ায় রাজস্ব আয় হয়েছে ৭০ লাখ টাকা।
ভারতের অরুণাচল প্রদেশ থেকে আদা নিয়ে হিলিতে এসেছেন ট্রাকচালক মহেন্দ্র সিং। তিনি জানান, বাংলাদেশে আমদানি করা আদার সিংহভাগ জোগান দিচ্ছেন অরুণাচলের ব্যবসায়ীরা। সেখান থেকে লোডের পর হিলি স্থলবন্দরে এসে আমদানি করা আদা আনলোড করতে পাঁচ-ছয়দিন সময় লাগছে। সময় তুলনামূলক কম লাগায় আদার পরিবহন ব্যয়ও কম।
এ বিষয়ে হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক হারুন-উর-রশীদ হারুন বলেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের জন্য বেশির ভাগ আদা চীন থেকে সমুদ্রপথে আমদানি করা হয়। তবে দেশটিতে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় পণ্যটির আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে সরবরাহ সংকটের কারণে দেশের বাজারে আদার দাম বাড়তে শুরু করেছে। আগামী দিনগুলোতে সম্ভাব্য সংকট এড়াতে বিকল্প উৎস হিসেবে ভারত থেকে আদা আমদানি বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, ভারতের অরুণাচল প্রদেশ থেকে আদা আমদানিতে পরিবহন খরচসহ টনপ্রতি সর্বনিম্ন ৬০০ ডলার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৮৫০ ডলার ব্যয় হচ্ছে। খালাসের পর আমদানি করা এসব আদা রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়াসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, নতুন বছরের শুরু থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আদা আমদানি শুরু হয়েছে। বাড়তি চাহিদার কারণে এখন প্রতিদিনই পাঁচ-সাত ট্রাক আদা আমদানি হচ্ছে। কাঁচামাল হওয়ায় আমদানি করা আদা দ্রুত খালাস করা হচ্ছে। এতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের আয় বেড়েছে।
এদিকে স্থানীয় খুচরা বিক্রেতা ফেরদৌস রহমান বলেন, আগে এখানকার বাজারেও চীন থেকে আমদানি করা আদা বিক্রি হতো। তবে এখন আমদানি বন্ধ থাকায় চীনা আদার সরবরাহ নেই। বিপরীতে ভারত থেকে আমদানি শুরু করায় বাজারে ভারতীয় আদায় সয়লাব হয়ে গেছে। সরবরাহ সংকটের সময় প্রতি কেজি আদার দাম ১৮০-২০০ টাকায় উঠেছিল। এখন ভারত থেকে আমদানি বাড়ানোয় পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ১০০ টাকার নিচে নেমে এসেছে। ভারত থেকে আমদানি অব্যাহত থাকলে আদার দাম বর্তমানের তুলনায় আরো কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।