করোনা ভাইরাস : স্ক্রিনিংয়ের আওতায় মৈত্রী এক্সপ্রেস

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বলেন, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের সব ব্যবস্থা সরকার নিয়ে রেখেছে। গতকাল ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। অন্যদিকে দেশে করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) প্রতিরোধে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে স্থল, বিমান ও নৌ-বন্দরের পাশাপাশি এবার রেলপথ যোগ করার কথাও জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলরত মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রীদেরও স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে আইইডিসিআর’র কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পরিচালক। এসময় প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ডা. এএসএম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, করোনা ভাইরাস(কভিড-১৯) সংক্রমণে মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত থাকায় বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও সতকর্তা বাড়ানো হচ্ছে। কয়েকদিন আগে থেকেই সব দেশের প্লেনের যাত্রীদের স্ক্রিনিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে সিঙ্গাপুরে ২ জন বাংলাদেশি আক্রান্ত হওয়ায় সিঙ্গাপুর থেকে আসা যাত্রীদের চীন থেকে আসা যাত্রীদের মতোই গুরুত্ব দিয়ে স্ক্রিনিং শুরু হয়েছে।
সিঙ্গাপুরে একজন বাংলাদেশিকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। অন্যজন সাধারণ ওয়ার্ডে রয়েছে। এদিকে করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারের বিষয়ে নানা গুঞ্জন থাকলেও একটি সম্পূর্ণ প্রতিষেধক আবিষ্কার হতে অন্তত ১৮ মাস অপেক্ষা করতে হবে। আর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের কারো শরীরেই করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ১১ জন ও চীনের উহান থেকে ৩০১ জনকে আশকোনার হজ ক্যাম্পে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। সিঙ্গাপুরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশির চিকিৎসা চলছে দেশটির একটি স্থানীয় হাসপাতালে। চীন ফেরতদের মধ্যে এ পর্যন্ত সন্দেহজনক মোট ৫৯ টি নমুনা ও গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এই মুহূর্তে একজন রোগী আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি থাকলেও তার শরীরে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ বা উপসর্গ নেই। এছাড়া বিমানবন্দরসহ দেশের সব প্রবেশ পথে গত ২৪ ঘন্টায় ১৪ হাজার ২৯৪ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২১শে জানুয়ারি থেকে এই সংখ্যা দাড়িয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৮৮১ জন। ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং করা যাত্রী ৪১ হাজার ৩৯৯ জন, দুটি সমুদ্র বন্দরে (চট্টগ্রাম ও খুলনার মোংলা) স্ক্রিনিং করা হয়েছে ১ হাজার ৪০৯ জন। এছাড়া অন্যান্য স্থলবন্দওে মোট স্ক্রিনিং করা হয়েছে ৬২ হাজার ৭৩ জনকে। এদিকে নতুন করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজারেরও বেশি। নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনা ভাইরাসে বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন, এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক গ্যাব্রিয়েল লিং। তিনি মনে করেন, করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এটি মহামারী আকারে বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। লন্ডনে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের উহান থেকে উৎপত্তি নোভেল করোনা ভাইরাসের নতুন নাম দিয়েছে ‘কেভিড-১৯’। এই নামকরণ করে এই ভাইরাসকে বিশ্বের এক নম্বর শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিরোধে সকলকে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি। অন্যদিকে গতকাল ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের সব ব্যবস্থা সরকার নিয়ে রেখেছে। করোনা ভাইরাসে চীনে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন একে বিশ্বের জন্য হুমকি বলে ঘোষণা করেছে, তখন বাংলাদেশের নাগরিকদের আশ্বস্ত করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ও চিকিৎসার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা গ্রহণ করেছি। এদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী এখনও পাওয়া যায়নি। খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাচ্ছি, এই বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই এবং আমাদের চিকিৎসার সকল ব্যবস্থা নেয়া আছে। জাহিদ মালেক বলেন, সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি যে ২ জন আক্রান্ত হয়েছে তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং আমরা দোয়া করি যাতে তারা দ্রুত সুস্থ হন। আমাদের অনেক লোক সিঙ্গাপুরে বসবাস করে, তারা যাতে সাবধানে থাকে, তারা যেন আরও সতর্ক হয়। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ইতিমধ্যে বিমানবন্দরগুলোতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নির্দেশ দেয়া রয়েছে, চীন থেকে আসলে যেরকম নজরদারি দেয়া হয় থাকে, সিঙ্গাপুর থেকে আসলেও যাতে সে রকম নজরদারি দেয়া হয়। দেশে প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় তিনটি হাসপাতালে আইসোলেটেড ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে, চিকিৎসক, নার্সদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকার উত্তরার কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ২০ শয্যার একটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, পুরো কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। অন্যসব হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হবে। কিন্তু ডেডিকেট করা হয়েছে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল।