প্রসূতিকে ওটি টেবিলে রেখে নাস্তা করতে গেলেন চিকিৎসক : অতঃপর স্থানান্তরের পর মৃত্যু

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মোটা অংকের টাকার চুক্তিতে এক প্রসূতিকে কিনিকের অপারেশন থিয়েটারের টেবিলে নিয়ে নাস্তা করতে যান চিকিৎসক। সেখানে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হয়। অতঃপর প্রসূতি ও তার গর্ভের সন্তান মারা যায়। সরকার প্রসূতি সেবাকে বিশেষ প্যাকেজের আওতায় অগ্রাধিকার দিলেও চিকিৎসক কোন গুরুত্ব না দেয়ায় প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সামনে অবস্থিত একটি কিনিকে টুম্পা খাতুন (১৯) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা বুধবার বিকেল ৪টার দিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে কোন গাইনি বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। শাহিন রেজা নামে একজন আনাড়ী চিকিৎসক ৮ হাজার ৫শ’ টাকা চুক্তিতে বিকেল ৫টার দিকে টুম্পা খাতুনে সিজার করা রজন্য কিনকের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। সেখানে অপারেশনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। এরপর দ্রুত অপারেশন না করে ওই চিকিৎসক রোগী টেবিলের উপর রেখে নাস্তা করতে চলে যান। এ সময়ের মধ্যে ভয়ে প্রসুতির প্রেসার বেড়ে যায়। চিকিৎসক এসে অবস্থা বেগতিক দেখে রোগীকে আইসিইউতে নিতে হবে বলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। রোগীর স্বজন ইমরান ও ইসতিয়াক হোসেন জানিয়েছেন, খুলনায় নেয়ার জন্যে প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিনিকের চিকিৎসক ও দায় নেয়নি। ফলে সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে টুম্পা খাতুনকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন গাইনি বিভাগে টুম্পা খাতুনকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেন ডাঃ হালিমা তুজ জোহরা। তিনি রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে পরীক্ষা নিরীক্ষা দেন। এর ভেতর গর্ভের সন্তানসহ টুম্পা খাতুনের মৃত্যু হয়। ডাঃ হালিমা তুজ জোহরা রাত ৭টা ১৫ মিনিটে তার মৃত্যু ঘোষণা করেন। টুম্পা খাতুন যশোর সদর উপজেলার বড় ভেকুটিয়া গ্রামের বিপ্লব হোসেনের স্ত্রী। ঘটনাটি ওই কিনিকের চিকিৎসক গোপন রাখেন।
যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের গাইনি বিভাগ থেকেও টুম্পা খাতুনের মৃত্যুর বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে গোপন রাখা হয়?। এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ দিলীপ কুমার রায় ও আরএমও ডাঃ আরিফ আহমেদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা রোগীর মৃত্যুর ঘটনা জানেন না বলে দৈনিক লোকসমাজকে জানান। মা ও প্রসূতি সেবা (ইওসি) অগ্রাধিকার ভিত্তিক চিকিৎসা। এ জন্যে সরকার বিশেষ প্যাকেজে প্রসূতি সেবা দেয়। অথচ গাইনি বিভাগের চিকিৎসক রোগীর মৃত্যুর খবর তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে না পাঠিয়ে গোপন করেন। সূত্র জানিয়েছেন, এসব ঘটনার মূলে রয়েছে ডাঃ শাহিন রেজা। তিনি যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে টুম্পা খাতুনকে সিজার করার জন্যে কিনিকে ওটির টেবিলে নেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি হাসপাতালের চিকিৎসক নন। ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ দিলীপ কুমার রায়, গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক (জেএসসি) ডাঃ রবিউল ইসলাম ও আরএমও ডাঃ মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, শাহিন রেজা নামে কোন চিকিৎসক ২৫৪০ শয্যা হাসপাতালে আছে বলে তাদের জানা নেই।