যশোরের বকুলতলার গাছ হঠাৎ কাটছিল পৌরসভা, বন্ধ করলেন প্যানেল মেয়র

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্যানেল মেয়রের বাধার কারণেই শেষ পর্যন্ত যশোর শহরের বকুলতলার গাছগুলো রক্ষা পেলো। যশোর পৌরসভার উদ্যোগে শুক্রবার সকালে কোনো টেন্ডার ছাড়াই গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছিলো। অথচ এ বিষয়ে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র মুস্তাফিজুর রহমান কিছুই জানতেন না। শুক্রবার সকালে এলাকাবাসীর কাছ থেকে গাছ কাটার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে গাছ কাটা বন্ধ করে দেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, যশোর শহরের বকুলতলা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের পাশে রাস্তার ডিভাইডারের উপর ১২ টি মেহগনি গাছ ও দুটি বকুল গাছ রয়েছে। গাছগুলোর বয়স প্রায় একযুগ পেরিয়েছে। এলাকার কয়েকজন স্ব উদ্যোগেই গাছগুলো রোপন করেছিলেন। গাছগুলো ঘিরে স্থানীয় মানুষের কর্মযজ্ঞ। দিনভর ছায়ার সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ তো আছেই। কিন্তু শুক্রবার সকালে স্থানীয়রা দেখেন ভিন্ন চিত্র। ৮/১০ জন শ্রমিক গাছগুলো কেটে ফেলছেন। প্রথমে স্থানীয় কয়েকজন গাছ কাটার বিষয়টি জানতে চাইলে শ্রমিকরা তাদের জানান পৌরসভার নির্দেশে কাটা হচ্ছে। এসময় গাছগুলো না কাটতে অনুরোধ জানান তারা। কিন্তু কাজ বন্ধ না করে গাছ কাটা অব্যাহত রাখেন শ্রমিকরা। তিনটি গাছের ডালপালা ছেটে গোড়ায় কুড়াল বসাতে থাকেন। এক পর্যায়ে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুঁটে আসেন ওই ওয়ার্ডের প্যের কাউন্সিলর মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তা। তিনি শ্রমিকদের গাছ কাটা বন্ধ করতে বাধ্য করেন। মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি সকালে জানতে পারি বকুলতলার মেহগিনি গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। এরপর ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের কাছ থেকে জানতে চাই গাছগুলো কার নির্দেশে কাটছেন। তারা বলেন, পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার কামাল হোসেন গাছ কাটতে বলেছেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি ইঞ্জিনিয়ার কামালকে খবর দিলে সে ঘটনাস্থলে এসে বলেন পৌরসভার সিদ্ধান্ত হয়েছে গাছগুলো কেটে এখানে দৃষ্টিনন্দন করা হবে। তিনি বলেন, আমি প্যানেল মেয়র অথচ আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। বাধ্য হয়ে আমি গাছ কাটা বন্ধ করে শ্রমিকদের চলে যেতে বলি। তারা আমার অনুরোধ শুনে গাছ কাটা বন্ধ করে চলে যান। প্যানেল মেয়র মুস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, বকুলতলা মোড়ের এ গাছগুলো স্থানীয় লোকেরা লাগিয়েছেন। গাছগুলোর ছায়ার নিচে বসে প্রতিদিন সাব রেজিস্ট্রি অফিসে আসা অসংখ্য মানুষ প্রশান্তি পান। অথচ কোনো কারণ ছাড়াই এসব গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানানো হচ্ছে। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত এলাকার কোনো মানুষই মানেন না। তারা এ বিষয়ে আমাকে সোচ্চার থাকার কথা বলেছেন। আমি এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি।
এ বিষয়ে পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার কামাল হোসেন বলেন, যশোর শহরকে দৃষ্টিনন্দন করতে পৌরসভার উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে কিছু আকর্ষণীয় স্থাপনা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে রাস্তার পাশের এ গাছগুলো কেটে সেখানে সৌন্দর্য বর্ধনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বলেন, যশোর একটি ঐতিহ্যবাহী শহর। অথচ শহরকে দৃষ্টি নন্দন করার ব্যাপারে এর আগে পরিকল্পিত কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এজন্য শহরের প্রবেশদ্বার এ অংশে আমি সৌন্দর্য বর্ধনের কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। সাথে শিশুদের বিনোদনের জন্য ছোট্ট একটি পার্ক করারও চিন্তা রয়েছে। এজন্যই গাছগুলো কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ বিষয়ে কারোর বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য তিনি আহবান জানান।