করোনার প্রভাবে স্থবির চামড়া শিল্প

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে চামড়া শিল্পে। চীনের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে চামড়া রপ্তানি। পণ্য রপ্তানি না হওয়ায় এরইমধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের স্তূপ ট্যানারিগুলোতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন করে ক্রেতাদের অর্ডার না নেয়া এবং আগের করা অর্ডারগুলো বাতিল করে দেয়ায় গুদামে চামড়া পঁচে নষ্ট হচ্ছে। চামড়া প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য চীন থেকে যেসব কেমিক্যাল আনতে হয় সেগুলো আনা যাচ্ছে না। ফলে কাঁচা চামড়া পঁচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ৬৫ শতাংশ পণ্যই চীনে রপ্তানি করা হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে ধস নেমেছে দেশের চামড়া শিল্পে।
এতে বড় ধরনের লোকাসানের মুখে পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। ফলে এই শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। শিল্পের পূর্ণ রূপ দিতে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর করা হয় চামড়া শিল্পনগরী। তবে ট্যানারি শিল্পের কার্যক্রম শুরু হলেও সেন্ট্রাল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি পরিপূর্ণভাবে চালু করতে না পারায় ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলো মুখ ফিরিয়ে নেয়। এরপর চীনের বাজারই হয়ে উঠে এ খাতের অন্যতম বাজার। কিন্তু চীনা বায়াররা না আসায় বাজারে টিকে থাকা নিয়েই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ট্যানারি মালিকরা। যদিও কয়েকদিন আগে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, করোনাভাইরাসের জন্য চামড়া শিল্পে যেন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সে চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, গত কয়েকদিনে করোনার প্রভাবে চামড়া শিল্পে যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরনীয়। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে চামড়া শিল্পে বড় ধরনের ধস নামবে।
জিন্দাবাদ ট্যানারির মালিক সেলিম হোসেন বলেন, করোনার বিষয়টি সামনে আসার পর থেকে চায়নার বায়াররা আমাদের থেকে কোন প্রকার অর্ডার নিচ্ছে না। এমনকি আগের অর্ডাগুলো বাতিল করেছে। ফলে সব ধরনের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। আমাদের কর্মচারীরা অবসর বসে আছেন। সংগঠনগুলো বিভিন্ন জনের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু কোন ফল হচ্ছে না। চীনা বায়াররা বলছেন আগামী মাসের দিকে তারা অর্ডার নিতে পারবেন। কিন্তু আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি। কারণ করোনাভাইরাস সেদেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। সুতরাং আমরা এ নিয়ে হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। ছোট ব্যবসায়ী হিসেবে গত কয়েকদিনে আমার প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বড় বড় ব্যবসায়ী যারা আছেন তাদেরতো কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হবে। তিনি বলেন, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য চীন থেকে যেসব কেমিক্যাল আনতে হয় সেগুলোও বন্ধ আছে। ফলে কাচা চামড়াগুলো পঁচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
চাঁদপুর ট্যানারি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবদুস সাত্তার বলেন, এমনিতেই এ শিল্পের অবস্থা ভালো না। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিতে বর্তমানে আমাদের একমাত্র মাধ্যম চীন। চীনের এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে শিল্প মালিকদের কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে। আমার কারখানায় ২০ জন শ্রমিক কাজ করতো এখন ছাটাই করতে করতে ৫জনের মতো আছে। কাজ না থাকলেতো শ্রমিক রেখে আরও লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তাই বাধ্য হয়ে তাদের ছাটাই করতে হয়েছে। এ পর্যন্ত আমার যা ক্ষতি হয়েছে তা অপূরনীয়। কারখানা বন্ধ করে দিয়ে দেউলিয়া হয়ে ঘুরছি। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পথে বসতে হবে। এমনিতেই আমাদের অব্যবস্থাপনার জন্য বাজার থেকে অন্যান্য দেশের বায়াররা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ট্যানারি মালিক এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, আমাদের ৬০ শতাংশ ক্রেতাই চীনের। তারা নববর্ষের জন্য যে অর্ডার দিয়েছিলেন তা নিয়ে যেতে পারেনি। তারা নেবার তারিখ পরিবর্তন করে যাচ্ছে। কিন্তু নিতে পারছে না। সেইসঙ্গে নতুন অর্ডারও দিচ্ছে না। ফলে আমাদের এখানকার অধিকাংশ কারখানা রীতিমতো বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রায় ১২০ কোটি টাকার পণ্য তৈরি অবস্থায় আছে। যা আমরা চীনে পাঠাতে পারছি না।