বুয়েট, চবির পথেই কি হাঁটবে ঢাবি

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় যাচ্ছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন সিনিয়র অধ্যাপকের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে। এর আগে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় না যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং ডেকেছে। আগামী ২৪শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সেই মিটিং থেকেই চূড়ান্ত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় যাচ্ছে কি যাচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, ‘আমাদের একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং আছে আগামী ২৪শে ফেব্রুয়ারি। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় যাওয়া হবে কি হবে না।’ এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী কারা আমাদের ছাত্র হবে তা বেছে নেয়ার এখতিয়ার আমাদের আছে। এর যদি কোন ব্যত্যয়ও হয় সেটির জন্য আমাদের একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে আসতে হবে।
একাডেমিক কাউন্সিল যেভাবে আমাদের সুপারিশ করে সে সুপারিশ অনুযায়ী যেকোন একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সুতরাং সেন্ট্রাল এডমিশন টেস্ট (ক্যাট) এর যে বিষয়টি সামনে এসেছে সেটি একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশ ছাড়া সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। তিনি আরো বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলই সিদ্ধান্ত দেবে কোন প্রক্রিয়ায় আমাদের শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। আগের সুপারিশ অনুযায়ী আমরা চারটি অনুষদের অধীনে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে থাকি। এ অবস্থায় আমাদের একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হবার পরে অংশ নেব কি নেব না তার সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। তবে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে শিক্ষকদের সেন্স অনুযায়ী বুঝা যাচ্ছে আমাদের নিজস্ব ভর্তি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর সিদ্ধান্তের দিকে যাবে একাডেমিক কাউন্সিল। শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে আমি এ শিক্ষকদের সেন্স বুঝছি।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দীর্ঘদিন ধরেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু সেখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বায়ত্তশাসিত পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় যেতে অনাগ্রহ দেখালে উদ্যোগটি সামনে বেশি আগোয়নি। তবে এবার ইউজিসির উদ্যোগে সাড়া দিয়ে গত ২৩শে জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিদের সংগঠন ‘উপাচার্য পরিষদ’র সভায় সিদ্ধান্ত সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে। তবে সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা। পরদিন ইউজিসি চেয়ারম্যানের ডাকা ভিসিদের আরেক সভায় এরা উপস্থিত হলেও নিজেদের অবস্থান জানাননি। সেইদিন তারা জানিয়েছিলেন, স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিজেদের অবস্থান জানাবেন তারা। তারই ধারাবাহিকতায় বুয়েট ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় না যাওয়ার। এবার সেই পথে হাঁটার আভাস মিলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও। বিশ্ববিদ্যালয়টির দায়িত্বশীল কর্তারা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় বেশ কিছু ত্রুটি দেখছেন। তবে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে এখনই কেউ মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিন বলেন, ‘সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাচ্ছে না। কারণ, এতে অনেক ত্রুটির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি ও এটা কন্ট্রোল নিয়ে।
কারণ সরকার অনেক চেষ্টা করেও পাবলিক পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পারছে না। তাই এখানে প্রশ্নফাঁসের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাছাই প্রক্রিয়া ব্যহত হবে, নষ্ট হবে স্বকীয়তা। তাই না যাওয়ার সম্ভবনাই বেশি দেখছি।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমিরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘প্রথমত; পাবলিক পরীক্ষার ওপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আস্থা নেই। এ কারণে মনে করে পরীক্ষা নির্ভরযোগ্য হবে না। দ্বিতীয়ত; এটা হবে বড় আরেকটা পাবলিক পরীক্ষা। আর এটার জন্য এমন কোন সংস্থা নেই যারা এটা পরিচালনা করবে। কারণ, সবগুলো বোর্ডের শিক্ষার্থী মিলেই এখানে বড় ধরণের একটি পরীক্ষা হবে। আবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মনে করে তাদের অধিকার আছে ছাত্র বাছাই করার, যেভাবে তারা শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে। তাই শিক্ষকরা মনে করে এ বাছাই পরীক্ষায় নিজস্ব মানদণ্ড নষ্ট হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক যে শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হয় খরচ বাড়ে বর্তমানে চলমান ভর্তি পরীক্ষায়। কারণ, তাদের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। তাতে অনেক খরচ বহন করতে হয়। তবে এটার বিপরীতে এ উদ্যোগ যথার্থ নয় বলে আমার কাছে মনে হয়।’ এ শিক্ষাবিদ মনে করেন, ‘চলমান পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা কোথায়ও একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না হলে অন্য যেকোন জায়গায় পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেতে পারে। কিন্তু সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় তাদের হাতে আর কোন অপশন থাকবে না।’ নাম প্রকাশে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের এক অধ্যাপক বলেন, ‘সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনাগ্রহের অন্যতম কারণ হচ্ছে, প্রশ্নফাঁসের আশঙ্কা। কারণ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে, তারা নিজস্ব বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে থাকে। কিন্তু সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় গেলে নিজস্ব বাছাই প্রক্রিয়াও ব্যহত হবে।’