তুলার আমদানিনির্ভরতা বাড়তে পারে চীনের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে টালমাটাল পুরো চীন। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়ছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ। ভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেশটিতে বাড়তি চিকিৎসা উপকরণের (মেডিকেল ইকুইপমেন্ট) চাহিদা তৈরি হয়েছে। বেড়েছে তুলার চাহিদাও। এ কারণে বিশ্বের শীর্ষ তুলা আমদানিকারক দেশ চীনের পণ্যটির আমদানিনির্ভরতা আগের তুলনায় বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তবে স্বল্পমেয়াদে চীনের তুলা আমদানি বাণিজ্য আগের তুলনায় শ্লথ হয়ে পড়েছে। এর পেছনেও ভূমিকা রাখছে নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্ক। খবর গ্লোবাল টাইমস ও বিজনেস রেকর্ডার।
তুলা উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে পণ্যটির উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয় চীনে। তবে দেশটিতে তুলার চাহিদাও তুলনামূলক বেশি। এ কারণে দেশটি অভ্যন্তরীণ চাহিদার বেশির ভাগ আমদানি করা তুলা দিয়ে পূরণ করে। তুলা আমদানিকারকদের বৈশ্বিক তালিকায় চীন শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে বেশির ভাগ সময়ই চীনের তুলা আমদানিতে মন্দা ভাব বজায় ছিল। এ ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে দেশটিতে সব মিলিয়ে ৯৬ লাখ ৪০ হাজার বেল (প্রতি বেলে ৪৮০ পাউন্ড) তুলা আমদানি হয়েছিল। গত বছর দেশটিতে পণ্যটির আমদানি আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯৫ লাখ বেলে। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে চীনে তুলা আমদানি কমেছে ১ লাখ ৪০ হাজার বেল। বাড়তি চাহিদার জের ধরে চলতি বছর দেশটিতে তুলা আমদানির পরিমাণ ৯৬ লাখ বেল ছাড়িয়ে যেতে পারে।
চীন তুলা আমদানি বাড়ালে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন ভারতীয় রফতানিকারকরা। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে তুলা আমদানিতে ব্যয় হবে তুলনামূলক বেশি। ফলে চীনা আমদানিকারকরা দেশটি থেকে তুলা আমদানি করতে চাইবেন না। বিপরীতে ভৌগোলিক নৈকট্যের জের ধরে ভারত থেকে তুলা আমদানি করা চীনা আমদানিকারকদের জন্য লাভজনক। ব্যয় তুলনামূলক কম লাগে। এ কারণে স্বাভাবিক সময়ে চীন ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি তুলা আমদানি করে। চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ কিংবা নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ—এমন বিশেষ পরিস্থিতিতে চীন-ভারতের তুলা বাণিজ্য আরো জোরদার হবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
তবে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে আপাতত চীন অভিমুখে তুলার চালানগুলো সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। ভারতের অন্যতম শীর্ষ তুলা রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান কোটাক কমোডিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড জানিয়েছে, নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্কে চীন অভিমুখে তুলা নিয়ে কোনো জাহাজ পাঠানো হচ্ছে না। পরিস্থিতি তুলনামূলক স্বাভাবিক হয়ে এলে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমে এলে নতুন করে রফতানি চালান চীনে পাঠাবে প্রতিষ্ঠানটি।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই সপ্তাহে চীন অভিমুখে ২ লাখ ৫০ হাজার বেলের ভারতীয় তুলার চালান বিলম্ব হয়েছে কিংবা সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। তবে এ পরিস্থিতিকে সাময়িক বলছেন সিএনগ্রেইনডটকমের প্রধান সম্পাদক জিয়াও শানউইয়ি। তিনি বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে চীনের বিভিন্ন শহর কার্যত অবরুদ্ধ রয়েছে। বন্দরগুলোয় পণ্য লোড-আনলোড হচ্ছে না। এ কারণে আমদানিকারকরাও বিভিন্ন চুক্তি সাময়িক স্থগিত করছেন। তবে শিগগিরই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। পুরোদমে চালু হতে পারে ব্যবসায়িক কার্যক্রম।
তিনি আরো বলেন, পুরো বছরের চিত্র কল্পনা করলে এটা স্পষ্ট হবে যে চলতি বছর তুলার আমদানি নির্ভরতা বাড়বে চীনের। কেননা দেশটিতে মেডিকেল ইকুইপমেন্টের চাহিদা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। বিশেষত নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় মাস্কের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। বাইরে থেকে আমদানি করে চাহিদা পূরণের সম্ভাবনাও সীমিত। ফলে বিপুল পরিমাণ মাস্ক উৎপাদনে বাড়তি তুলা প্রয়োজন হবে চীনের। এটা দেশটিতে তুলার আমদানি চাহিদা বাড়ানোর পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে।